২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী

পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ - সংগৃহীত

মাহে রমজানুল মোবারকের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত বা রমজানের ২৭তম রাত সাধারণভাবে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হিসেবে পরিচিত। আভিধানিকভাবে লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানের রাত। অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত এ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। কুরআন মাজিদে একটি সূরা নাজিল হয়েছে এ প্রসঙ্গে।

এতেই ঘোষণা করা হয়েছে, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি। তাফসিরের কিতাবগুলোতে উল্লেখ রয়েছে, একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভেবে অস্থির হচ্ছিলেন যে, আগের নবীর উম্মতেরা দীর্ঘ হায়াত পেত। ফলে তারা অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ পেত; কিন্তু শেষ নবীর উম্মতের হায়াত খুবই সীমিত। অতএব তাদের পক্ষে উচ্চ মর্যাদা লাভের সুযোগ কম। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সূরা নিয়ে উপস্থিত হন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। ফলে শান্ত হন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবিরা।

আল্লাহ তায়ালা এ রাতেই কুরআন মাজিদ নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু রাত কোনটি তা বলে দেননি। হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাতটি কাটাতে পারলে এ রাতের প্রকৃত সুফল পাওয়া যায়।

কুরআন মাজিদের বর্ণনা অনুযায়ী, এই এক রাতে ইবাদতের বিনিময়ে হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াবের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। হয়তো আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এ জন্য এটাকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয়।

যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি, তা যদি সহজে পাওয়া যেত, তাহলে মানুষ হয়তো এটাকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। কেউ কেউ রমজানের যেকোনো অংশে এ রাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন; কিন্তু বেশির ভাগ মনীষীর মতে রমজানের শেষ দশকেই তা লুকায়িত রয়েছে।

আবার কারো কারো মতে, এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর একুশ, কোনো বছর তেইশ, কোনো বছর পঁচিশ, কোনো বছর সাতাইশ, আবার কোনো বছর ঊনত্রিশ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে অনেক মনীষী রমজানের সাতাইশ তারিখের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিহ্নত করেছেন। লাইলাতুল কদরের কিছু আলামত হাদিসে বর্ণিত আছে।

সেগুলো হলো, এ রাতটি রমজান মাসে। আর এ রাতের ফজিলত কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। রাতটি রমজানের শেষ দশকে। এটি রমজানের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রমজানের ২৭তম রজনী লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

হজরত উবাই ইবনে কাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যত দূর জানি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হলো রমজানের ২৭তম রাত। (মুসলিম শরিফ)

হজরত আবদুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭ রজনীতে অনুসন্ধান করে। (মুসনাদে আহমাদ)।

রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না। মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপোকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে। কোনো ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন। ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি শবে কদরের সন্ধান পাই তবে সে রাতে কী বলব? নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তখন বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নি। অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।

লাইলাতুল কদরে সালাত, তিলাওয়াত ও জিকির-তাসবিহের সাথে যেমন অতীত জীবনের পাপরাশি মোচনের জন্য মহান প্রভুর কাছে আকুল আবেদন জানাতে হবে, তেমনি তার তাওফিক প্রার্থনা করতে হবে কুরআনকে জীবনের দিশারি হিসেবে মেনে চলার।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল