২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুপেয় পানির সঙ্কটে রাজধানীবাসী

সুপেয় পানির সঙ্কটে রাজধানীবাসী - সংগৃহীত

‘ওয়াসার পানি ফুটিয়ে ছাড়া খাওয়ার কথা ভাবাই যায় না, ফুটানোর পরও অনেক সময় দুর্গন্ধ থেকে যায়। এজন্য ফুটানোর পর অনেক সময় রেখে ঠাণ্ডা করে তার পর পানি শোধনযন্ত্রে দিয়ে গন্ধ দূর করতে হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীর বাসাবো কদমতলা এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসাইন। তিনি বলেন, পানির সঙ্কট আগের থেকে কমেছে। কিন্তু দুর্গন্ধ যায়নি। বাড়ির ট্যাংকি পরিষ্কার করার পরও দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। পানির কারণে বাসায় ছেলেমেয়েদের রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এ ব্যাপারে ওয়াসার মনোযোগ দেয়া উচিত। শুধু বাসাবো এলাকায় নয়, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। 

পশ্চিম শেওড়া পাড়ার বাসিন্দারা ট্যাপের কলের মুখে কাপড় বেঁধে পানি পরিষ্কার করার চেষ্টা করে থাকেন। এ এলাকার পানিতে দুর্গন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ময়লাও পাওয়া যায়। এ কারণে দুই দিন পরপরই ট্যাপের মুখে বাঁধা কাপড় খুলে পরিষ্কার করতে হয়। পানি খারাপ হওয়ার কারণে এলাকার বাসিন্দাদের নানা রকম পেটের পীড়া লেগেই থাকে। চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসা পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাসায় যে পানি সরবরাহ করে তা ময়লা ও দুর্গন্ধ, অনেক সময় পানিতে পোকা পাওয়া যায়। পানির ময়লা ঠেকাতে কলের মাথায় কাপড় বেঁধে রাখতে হয়। না হলে পোকামাকড় মুখে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর কয়েক দিন পর কলের কাপড় সরিয়ে ফেললে ময়লার আস্তরণ ও পোকা দেখা যায়। এ পানির কারণে চর্মজাতীয় বিভিন্ন রোগও দেখা যাচ্ছে বলে তিনি জানান। শুধু এ বাসায় নয়, আশপাশের সব বাসার পানির অবস্থাও একই রকম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজীপাড়া, পীরের বাগ এলাকার পানিতেও ময়লা ও দুর্গন্ধ। বাড়ি মালিকেরা পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করার পরও দুর্গন্ধ কিছুতেই যাচ্ছে না। দীর্ঘ দিন থেকেই এ অবস্থা চলে আসছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে পানির বিল বাবদ হাজার হাজার টাকা নিলেও পানি ভালো করার ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। 

মীর হাজীরবাগের আবু হাজী স্কুল রোডের বাসিন্দারা গত রমজানে পানির মারাত্মক সঙ্কটে পড়েন। বর্তমানে পানির সঙ্কট কমেছে। তবে পানিতে দুর্গন্ধ ঠিকই রয়ে গেছে। এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, রোজার সময় পানি সঙ্কটে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। এখন পানির সরবরাহ বাড়লেও দুর্গন্ধ রয়ে গেছে। পানি ফুটিয়ে ছাড়া খাওয়া যায় না। 

পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকাতেই বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট রয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকে এ সঙ্কট থাকলেও সমাধানে ওয়াসার কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। জুরাইন, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, দনিয়াসহ আশপাশের এলাকায় সুপেয় পানির সঙ্কট রয়েছে। সম্প্রতি জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ওয়াসা এমডিকে ওয়াসার সরবরাহ করা নোংরা পানি দিয়ে কাওরানবাজারের অফিসে গিয়ে শরবত বানিয়ে পান করাতে যান। পরে ওয়াসা এমডি এলাকার পানির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এর পরও ওই এলাকার পানি সরবরাহ উন্নয়ন হয়নি। আগের মতোই নোংরা কালো পানি সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। এ জন্য রমজান মাসে বিশুদ্ধ পানির দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিলও বের করেছিল। কিন্তু টনক নড়েনি ওয়াসার। 

পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দীর্ঘ দিনের। একটু ভালো পানির আশায় এলাকাবাসীকে কুতুবখালি খালসংলগ্ন ওয়াসার পানির পাম্পে সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত হাঁড়ি-কলস নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একবার পানি নিতে অনেককে তিন-চার ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়। 

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে। সারা ঢাকায় ৯০০ পাম্পের পাশাপাশি বিভিন্ন নদী থেকে পানি এনে শোধন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে চুরি করে পানির সংযোগ নেয়া হয়। এ সময় ওয়াসার পানির লাইন ও সুয়্যারেজ লাইন মিলে গিয়ে পানিতে দুর্গন্ধ মিশে যায়। চোরদের ধরতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হচ্ছে জানিয়ে তারা এ ব্যাপারে জনগণের সহযোগিতাও কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement