১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে ট্রাম্প ও রুহানির তীব্র বাকযুদ্ধ

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণরত হাসান রুহানি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প : এএফপি - সংগৃহীত

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে তুমুল বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। মঙ্গলবার ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তাদের মধ্যে এই বাকযুদ্ধে হয়। ইরানের নেতৃত্বকে দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক আখ্যা দেন ট্রম্প। এর জবাবে রুহানি তার ভাষণে তেহরানের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যা দেন।

কয়েক দশকের বৈরিতার ধারাবাহিকতায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গত মে থেকেই উত্তেজনা বাড়ছে। ওই সময় ট্রাম্প ছয় বিশ্বশক্তির সাথে ২০১৫ সালে সম্পাদিত ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন এবং তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন।

মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে এক মন্তব্যে সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানান, ইরানিরা তাদের ‘সুর না পাল্টানো’ পর্যন্ত তিনি তাদের সাথে বৈঠক করবেন না।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ বার্ষিক সাধারণ সভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট মতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অগ্রগতির বিবরণ হাজির করেন। অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে দেয়া ওই বক্তৃতায় ইরানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। ইরান সরকার ব্যবস্থাকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ একনায়কতন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে তাদের সাথে ২০১৫ সালে হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করেন।

সে সময় তিনি বলেন, ইরানের নেতারা বিশৃঙ্খলা, হত্যা ও ধ্বংসের বীজ বপন করছেন। ইরানের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, তারা তাদের প্রতিবেশী ও সীমান্ত এবং জাতির সার্বভৌম অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন না। ইরানের নেতারা দেশের সম্পদ লুটে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করছেন এবং তারা মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য দেশে দাঙ্গাহাঙ্গামা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের জনগণ তাদের নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ। কারণ তারা কোষাগার থেকে কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করছেন এবং জনগণের ধর্মীয় অঙ্গীকার লুট করছেন। আর এসব অর্থ দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। এটি ভালো নয়। এ সময় ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে আরো কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নভেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে ইরানের জ্বালানি খাতে দ্বিতীয়বারের মতো নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান খুব বাজে আচরণ করেছে। আমরা ইরানের সাথে খুব ভালো একটি সম্পর্ক গড়ার অপোয় আছি। কিন্তু সেটি এখন হবে না।’

এর জবাবে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করে রুহানি তার ভাষণে বলেন, ‘তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একক নিষেধাজ্ঞা আরোপ অর্থনৈতিক সন্ত্রাস বই কিছু নয়।’

ট্রাম্পের পরে বক্তৃতা করতে এসে ইরানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নাকচ করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দেন।

ইরানের সাথে ছয় জাতিগোষ্ঠীর পরমাণু সমঝোতা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। তেহরানকে নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাবেরও তীব্র সমালোচনা করেন রুহানি।

তিনি বলেন, হুমকি ও ‘অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা’ বন্ধ হলেই কেবল আলোচনা শুরু হতে পারে। কোনো দেশকেই জোর করে আলোচনার টেবিলে বসানো যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে : বোল্টন
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কিংবা মিত্রদের তি করলে ইরানি শাসকদের ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। তেহরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ‘বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু ও ধ্বংসের’ বীজবপন করছে, জাতিসঙ্ঘে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন অভিযোগের কয়েক ঘণ্টা পর বোল্টন এ হুঁশিয়ারি জানালেন ।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে ইরানবিরোধী এক সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘মিথ্যা, প্রতারণা ও শঠতা’ অব্যাহত রাখলে ‘তেহরানের মোল্লাদের খুনি শাসনব্যবস্থাকে’ গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। ‘যদি তোমরা আমাদের, মিত্রদের কিংবা অংশীদারদের বেলায়ও সীমা লঙ্ঘন কর, তাহলে অবশ্যই গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। আজ আমি বার্তা স্পষ্ট করতে চাই। আমরা নজর রাখছি, আমরা তোমাদের ধরব। তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসী হবে বলেও মন্তব্য করেন অতীতে ইরানে সামরিক হস্তেেপর পে থাকা বোল্টন।

যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের আগস্টে ইরান সরকারের ডলার ক্রয়, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান পদার্থ কেনাবেচা এবং তেহরানের স্বয়ংক্রিয় মোটর খাত ল্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়। মার্কিন প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে ইরানি মুদ্রা রিয়ালের দামও কমে গেছে। নভেম্বরে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞায় ইরানের তেল ও জাহাজ খাত এবং এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিগ্রস্ত হবে বলেও ধারণা করছেন পর্যবেকেরা।

যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলেও যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া ২০১৫ সালে তেহরানের সাথে স্বারিত জয়েন্ট কম্প্র্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিকে বাঁচাতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ইরানের সাথে বাণিজ্য করতে নতুন একটি বিনিময় পদ্ধতি চালুরও ঘোষণা দিয়েছে তারা।

বিস্তারিত না জানালেও নতুন এ পদ্ধতিতে তেল কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিশ্ব বাজার ও ডলারের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই ইরানের সাথে বাণিজ্য চালাতে পারবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পাঁচ বিশ্বশক্তি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ার এ পদেেপর কড়া সমালোচনা করেছেন।

ইরানের সাথে বৈধভাবে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরায় ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও ইরান নিয়ে ‘আলোচনা ও বহুত্ববাদের’ আহ্বান জানান। তার এ আহ্বান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশে করে বলে, ধারণা বিশ্লেষকদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল