১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভালোবাসা দিবসের প্রচার বাণিজ্যিক কারণে?

ভালোবাসা দিবস
ভালোবাসা দিবসে গোলাপের ব্যাপক চাহিদা থাকে - ছবি : নয়া দিগন্ত

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বব্যাপী দিনটিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন হচ্ছে।

তৃতীয় শতাব্দীর এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ইতালিয়ান পাদ্রী ও চিকিৎসকের স্মরণে দিনটি অনেক খ্রিস্টান দেশে সেন্ট ভালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালিত হতো, কালক্রমে সেটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হতে শুরু করে।

একে কেন্দ্র করে নানা রকম শুভেচ্ছাসূচক কার্ড, ফুল, চকোলেট বা উপহারসামগ্রী বিনিময় করেন বিশেষত তরুণ তরুণীরা।

বাংলাদেশে উদযাপন কবে থেকে?
প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন হয় খ্রিস্টিয় ৪৯৬ সালে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৮০র দশক থেকে এ দিনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে এটি খুব পুরনো ব্যপার নয়, কারণ এই সময়েই শুরু হয় বসন্ত ঋতু।

বসন্ত ফুল ফোটার সময়, সেই সাথে বসন্ত প্রেমের সময় বলেও প্রচলিত আছে।

গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন মনে করেন, বাংলাদেশে ভালোবাসার প্রকাশ নিয়ে এখনো অনেক সামাজিক ট্যাবু আছে।

বাংলাদেশে ভালোবাসার প্রকাশ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার না, যে কারণে মানুষ খুব স্বচ্ছন্দে প্রকাশ্যে ভালোবাসার কথা বলে না।

তিনি বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস নিয়ে নানা রকম প্রচার আছে, কিন্তু এখনো এখানে দিবসটি সেভাবে পালন হয় না।’

‘কারণ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ছোট বাচ্চারাও যেভাবে কার্ড বানায়, ফুল বা চকলেট দিয়ে উদযাপন করে, সেটা বাংলাদেশে হয় না ‘

‘ফলে দিবসটিকে যতটা বানিয়ে তোলা হচ্ছে, ততটা উদযাপন হয় না। বরং এখন একে কেন্দ্র করে নানা রকম বাণিজ্যও গড়ে উঠেছে,’ তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে?
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাই বেশি উৎসাহী এই দিনটি পালনের ব্যপারে। তবে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক।

মফস্বল বা গ্রামে এই দিনটি তেমন অর্থ বহন করে না।

অধ্যাপক নাসরিন বলছেন, ‘যেহেতু এখানে ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে এখন বাণিজ্য জড়িয়ে গেছে, সে কারণে এর বহুল প্রচার হয়।’

‘আর সেজন্যই দিবসটি নিয় ব্যাপক প্রচারণা হয়, যাতে মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ বুঝি খুব পালন করছে দিনটি। আসলে ততটা পালন হতে আমি দেখি না।’

বরং তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে বসন্ত উৎসব পালনের পরিসর বেড়েছে।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র রাজনীতি বিতর্ক
অধ্যাপক নাসরিন বলছেন, ‘ভালোবাসা দিবসের একটা অর্থনীতি আছে ঠিকই। তবে এর একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে।’

ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালনের আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হতো।

১৯৮৩ সালে সেই সময়কার সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাবার সময় পুলিশ গুলি চালায়।

এতে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব ও দীপালি সাহাসহ অন্তত ১০জন নিহত হন। অনেকে নিখোঁজ হন।

‘এই রাজনৈতিক ঘটনা ঢেকে ফেলেছে বি-রাজনৈতিক একটি দিবস। একে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনেরা অব্যাহত রেখেছেন নিজেদের স্বার্থে।’

অধ্যাপক নাসরিন মনে করেন, ‘তবে ছাত্র সংসদগুলো চালু থাকলে সেটি হতে পারতো না, কারণ ছাত্র সংসদ দিবস পালনের মধ্য দিয়েও রাজনৈতিক ঘটনা বিস্মৃত হতে দিত না।’

তবে এত বিতর্কের পরেও আজ অনেকেই ভালোবাসা দিবস পালন করবেন, প্রকাশ করবেন ভালো লাগার আর ভালোবাসার অনুভূতি।

যাদের জন্য হয়তো দিনটি অনুভূতি প্রকাশের একটি ‘বাহানা মাত্র’।


আরো সংবাদ



premium cement