২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সত্য ও সাহসের সাথে ১৪ বছর


দৈনিক নয়া দিগন্ত যখন ১৫ বছরে পা দিচ্ছে, তখন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত উক্তি নতুন করে স্মরণ না করার উপায় নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘দুলিতেছে তরী ফুলিতেছে জল ভুলিতেছে মাঝি পথ/.../ কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ’। কবি নজরুল যে উদ্বেগ নিয়ে এ আহ্বান জানিয়েছিলেন তার অবসান হয়নি আজো। সংবাদপত্রই বারবার এ উদ্বেগ জানিয়ে এর সমাধানের জন্য সত্যিকারের হাল ধরার বিষয়টি জনসমক্ষে এনেছে। জন্মলগ্ন থেকেই নয়া দিগন্ত লক্ষ্য করে সত্য ও সাহসের প্রতি ক্ষমতাবানদের প্রচণ্ড অনীহা।

তারা নানা পন্থায় সত্য জনসমক্ষে যেন না আসতে পারে তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক দিকে প্রবল আন্দোলন সত্যের জন্য, অন্য দিকে এই সত্যের টুঁটি চেপে ধরছে ক্ষমতাবানেরা। এমনকি যারা সত্যের জন্য কাজ করছে তারাও বিপদে। এ অবস্থার মধ্যেও নয়া দিগন্ত তাদের ‘সত্যের সঙ্গে প্রতিদিন’ সেøাগান নিয়ে জনগণের কাছে তা পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টায় রত হয় এবং সাথে সাথে অনুভব করে বাধাগুলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের জটিলতা এবং বহুমুখী ভাবনার প্রতিফলনের ফলে জনগণের কাছে সত্য পৌঁছতে বেগ পায়, তাই সব প্রচেষ্টা একপর্যায়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। আর ক্ষমতাবানেরা তারস্বরে তাদের সেই পুরনো কথাগুলো প্রচার করে জনগণকে ড. ম্যাকুলের ভাষায় দাস বানিয়ে রাখতে চায়।

১৫ বছরে পা রাখতে গিয়ে নয়া দিগন্ত আজ স্বভাবতই স্মরণ করছে তার জন্মকালীন উদ্বেগের কথা। বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসের যাত্রার শুরুতে যেমন ছিল বাঁধভাঙা আনন্দ ও দারুণ শঙ্কা, তেমনি ছিল দৃঢ় প্রত্যয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। কুসুমাস্তীর্ণ এ পথ নয়, কেননা চলায় বিঘœসঙ্কুল পথের প্রতি বাঁকে ক্ষমতাবানেরা দাঁড় করিয়েছে বিপত্তি ও বাধা। সংবাদমাধ্যমের অনেকেই সেই বিপত্তি ও বাধার খবর জানিয়ে জনগণকে সাহায্য করেছে। এ মিছিলে নয়া দিগন্তও ছিল এবং থাকার জন্য মূল্যও দিতে হয়েছে।
নয়া দিগন্ত প্রতিটি মুহূর্তে পাঠকের কথা ভাবে এবং সর্বদা চেষ্টা করে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে। এটি সবার জানা, সত্য সামনে আনতে প্রয়োজন সাহস এবং যাদের জন্য এ সত্য, তাদের সহানুভূতি। এই ভূমিকা যেই পালন করতে চেয়েছে, তাকে নানা বাধা পেরুতে হয়েছে। নয়া দিগন্তের জন্যও এটি ছিল এবং আছেÑ খানিকটা বেশিই। পাঠকের পৃষ্ঠপোষকতাই এ ক্ষেত্রে আমাদের জোগাচ্ছে অদম্য সাহস। 

ভাবতে আজ ভালো লাগছে, নয়া দিগন্ত জনগণের আশা-আকাক্সা সামনে রেখে গত ১৪টি বছর পথ চলেছে। পাঠক ও তাদের চাহিদাই আমাদের প্রথম বিবেচ্য। এটিও সত্য, কায়েমি শক্তি পরিশেষে জনগণের ইচ্ছার কাছে নত হতে বাধ্য হয় এবং এ কাজে গণমাধ্যম অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। তথ্য জানলে জনগণ শক্তিশালী হয়। তাই ক্ষমতাবানেরা তথ্যপ্রবাহকে নানাভাবে ব্যাহত করে এবং সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকে। এ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে নয়া দিগন্ত এগিয়ে চলেছে, শুধু পাঠকের সমর্থনের কারণে। জনগণের তথ্য জানার অধিকার বাস্তবায়নের পথে যে প্রচেষ্টা গণমাধ্যমগুলো করে যাচ্ছে, নয়া দিগন্ত সে প্রচেষ্টার সাথে আগামী দিনগুলোতেও থাকবে। নয়া দিগন্ত সে পথ থেকে বিচ্যুত হবে না ইনশাআল্লাহ। সত্য ও সাহসের সাথে বিগত দিনগুলো পার করে এ প্রত্যয়েই সামনে এগোচ্ছে নয়া দিগন্ত।


আরো সংবাদ



premium cement