২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আজ বিশ্ব মা দিবস

মায়ের জন্য ভালোবাসা প্রতিক্ষণ

- ছবি : সংগৃহীত

‘মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে, মাকে মনে পড়ে আমার, মাকে মনে পড়ে।’ এই সেই মা পৃথিবীতে যাকে নিয়ে রচিত হয়েছে এ রকম অসংখ্য হৃদয়স্পর্শী গান, গল্প, ছড়া, কবিতা। সমাজের খুব গভীরে লুকিয়ে থাকা সীমাহীন অপ্রাপ্তি ও অমর্যাদার দেয়াল ভেদ করে যে মা সন্তানকে সফল এবং প্রতিষ্ঠিত করার ব্রত নিয়ে আমরণ ত্যাগ স্বীকার করেন সত্যিই এমন মায়ের ঋণ শোধ হওয়ার নয়। তাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য আলাদা দিনেরও প্রয়োজন পড়ে না। মায়ের জন্য ভালোবাসা প্রতিক্ষণ।

ইসলামে মায়ের মর্যাদা অসীম। মাকে মহান আল্লাহ সমাসীন করেছেন অভাবনীয় মর্যাদার আসনে। বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। বুখারি শরীফের হাদিসে আছে রাসূল সা: কে এক সাহাবা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? নবীজি বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সাহাবি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসূল সা: আবারো বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার?’ রাসূল সা: বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার?’ তারপর বললেন, ‘তোমার বাবার।’

মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি অথবা যা হতে আশা করি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী।’ নেপোলিয়নের সেই সার্বজনীন কথাটি খুব প্রসিদ্ধ- আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।

কিন্তু এরপরও বিশ্বের সব মানুষ যাতে এক সাথে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে সে জন্য আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করা হয়। আজ সেই দিন। আন্তর্জাতিক মা দিবস। দিবসটিতে আলাদা করে অনেকেই মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন। অনেকে আবার একটি দিনকে ঘিরে মা দিবস পালনের বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালোবাসা কোনো একটি দিনের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারে না। আর মাকে শ্রদ্ধা জানাতে কোনো আনুষ্ঠানিকতারও দরকার হয় না।

আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি।

১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।

অবশেষে তার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ক্রমেই দিবসটি ঘিরে বাণিজ্য শুরু হয়। এতে দিবসটির মূল চেতনা লঙ্ঘিত হয়। মর্মাহত হন আনা। দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি।

তারেক রহমানের বাণী : আন্তর্জাতিক মা দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে এক ভয়াল কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং অগ্রসর সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক জীবন কেটেছে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও নিরলস পরিশ্রমে।

তার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। বিএনপির শাসনামলে স্কুল থেকে ছাত্রীরা যাতে ঝরে না পড়ে তার জন্য দেশনেত্রী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আজকের এই দিনে নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছাচারীর কারাগারে বন্দী, তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দায়িত্বশীল ও শিক্ষায় আলোকিত মায়েদের সুসন্তানরাই দীর্ঘ দিনের অচলায়তন ভেঙে সামাজিক অগ্রগতি তরান্বিত করবে এবং জাতীয় উন্নয়নকে করবে বেগবান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজ প্রতিহিংসার বিচারে পরিত্যক্ত একটি নির্জন কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে মানুষ হিসেবে তার সব মানবাধিকার। অথচ আর্থিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে এ দেশে দেশনেত্রীর অবদান কিংবদন্তিতুল্য।

এই মহিমান্বিত দিবসে আমি তার সুস্বাস্থ্য কামনা ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। মা দিবসে আমি দেশের সব নাগরিককে আহ্বান জানাবো তারা যেন মায়েদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও কর্তব্য পালন করেন। কারণ কেবল সন্তানদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার একমাত্র শর্ত হচ্ছে মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকা।


আরো সংবাদ



premium cement