ধুলায় অসহনীয় নগরজীবন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৫২
রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে ধুলা দূষণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে নগরজীবন। এ পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদফতরকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তবে সিটি করপোরেশন বলছে, তারা আগে থেকেই বায়ুদূষণ রোধে কাজ করছে। ঢাকার দুই সিটিতে প্রতিদিন আড়াই লাখ লিটার পানি ছিটানো হচ্ছে।
রাজধানীতে প্রতিনিয়ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বর্তমানে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের পাশাপাশি সারা বছর ধরেই দুই সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকো, ডিপিডিসির খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকে। এ ছাড়া পুরো নগরীজুড়ে চলে নতুন নতুন বাড়ি নির্মাণ।
বাড়ি নির্মাণ কাজের জন্য বেশির ভাগ সময়ই ইট-বালু এনে রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে। যা আশপাশের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন বা পরিবেশ অধিদফতর কোনো প্রতিষ্ঠানকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এ কারণে রাস্তায় ইট-বালু রেখে বাড়ি নির্মাণের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে বর্তমানে শীতকাল চলছে। দীর্ঘ দিন রাজধানীতে বৃষ্টির দেখা নেই। এ কারণে পুরো নগরীর পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।
ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই নাকে-মুখে ঢুকে যাচ্ছে ধুলাবালি। পোশাক-পরিচ্ছদ ধূলিময় হয়ে যাচ্ছে। দুই দিন পরপরই পোশাক নতুন করে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এতে শারীরিক-মানসিক রোগব্যাধির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ।
বিষয়টি সম্প্রতি আদালতের নজরে আনে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। জনস্বার্থে করা তাদের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি প্রাথমিক শুনানি শেষে বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট রুল জারি করে বলেছেন, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মনজিল মোরসেদ আরো জানান, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বিবাদি সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদফতরকে ১৫ দিনের মধ্যে রাস্তায় এবং ঢাকা শহরে নির্মাণাধীন কাজের জায়গাকে ঢেকে দেয়ার পর কাজ করার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য এক আদেশে দুই সিটির মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকালে এবং বিকেলে যেসব স্থানে ধূলাবালি সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উভয় ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া আদালত পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে সপ্তাহে দুইবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতির প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে বায়ুদূষণ রোধে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কর্মকর্তারা বলছেন, দুই সিটিতে প্রতিদিন আড়াই লাখ লিটার পানি ছিটানো হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আনিছুর রহমান পবন নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতিদিন ৯টি গাড়ির মাধ্যমে ৫০ কিলোমিটার সড়কে সকাল ও দুপুরে দুই বেলা পানি ছিটানো হচ্ছে। প্রতিটি গাড়িতে সাত হাজার লিটার পানির ধারণক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্শেদ বলেন, ডিএসসিসি প্রতিদিন এক লাখ ২৬ হাজার লিটার পানি ছিটাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগেও প্রতিদিন সড়কে পানি ছিটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আবুল হাসনাত মো: আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, আগে মাত্র তিনটি গাড়িতে পানি ছিটানো হতো। সাবেক মেয়র আনিসুল হক আরো ১০টি গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেন। গত ছয় মাস ধরে ১৩টি গাড়ি দিয়ে সারা দিনে পানি ছিটানো হচ্ছে। ডিএনসিসির প্রতিটি গাড়িতে ১০ হাজার লিটার করে পানি ধরে। সে হিসেবে ডিএনসিসি প্রতিদিন এক লাখ ৩০ হাজার লিটার পানি ছিটাচ্ছে বলে আশরাফুল আলম জানান।
তবে গত কয়েকদিনে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, ধুলা দূষণ রোধে ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন কিছু সড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করলেও তা যথেষ্ট নয়। পানি ছিটানোর কিছু সময় পরই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসছে সড়কের অবস্থা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা