২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি স্কুলে নেই টিউশন ফি নীতিমালা, ভোগান্তিতে অভিভাবকেরা

- প্রতীকী ছবি

মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে সরকার প্রায় প্রতি বছরই নীতিমালা প্রকাশ করছে। কিন্তু তারপরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ও পুরনো শিক্ষার্থী ভর্তির সময় নানাভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। অপর দিকে বেসরকারি পর্যায়ের প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন বা টিউশন ফি বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আদৌ কোনো নীতিমালাই নেই। ফলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের বেতন নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারণ করে। যখন খুশি শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ায়। ফলে বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ পর্যন্ত করতে বাধ্য হন।

বর্তমানে রাজধানীর কিন্ডারগার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পাশাপাশি অনেক বাংলা মাধ্যম স্কুলেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি, সেশন চার্জ আর উচ্চ বেতন অভিভাবকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব অভিভাবকের লক্ষ্য থাকে সন্তানকে তুলনামূলক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো। সীমিত আয়ের লোকজনও তাদের সন্তানকে এসব স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু তাদের বক্তব্য- কম খরচে পড়ানোর মতো রাজধানীতে ভালো স্কুল নেই বললেই চলে। ভালো বা মন্দ রাজধানীর সব বেসরকারি স্কুলেই খরচ অনেক বেশি। এজন্য সংসারের অনেক খরচ কমিয়ে সন্তানের পড়ার খরচ মিটাতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।

রাজধানীর ভূঁইয়া পাড়ার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তার ছেলে বনশ্রীর একটি বেসরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তার মাসিক বেতন ১৪ শ’ টাকা। আরেক ছেলে পড়ে জুনিয়র ওয়ানে। তার বেতন ১৩ শ’ টাকা। এ অভিভাবক জানান, তাদের আয় সীমিত। প্রতি মাসে দুই সন্তানের বেতন ও শিক্ষা বাবদ অন্যান্য খরচ বহন করা তাদের জন্য অনেকটা কষ্টের। কিন্তু তারপরও বাধ্য হয়ে তারা এ স্কুলে সন্তানদের পড়ান। কারণ তাদের আশপাশে কোনো সরকারি প্রাইমারি স্কুল নেই। আর এর চেয়ে কম বেতনে পড়ানোর মতো মানসম্পন্ন অন্য কোনো বেসরকারি স্কুলও নেই।

বনশ্রীতে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, গত বছর তার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় বেতন ছিল প্রথমে এক হাজার টাকা। এরপর ওই শ্রেণীতে থাকাবস্থাতেই বেতন দেড় শ’ টাকা বাড়ানো হয়। ষষ্ঠ শ্রেণীতেও তার বেতন সাড়ে এগারো শ’ টাকা। তিনি জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন আরো বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু অভিভাবকদের আন্দোলনের কারণে তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। বনশ্রীতে অবস্থিত ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ের বেতন মাসে দেড় হাজার টাকা।

স্কুল ও কলেজের অনেক শিক্ষক জানান, রাজধানী ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে অনেক কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ বেতন নেয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন সরকার দিলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বেতনের একটি টাকাও পায় না সরকার।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, বেরসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন নিয়ে যে নৈরাজ্য চলছে তা দূর করার জন্য অনেক দিন আগে থেকে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। তিন বছর আগে আমরা মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণীত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement