২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কটেনের সাথে ১৯ কোটি ডলার ক্রিপ্টোকারেন্সি কবরে!

- সংগৃহীত

ক্রিপ্টোকারেন্সিকে প্রায়ই বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি কানাডায় এই ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অপ্রত্যাশিত ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে যায়।

দেশটির সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কোয়াড্রিগারের পাসওয়ার্ডের তথ্য না থাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রায় ১৯ কোটি ডলারের তহবিলে প্রবেশ করতে পারছেন না। যার মধ্যে পাঁচ কোটি ডলারই নগদ অর্থ।

পাসওয়ার্ডটি কোয়াড্রিগারের প্রতিষ্ঠাতা জেরাল্ড কটেনের সাথে কবরে চলে গেছে বলে মনে হয়। যিনি গত ডিসেম্বরে ভারতে থাকাকালীন হঠাৎ মারা যান।

প্রতিষ্ঠানটির মতে, ৩০ বছর বয়সী কটেন সম্পূর্ণ একার দায়িত্বে সব তহবিল ও মুদ্রা পরিচালনার কাজ করতেন।

গত ৩১ জানুয়ারি নোভা স্কটিয়া সুপ্রিম কোর্টের সামনে কোয়াড্রিগার জানায় যে, তারা ওই তহবিল শনাক্ত করতে পারছে না।

কটেনের স্ত্রী, জেনিফার রবার্টসনের স্বাক্ষরিত একটি নথির মতে, তার প্রয়াত স্বামী যে ল্যাপটপে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কাজ করতেন সেটা এনক্রিপ্ট করা এবং তিনি সেই ল্যাপটপে প্রবেশের কোন পাসওয়ার্ড বা তথ্য পুনরুদ্ধারের কোন উপায় জানেন না।

মিসেস রবার্টসন বলেন, ‘আমি দিনের পর দিন বারবার সেই পাসওয়ার্ড খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। তারপরও কোথাও সেটা লিখিত অবস্থায় পাইনি।’

বিপর্যয়ে গ্রাহকরা
কোয়াড্রিগার প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার ইউজার রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পেশাদার বিনিয়োগকারী।

সেইসঙ্গে আছে এমন মানুষ যারা একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে বিকল্প লাভজনক উপায় খুঁজছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম।

ডিজিটাল ফাইন্যান্স ইন্সটিটিউটের আইনজীবী ও প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিন ডুহেইম বলেন, ’অনেকে ইমেইল করে জানিয়েছে যে তারা তাদের অবসর গ্রহণের পুরো টাকাটাই হারিয়েছে।’

’কোয়াড্রিগা দীর্ঘ সময় ধরে কাজের মাধ্যমে কানাডার বৃহত্তম বিনিময় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এতে মানুষ ধারণা করেছিল যে তাদের টাকা নিরাপদে আছে।’

কটেনের মৃত্যু হয়েছিল কিভাবে:

কটেনের মৃত্যুর খবরটি কোম্পানির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হয়েছিল।

সেখানে বলা হয়েছিল যে প্রতিষ্ঠাতা কটেন, ভারতের জয়পুরের একটি দাতব্য ভ্রমণের সময় মারা যান। সেখানে দরিদ্র শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে একটি অনাথ আশ্রম চালু করেছিলেন তিনি।

আর সেই ভ্রমণেই তিনি ক্রোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্রোন হল অন্ত্রের গুরুতর প্রদাহজনিত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা।

মৃত্যুর সময় কটেনের বয়স হয়েছিল ৩০ বছর।

কটেনের উইল
সংবাদমাধ্যম গ্লোব অ্যান্ড মেইল জানায়, মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে গত ২৭ নভেম্বর মিটার স্কটেন একটি উইলে স্বাক্ষর করেছিলেন।

সেখানে তিনি তাঁর স্ত্রীকে তার সম্পত্তির নির্বাহক বানিয়েছেন।

সংবাদপত্রটির মতে, ওই উইলে তাদের দুটি কুকুরের যত্ন নেয়ার জন্য প্রায় ৭৬ হাজার ডলার সংরক্ষণ করার নির্দেশাবলী থাকলেও মিস্টার কটেনের মৃত্যুর পর তার কোয়াড্রিগার তহবিল পুনরুদ্ধারের কোন বিবরণ নেই।

পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা
কোয়াড্রিগা নামের এই প্ল্যাটফর্মটি কটেনের মৃত্যুর পরেও ব্যবহারকারীর আমানত গ্রহণ করেছে বলেও অভিযোগ করছেন ইউজাররা। আদালতের নথিতে মিসেস রবার্টসন এমন কয়েকটা বিষয় নিশ্চিত করেন।

কোয়াড্রিগা ঘোষণা করেছে যে, তাদের তথ্য পুনরুদ্ধার করা যাবে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একজন তদন্তকারীকে নিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু চলমান প্রচেষ্টায়, কটেনের কম্পিউটার এবং ফোন থেকে সামান্য কিছু তথ্য পাওয়া গেছে এবং কেবল কয়েকটি কয়েন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

টাকা তুলতে দেরি হওয়া নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের মধ্যেই এই এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটি গত সপ্তাহে তাদের অর্থের সুরক্ষার জন্য আবেদন করে।

গত বৃহস্পতিবার অনলাইনে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে কোয়াড্রিগা জানায় যে, তারা তাদের তারল্য সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিপ্টোকারেন্সির তহবিল নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আর্নস্ট এবং ইয়ং নামের একটি প্রতিষ্ঠান পুরো বিষয়টিকে স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এবং এ বিষয়ে বর্তমানে নোভা স্কটিয়ার আদালতে প্রাথমিক শুনানি চলছে।

ভরাডুবির মূল্য
পাঁচ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত, কোয়াড্রিগা গত বছর বড় ধরণের আর্থিক সমস্যার মুখে পড়ে।

কানাডিয়ান টিভি স্টেশন সিএনবিসি জানায় যে, তাদের তারল্য সমস্যা চলছিল এবং এই বছরের শুরুর দিকে সিআইবিসি ব্যাংক তাদের প্রায় দুই কোটি ডলারের তহবিল জব্দ করে দেয়।

এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মটির এই সংকট পুরো ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলেছে। মুদ্রার মান উল্লেখযোগ্য হারে পড়ে গেছে।

সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিপ্টোকারেন্সি-বিটকয়েনের দাম ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ২০ হাজার ডলার থাকলেও সেটা নামতে নামতে সাড়ে তিন হাজার ডলারে ঠেকেছে।


আরো সংবাদ



premium cement