২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পারমাণবিক বোমা! কার কাছে কত?

পারমাণবিক বোমার আঘাতে নিমিষেই লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। - ছবি: সংগৃহীত

২০১৭ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার নিজ দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানদের সাথে এক বৈঠকে বলেছিলেন, পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার বাড়ানোই তার প্রধান লক্ষ্য হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা জাপান হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বিশ্বে বর্তমানে যে পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার মজুদ রয়েছে তা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে বেশ কয়েকবার ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব।

বিশ্বব্যাপী পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করে আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশন। তাদের তথ্য মতে, পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ১৫ হাজার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যার বেশিরভাগই রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। যার মধ্যে দশ হাজারের কম রয়েছে মিলিটারি সার্ভিসের হাতে। এই তথ্যটা ২০১৭ সালের শেষের দিকে। সুপার-৫ হিসেবে পরিচিত রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকৃত।

অন্যদিকে স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে, রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দেশটিতে এ ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সাত হাজার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের কাছে রয়েছে ৬,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফ্রান্সের কাছে রয়েছে তিনশ’র পারমানবিক ওয়ারহেড। এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চীন। তাদের কাছে রয়েছে ২৭০টি পারমাণবিক বোমা। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের কাছে রয়েছে ২১৫টি পারমাণবিক বোমা।

তবে সব দেশই এসব তথ্যের ব্যাপারে কড়া গোপনীয়তা বজায় রাখে। যেটুকু জানা যায়, তা হলো পৃথিবীর মাট ৯টি দেশের হাতে এখন ৯ হাজার পারমাণবিক বোমা আছে - যদিও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর এ সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে।

পারমাণবিক বোমাগুলো অনেক ক্ষেত্রে বসানো আছে ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায়। তা ছাড়া আছে বিভিন্ন সামরিক বিমান-ঘাঁটিতে বা অস্ত্রের গুদামে।

বিভিন্ন দেশে এখন শত শত পারমাণবিক বোমা বসানো-ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে। আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বসানো আছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, এবং তুরস্কে - সব মিলিয়ে এগুলোর সংখ্যা প্রায় ১৫০।

অন্তত ১৮০০ পরমাণু বোমা আছে যেগুলো খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে নিক্ষেপ করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব পরমাণু-শক্তিধর দেশই এখন তাদের অস্ত্রগুলোর আধুনিকায়ন করছে, বা করার পরিকল্পনা করছে।

এশিয়ায় দুই প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান ও ভারতের কাছে পারমাণবিক বোমা রয়েছে। পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি পারমাণবিক বোমা যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে ভারতের কাছে রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০টি। ধারণা করা হয়, ইসরাইলের কাছে ৮০টির মতো পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে। আর উত্তর কোরিয়ার কাছে রয়েছে ১০ থেকে ২০টির মতো পারমাণবিক বোমা।

টেলিগ্রাফের গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা বি-৮৩, আর রাশিয়ার টিসা বোম্বা এতই ভয়ঙ্কর যে এগুলো কোন জায়গায় নিক্ষেপ করলে কোটি কোটি মানুষ নিমিষেই মারা যাবে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে আরো লাখ লাখ মানুষ নানারকম রোগে আক্রান্ত হবে।

 

আরো পড়ুন: ১৫ হাজার পারমাণবিক বোমা বিশ্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে: এরদোগা

আনাদোলু এজেন্সি, ২৩ মে ২০১৮


১৫ হাজার পারমাণবিক বোমা বিশ্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে : এরদোগান - সংগৃহীত
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক মনে করে পারমাণবিক শক্তি অবশ্যই শান্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহারিত হওয়া উচিৎ। আমাদের দেশ ও ধর্মের জন্য প্রধান হুমকি হচ্ছে- পরমাণু অস্ত্র। সারা বিশ্বকেই পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করতে হবে। কমপক্ষে ১৫ হাজার পারমাণবিক বোমা বিশ্বকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় কূটনীতিবিদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন।

এরদোগান বলেন- আমরা জেরুসালেমে আমাদের অধিকার ছেড়ে না দিতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। আমরা কখনো আমাদের প্রথম কিবলা ত্যাগ করতে পারি না। যাদের রক্ত ঝরেছে, অশ্রু ঝরেছে, জীবন ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য প্রার্থনা করছি। তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থানের দখলদারদেরকে আমরা ক্ষমা করতে পারি না।

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তর প্রসঙ্গে এরদোগান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী হাতগুলো ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্তে রঞ্জিত। আমেরিকান প্রশাসনের মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শান্তি নিয়ে কোনো ধরণের কথাবার্তা-আলাপ-আলোচনার অধিকার নেই।

পারমাণবিক শক্তির ব্যাপারে এরদোগান বলেন- আমরা জেরুসালেমের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব; যতক্ষণ না জেরুসালেম হবে শান্তিময় আবাস, বিরাজ করবে প্রশান্তি এবং সম্মান। জেরুসালেমের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না তুরস্ক।

ইতোপূর্বে এরদোগান বলেছিলেন, মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলকে মোকাবিলা করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য ইসরাইলকে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। গাজার গণহত্যার দায় ইসরাইলকে নিতে হবে। ইসরাইলি ডাকাতরা ফিলিস্তিনিদের ওপর যে নৃশংসতা চালিয়েছে, তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে সারাবিশ্বকে দেখিয়ে দিতে হবে মানবতা এখনো জীবিত। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা নৃশংস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এসব দস্যুতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে পদক্ষেপ গ্রহণ পুরো বিশ্বকে এটা দেখাচ্ছে যে মানবতা এখনো মরে যায়নি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ দস্যুতাবৃত্তি ও পাশবিক সন্ত্রাস। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি অনিবার্যভাবে তাদেরকে গ্রাস করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement