১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের নদনদী থেকে শুরু করে মোহনা ও সমুদ্রে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ মাছ। ইলিশ ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার আগ মুহূর্তে এতো মাছ জালে ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা।

মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য অধিদফতর।

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আদেশ অমান্য করলে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখেছে মৎস্য অধিদফতর। মূলত এ মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ সাগর থেকে স্রোতযুক্ত মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে বলে জানান মৎস্য গবেষকরা।

তবে মাছ বেশি ধরা পড়লেও বরফ-সংকটের কারণে তা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। যার প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে।

লৌহজং জেলে সমিতির প্রেসিডেন্ট পরিমল মালো বিবিসিকে জানান, "শুধুমাত্র চাঁদপুর ও মাওয়াতে প্রতিদিন ৩ শ' মণেরও বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। এ কারণে বাজারে ইলিশের দাম কমে গেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ছোট আকারের ইলিশ আড়াই শ' থেকে তিন শ' টাকায় এক কেজি ওজনের মাছ ৫ শ' থেকে সাড়ে ৫ শ' টাকা দরে এবং বড় ইলিশের দাম পড়ছে মাত্র ৭ শ' থেকে সাড়ে ৭ শ' টাকা। ঢাকাতেও মাছের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা দরে।"

মাছের দাম বাজারে কম হলেও জালে মাছ পড়ায় জেলেরা লাভের মুখ দেখছেন বলে তিনি জানান।

তবে হঠাৎ করে এতো ইলিশ জালে পড়ার কারণ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সামুদ্রিক নিম্নচাপকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন চট্টগ্রাম মেরিন সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান।

তিনি বলেন, "একসময় অবাধে ইলিশ আহরণের কারণে বছরের প্রায় প্রতিটি সময় ইলিশের সংকট থাকতো। তবে সরকার মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, কারেন্ট জাল জব্দ, জাটকা ধরায় কড়াকড়ির কারণে এখন জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।"

"এছাড়া সামুদ্রিক নিম্নচাপ এবং সাইক্লোনের একটা প্রভাবও রয়েছে। কেননা ওই সময়টায় জেলেরা ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারেনা। বছরে ২০ থেকে ২৫টি নিম্নচাপ হয়ে থাকে। এতে ৪০-৪৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকে যেটা মৎস্য সম্পদের জন্য এক ধরণের আশীর্বাদ বলতে পারেন।" জানান সাইদুর রহমান খান।

সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরে এল-নিনোর প্রভাবে নদীতে ইলিশ আহরণের সম্ভাবনা বেড়ে গেলেও চলতি বছরে সমুদ্রে এর কোনো প্রভাব নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরো পড়ুন :

জাল ফেললেই ওঠে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ
বাসস

উপকূলীয় জেলা ভোলায় গত কয়েক দিন ধরে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। এখানকার নদ-নদী ও সাগর মোহনায় আশানুরুপ ইলিশ পাওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলেদের মনে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ৎ, পাইকারী ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাক ও দর কষাকষিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন ইলিশের বাজার। আর দীর্ঘদিন পর জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। জেলে পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।

সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছের ঘাট, নাছির মাঝি মাছঘাট, কোরার হাট মাছের মোকাম, তুলাতুলি মাছ ঘাট, বিশ্বরোড মাছের ঘাট, জংশন এলাকার মাছঘাট, ইলিশার মাছ ঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চরফ্যাশনের চেয়ারম্যানের খাল মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। সারা রাত নদীতে মাছ ধরে সকাল বেলা ঘাটগুলোতে চকচকে ইলিশ নিয়ে আসে জেলেরা।

ঘাটে নৌকা অথবা ট্রলার ভেড়ানোর সাথে সাথেই হাঁকডাক দিতে থাকে ব্যাপারীরা। জেলেরা ঝুড়িতে করে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ নির্দিষ্ট গোলায় রাখে। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ইলিশ কিনতে নিলামে ডাক উঠে যায়। স্থানীয় ব্যাপারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাই সেই মাছ কিনে নিচ্ছেন। মূলত এমনি করেই এখান থেকে ইলিশ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে। আবার অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি লঞ্চে বা ট্রাকে করে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মাছ সরবরাহ করে থাকেন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে এখান থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করে করেন।

সদর উপজেলার মেঘনা পাড়ের ভোলার খাল মাছ ঘাটের আড়ৎদার মো. আল আমিন বাসস’কে জানান, এবার মৌসুমের প্রথম দিকে তেমন একটা ইলিশ মাছ না পাওয়া গেলেও বর্তমানে ইলিশের সংখ্যা বাড়ছে। কয় দিন আগেও যেসব আড়তে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার ইলিশ বিক্রি হতো, সেখানে এখন লাখের উপরে বিক্রি হয়। সামনের দিনগুলোতে ভারী বর্ষণের সাথে সাথে জেলেদের জালে আরো ইলিশ ধরা পড়বে বলে তিনি জানান। আল আমিন বলেন, প্রতিদিন শুধু এ ঘাট থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এজন্য তিনি সরকারের জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রমকে স্বাগত জানান।
বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে এক কেজির ওপরে ইলিশের হালি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮ শ’ থেকে ১ হাজার গ্রাম ইলিশের হালি ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। ৬ শ’ থেকে ৯ শ’ গ্রামের হালি ২ হাজার থেকে ২৪ শ’ টাকা। আর ৪ শ’ থেকে ৬ শ’ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা হালি।

ধনীয়া এলাকার বাসিন্দা জেলে লুৎফর গাজী সফতউল্লাহ ও রহমান মাঝী বলেন, তারা ছোট ইজ্ঞিনচালিত নৌকা করে মেঘনায় ইলিশ শিকার করেন। কয় দিন আগে এমন অবস্থাও হয়েছে, ইলিশ না থাকায় ট্রলারের তেলের খরচও উঠেনি। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ইলিশ ধরা বেড়েছে। এখন তাদের নৌকায় দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

ইলিশা এলাকার জেলে জামালউদ্দিন জানান, নদীতে ইলিশ ধরা পড়লেও ৪ শ’ থেকে ৬ শ’ গ্রামের মধ্যম সাইজেরটা বেশি উঠছে। এক কেজি অথবা তারচেয়ে বড় ইলিশ খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বড় মাছের দাম একটু বেশি।


সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বাসস’কে বলেন, এবছর মৌসুমের প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কাংঙ্খিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তাই বর্তমানে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। মূলত পানির গভীরতার সাথে ইলিশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরো ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানান জেলার প্রধান মৎস্য কর্মকর্তা।

এদিকে জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছই বেশি। বিক্রেতারা সারি সারি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছে বাজারগুলোতে। নতুন বাজারে সরেজমিনে দেখা যায় প্রচুর ইলিশ মাছের সরবরাহ। ক্রেতারা পছন্দের ইলিশ কিনতে এক দোকান থেকে ছুটছেন অন্য দোকানে। মূল্য সহনীয় থাকায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন তারা। গাজীপুর সড়কের কবির হোসেন জানান, দাম একটু কমে যাওয়াতে তিনি মাছ কিনতে এসেছেন। বাজার ছাড়াও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ভ্যান গাড়ি ও মাথায় করে অনেককেই ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ফুটপাতে সাজিতে করে ইলিশ বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা।

অন্যদিকে নদীতে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়াতে বরফের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের জন্য বরফের কোন বিকল্প নেই। তাই স্থানীয় বরফকলগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
শহরের কালীনাথ রায়ের বাজারের শীবুর বরফকলের মালিক শীবু কর্মকার বাসস’কে জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বরফের ব্যাপক চাহিদা তার এখানে। প্রচুর চাপ থাকাতে বরফ বিক্রি করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে ঢাকাগামী লঞ্চ ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে ব্যাপক চাপ সামলাতে হয় তাদের।


আরো সংবাদ



premium cement