২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এবার নেই কুস্তির গ্রামের কেউ

-

‘খুলনা শহরে গিয়ে কোনো অটোরিকশাওয়ালাকে বলবেন কুস্তির গ্রাম। অটোওয়ালা ঠিক আপনাকে নিয়ে যাবে কুস্তির গ্রামে।’ এভাবেই খুলনার রায়ের মহলের বড় বয়রাবাজার গ্রামের পরিচয় দিলেন শেখ শিপন। এ গ্রামেরই কুস্তিগীর শেখ রিপন। এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী কুস্তিগীর তিনি। কুস্তির জন্য বিখ্যাত বড় বয়রাবাজার গ্রাম। সবাই এক নামে কুস্তির গ্রাম নামেই চেনে। বয়রাবাজারের লোকসংখ্যা ১২ হাজারের মতো। তাদের সবারই কুস্তিতে লড়ার অভিজ্ঞতা আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম কুস্তিগীর তৈরি করে আসছে গ্রামটি। অথচ এবারের জাতীয় কুস্তিতে নেই গ্রামটির কেউ। গতকাল থেকে শুরু হওয়া ৩৪তম সিনিয়র এবং অষ্টম জাতীয় মহিলা কুস্তিতে বিভিন্ন দলের ২০০ কুস্তিগীর অংশ নিচ্ছেন। তবে অনুপস্থিত খুলনার বড় বয়রাবাজার গ্রামের কুস্তিগীররা। জাতীয় কুস্তিতে অংশ নিতে আসা জেলার অন্য কুস্তিগীররা জানালেন, অর্থসঙ্কটে জাতীয় কুস্তিতে দল পাঠাতে পারেনি খুলনা। তাই নতুন সম্ভাবনাময়দের অংশ নেয়া হলো না এবারের প্রতিযোগিতায়।

এই গ্রামের অন্য কুস্তিগীররা যারা বিভিন্ন সার্ভিসেস দলে চাকরি করছেন তাদের প্রতিনিধিত্ব আছে এবারের আসরে। কিন্তু খুলনা জেলার হয়ে উঠতি যেসব কুস্তিগীরের এবারের জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কথা ছিল তাদের লড়াই করার সুযোগ হলো না। এই মুহূর্তে গ্রামটির ৫০ জন ছেলে এবং ২০ জন মেয়ে কুস্তি লড়ছেন। সেনাবাহিনীতে চারজন ছেলে, তিনজন মেয়ে, আনসারে ছয়জন ছেলে এবং সমসংখ্যক মেয়ে চাকরি করছেন। চাকরি আছে পুলিশ এবং বিজিবিতেও। গত বছরের যুব বাংলাদেশ গেমসে বড় বয়রাবাজারের ছয়জন ছেলে অংশ নিয়েছিলেন খুলনা জেলার হয়ে। পদক গলায় তুলেছেন সবাই। পাঁচজন স্বর্ণ এবং বাকিজন জেতেন রৌপ্য পদক।

২০১৬ সালে এই গ্রামের খেলোয়াড়দের নিয়েই জাতীয় জুনিয়র কুস্তিতে চ্যাম্পিয়ন হয় এই খুলনা জেলা। সব মিলিয়ে এই গ্রামটির ১৬-১৭ জন স্বর্ণ জয়ী কুস্তিগীর আছেন। তা পুরুষ এবং মহিলা বিভাগে। কিন্তু এবারের জাতীয় কুস্তিতে অংশ না নেয়ার ফলে বিভিন্ন সার্ভিসেস দলে চাকরি নেয়ার সুযোগ নষ্ট হলো বয়রাবাজার গ্রামের উঠতি খেলোয়াড়দের।

উল্লেখ্য, জাতীয় আসরে ভালো করেলই বিভিন্ন দলে চাকরির সুযোগ মেলে। এবার নিজেদের বড় আসরে মেলে ধরার সুযোগ হারালেন তারা। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য মোবাইলে ফোন করা হলের খুলনার কুস্তি সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি।

বড় বয়রা গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই কুস্তিতে আসক্ত। পুরো গ্রামে তিনটি কুস্তি লড়ার স্থান আছে। মাটি কেটে নরম করে সেখানে এই খেলার অনুশীলন হয়। শীতকালই কুস্তির আদর্শ সময়। এই কুস্তি চলে সারা রাত। রাত ৮টায় শুরু হয়ে সকাল পর্যন্ত চলে লড়াই। এতো দর্শকের উপস্থিতি হয় যে তাদের জায়গা দেয়া যায় না। জয়ীদের পুরস্কারও ভালো মানের। ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, টেলিভিশনসহ ২৫, ২০, ১৫, ১০ ও ৫ হাজার টাকার অর্থ পুরস্কার। রাতে আয়োজনের নেপথ্য, সারা দিন মাঠে বা বাজারে কাজে ব্যস্ত থাকেন সবাই। এসব কাজ শেষ করে রাতে তাদের অবসর। তাই দর্শক উপস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে রাতে এই কুস্তির আয়োজন।

শেখ শিপর ছাড়াও এই গ্রামের রাকিব, হুমায়ুন, গোলাম রসুল, নদী, শ্রাবন্তী, রিমি, লাকিরা জাতীয়পর্যায়ে পদক জিতেছেন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন শিপন। তিনি চারটি এসএ গেমসে অংশ নিয়েছেন। ২০১০ সালে তিনি ঢাকা এসএ গেমসে জয় করেন ব্রোঞ্জ। এ ছাড়া তিনটি ইন্দো-বাংলা গেমসে লড়াই করে জিতেছেন একটি স্বর্ণ, সমানসংখ্যক রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ। বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করতে সফর করেছেন ভারত, ইরান, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান। ২০১৪ সালের ইনচন এশিয়ান গেমসে তার অংশ নেয়া হয়নি বাদ পড়ার কারণে। ২০০৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত জাতীয় কুস্তিতে ১৩ বার স্বর্ণ ও একবার রৌপ্য জয় করেন।


আরো সংবাদ



premium cement