১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কদর বেড়েছে মৌসুমি কসাইয়ের

কদর বেড়েছে মৌসুমি কসাইয়ের - সংগৃহীত

রাজধানীর পথে পথে এখন মৌসুমি কসাইয়ের জটলা। গরুর হাটের মতোই যেন বসেছে কসাইয়ের হাট। অলি গলি পেরিয়ে বড় বড় বিপণী বিতান ও বাজার পর্যন্ত পৌছেছে এসব মৌসুমি কসাইদের আনাগোনা।

যারা কোরবানি করছেন তাদের কাছেও কদর রয়েছে এসব কসাইয়ের। এতোদিন যারা রিক্সা-ভ্যান চালনা, দিনমজুরি বা ছোট কোন কাজ করতেন তারা কোরবানির ঈদ আসলেই বনে যান পুরো দস্তুর কসাই। ঢাকার আশপাশ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় বাড়তি আয়ের জন্য ছুটে আসেন এসব মৌসুমি কসাই।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মৌসুমি এসব কসাইরা কোরবানির গরু জবাই সংক্রান্ত দাম নির্ধারণ করেন গরুটি ঠিক কতো টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে।

তাদের সেই হিসেবে দিতে হয় হাজার প্রতি ১ থেকে ১ শতো ৫০ টাকা পর্যন্ত। আবার অনেকে গরু দেখেও মূল্য নির্ধারণ করেন।

জানা যায়, যারা কোরবানি দেন তাদের কাছে প্রথম দাম হাকেন হাজার প্রতি ২০০ টাকা করে। পরে দাম দর করে দেড়শ টাকার মধ্যে কোরবানির গরু কাটা সংক্রান্ত চুক্তি করছেন। যন্ত্রপাতি অর্থাৎ চাপাতি-ছুরি অনেক সময় তাদের কাছেই থাকে। অনেক সময় মালিককে সরবরাহ করতে হয়। আর যারা প্রকৃত কসাই তাদের সংখ্যা একেবারেই কম। কাঠাল বাগান মাংসের দোকানে গিয়ে কথা হয় মোজাফফরের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে যারা আছে তারা দুই তিন মাস আগে থেকে চুক্তি করে রেখেছেন।

ঝিনাইদহ থেকে বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে ৭ জনের একটি দল এসেছে নিউ মার্কেট বাজার এলাকায়। তাদের মধ্যে শরিফুল, সাদ্দাম ও তরিকুল কসাইয়ের কাজে একেবারে নতুন। বিল্লাহ জানান, সে কসাই না হলেও গত আট বছর ধরে কাজ করতে করতে এখন সে পুরে দস্তুর কসাই বনে গেছেন। দলের সবাই কাজ পারেন না। যারা নতুন তাদের হেলপার হিসেবে রাখা হবে। কাজ শেষে তারা প্রতিজন ১০ টাকার মতো আয় করতে পারবেন বলে জানান।

আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় মধু নামে আরেকজন মৌসুমী কসাইয়ের সাথে, তিনি ২২ জনের একটি দল নিয়ে যশোর থেকে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কোরবানির গরু কাটার চুক্তি করেছে তার দলে থাকা অন্যান্যরা।

মধু জানান, তার দল ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, নিউ মার্কেট, রামপুরা, আজিমপুর, বিজয়নগর এলাকায় ১৫টি গরু কাঁটার চুক্তি করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের ১২ জন প্রায় ১০ বছর যাবত কোরবানির সময় গরু কাটাকাটি করে তাই এখন অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। বাকিরা তো আমাদের কাজে সময় দিবে। তিনি বলেন, এলাকায় ক্ষেতে খামারে কাজ করি। কোরবানিতে একদিন এ যে টাকা পায় তাতে ১৫দিনের মতো আয় হয়। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আমরা ঢাকায় আসি। তবে ঈদের সময় খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু কষ্ট হয় হোটেল বন্ধ থাকায়। আবার কোন কোন মালিক ভাল হলে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে রাখেন। ঈদের দিন বা পরদিন সন্ধ্যায় চলে যেতে পারবো আমারা। তাতে একেকজন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করি।

জসিম নামের এক মৌসুমি কসাই এসেছেন কুমিল্লা থেকে। চার জনের একটি দল নিয়ে গত বুধবার ঢাকায় আসেন। পাঁচটি কোরবানির গরু কাটার কাজও ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন হাতে। আর কোন কাজ নেবেন না বলে জানান জসিম। ঈদের দিন তার দলের আয় হবে মোট ৪৫ হাজার টাকা। এতে সন্তুষ্টও তিনি। পেশাদার না অপেশাদার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর যাবত ঢাকায় এসে কোরবানির গরু কাটার কাজ করতে করতে এখন আর তাকে অপেশাদার বলা যায় না।

ধানমন্ডির বাসিন্দা বাচ্চু জানান, তিনি ঢাকায় কোরবানি করছেন। গরু কাটার জন্য তিনি একজন মৌসুমি কসাই ঠিক করেছেন ৫হাজার টাকায়। অন্য কোন উপায় নেই। অপরাগ হয়েই তাকে নিতে হয়েছে। তবে তাদের কাজ একেবারেই খারাপ না। ভালই কাটতে পারে তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement