১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
এক বাবার মর্মস্পর্শী আকুতি

‘সম্পত্তির লোভে সন্তানরা আমাকে পাগল সাজানোর চেষ্টা করছে’

আবুল কালাম বাবুল - নয়া দিগন্ত

আমি পাগল নই, তুবও সম্পত্তির লোভে সন্তানরা আমাকে পাগল সাজানোর চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, এখন তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। অথচ এই সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে নিদারুন কষ্ট করেছি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠিয়েছি। সেই আদরের সন্তানদের হাতে বেধড়ক মার খেতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। একটি কুচক্রি মহলের প্ররোচনায় পড়ে শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে জন্মদাতা পিতাকে পিটিয়ে আহত করতে দ্বিধাবোধ করেনি তারা।

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নারত অবস্থায় এসব কথা বলছিলেন আবুল কালাম বাবুল (৬৫) নামে এক হতভাগ্য বাবা। তিনি বলেন, কখনো ভাবিনি নিজের সন্তানদের বিরুদ্ধে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু তাদের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করছি।

বাবুল বলেন, তিনি পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক। অনেক কষ্ট করে বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসায় ও সম্পত্তি রক্ষা করেছেন। ভাই বোনদের মধ্যে বাবার সম্পত্তি ভাগ হওয়ার পর নিজের অংশ নিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিলো তার। বড় ছেলে আশিক কালাম ওরফে শিহাব একজন ক্যামিষ্ট। মেয়ে নওরনি সাবা কালাম লন্ডনে লেখা-পড়া করেছে। ছোট ছেলে দেশের একটি নাম করা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে। অনেক কষ্ট করে প্রতিটি সন্তানকে লালন-পালন করেছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের মা সোফিয়া কালাম ও মামাদের প্ররোচনায় পড়ে নিজের বাবার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের দাবী বাবার পুরো সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে হবে।

কালাম বলেন, আমার কষ্টে গড়ে তোলা অর্থ ও পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সন্তানরা। নানা ধরনের অত্যাচার নেমে আসে তার উপর। সর্বশেষ গত ১৮ অক্টোবর রাতে তার ১৩ নম্বর পরীবাগের বাসায় তার বড় ছেলে আশিক, স্ত্রী সোফিয়া ও দুই শ্যালক সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করে তাকে। তিনি দিতে না চাইলে ছেলে আশিক তার মা ও মামাদের সহযোগীতায় তাকে বেধড়ক কিলঘুশি মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সবার মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর তার হাত-পা বেধে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন তিনি নিজেকে তেজগাঁও এর একটি প্রাইভেট মানসিক হসপিটালের সামনে অবিস্কার করেন। ওই সময় আশিক ও তার সহযোগীরা কিছু সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। না করায় পুনরায় তাকে বেধড়ক মারধর করে কয়েকটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ওই হসপিটালে ভর্তি করে রেখে আসে।

বাবুল বলেন, ওই হসপিটালে ৩৩ দিন ধরে বন্দি ছিলেন তিনি। ওই সময়ে তার শরীরে সার্বক্ষনিক নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এরপর মধ্যে বাবুল ভাই বোন ও ব্যবসায়ীক ম্যানেজার তার খোঁজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা অবস্থান জানতে পেরে বাবুলের আইনজীবী এডভোকেট খালেদ মাসুদ মজুমদারের কাছে যান। তার সহযোগীতায়া থানায় জিডি করে আদালতের সরনাপর্ন হন। আদালত বাবুলকে ওই হসপিটাল থেকে উদ্ধার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। ২২ নভেম্বর তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদালতে পেশ করে। পরে ব্যবসায়ী বাবুল নিজেকে সুস্থ্য প্রমান করে নিজ জিম্মায় বেরিয়ে আসেন। বাবুল বলেন, বর্তমানে তিনি মুক্ত হলেও সন্তান ও তাদের মা এবং মামাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারন তারা হুমকি দিয়ে বলছে ‘ এবার ধরতে পারলে আর বাচিয়ে রাখবো, সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো’। এ ব্যপারে জানতে বাবুলের ছেলে আশিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement