২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নারীদের জন্য আলাদা মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে

নারীদের জন্য আলাদা মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে - সংগৃহীত

ডেনমার্কের কোপেনহেগন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহরে ইতিমধ্যেই গড়ে ওঠেছে শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের ইবাদত করার জন্য মসজিদ। বর্তমানে মুসলিম নারীরা তাদের নিজেদের ইবাদতের অধিকার নিয়ে সোচ্চার যা ইতিহাস জুড়ে পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলো।

ইউরোপে মুসলিম নারীদের জন্য প্রথম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শেরিন খানকান জানান, ‘দশকের পর দশকে ধরে যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে উঠেছে তা পাল্টানো সম্ভব।’ তিনি ডেনমার্কের একটি ব্যস্ততম বাজারে রাস্তার পাশেই মসজিদ গড়ে তুলেছেন যা সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে এই মসজিদটি নারীদের জন্য এরকম উদ্যোগে সৃষ্টির জন্য নীরবে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে।

গত দুই বছর ধরেই মসজিদটিতে নারী ইমাম নামাজে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। খানকান বলেন, তিনি কুরআনের শিক্ষার বিরুদ্ধে যেতে চান না তবে তিনি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পাল্টাতে চান। আমরা নতুনভাবে শুরু করতে চাই। আমরা লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে চাই। এটি কোনো সংস্কার নয়। বরং আমরা ইসলামের মূল শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে চাই।

শেরিন খানকান আরো বলেন, মসজিদে এখন পর্যন্ত ১৫০ জন ইবাদতকারী নিয়মিত ইবাদত করতে আসেন। ডেনমার্কের মুসলিম নারী ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

বিভিন্ন মুসলিম নারীদের সংগঠন জানিয়েছে যে, বর্তমান বিশ্বে নারী ইসলামী নেতৃত্বের বড়ই অভাব। বিভিন্ন দেশের বেশীরভাগ মসজিদগুলো পুরুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে করে মুসলিম নারীদের জন্য মসজিদে এসে প্রার্থনা করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

গত ১৫ বছর ধরে প্রচেষ্টার ফলাফল স্বরূপ শুধু মাত্র শেরিন খানকানের মারিয়াম মসজিদই নয় যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহর এবং জার্মানির বার্লিনে দুইটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যারা প্রতি শুক্রবার নারী এবং পুরুষদেরকে মসজিদে একত্রে নামায আদায় করার সুযোগ দিচ্ছে।

এমনকি যুক্তরাজ্যের ব্রেডফ্রোড শহরে দেশটির প্রথম নারী নেতৃত্বাধীন মসজিদ প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। যার কাজ ২০২০ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনে কয়েক শত বছর ধরেই শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের জন্য আলাদা মসজিদ রয়েছে। যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম নারীরা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

যুক্তরাজ্যের ব্রেডফ্রোড শহরের মসজিদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা বানা গোরা যিনি ব্রিটেন মুসলিম ওমেন’স কাউন্সিলের পরিচালক বলেন, ‘সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে মুসলিম নারীরা একে অন্যের সাথে মত প্রকাশ করবে কোথায়? আপনার তখন দরকার হবে একটি নিবেদিত স্থান যেখানে মুসলিম নারীরা তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। আর আমরা কোথায়ও এরকম স্থান দেখতে পাই না। সেজন্যই নারীরা মসজিদে তাদের স্থান দেয়ার দাবী জানাচ্ছে। আমি এটাতে কোনো ভুল দেখছি না।’

শেরিন খানকান বলেন, মসজিদে নারীদের উপস্থিতি তাদেরকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন অনুভূতি দেয়। তারা মসজিদে এসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করেন যেমন- আন্ত-ধর্মীয় বিবাহ অথবা গৃহ সংঘাত ইত্যাদি। ডেনমার্কে বোরকা নিষিদ্ধ করার কারণে মুসলিম নারীদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী সংকুচিত হয়ে গেছে।

ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সাথে তাল মিলিয়ে ডেনমার্কের আইনসভা চলতি বছরের মে মাসে বোরকার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশটির বিচার মন্ত্রী বোরকা নিষিদ্ধ করে ডেনমার্কের নারীদেরকে পরিবারের জোর করে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত থেকে মুক্তি দিয়েছেন বলে দাবী করেন।

শেরিন খানকান বলেন , ‘যদি নারীদেরকে জোর করে বোরকা পরিধান করানো তাদেরকে অন্তরীণ করার সামিল হয় তাহলে তা অবশ্যই শুভ কোনো বিষয় নয়। তবে যদি বোরকা পরিধানকারীদের অপরাধীদের সাথে তুলনা করা হয় তবে তা হবে নারীদেরকে আরো বেশি অন্তরীণ করার সামিল।’

শেরিন খানকান বলেন, আমি আশা করি- ভবিষ্যতে মুসলিম নারীদের মধ্য থেকে অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ এবং ইমাম উঠে আসবেন যারা মুসলিম নারীদের পক্ষে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। আমাদের জানা দরকার যে, নারীরাই ইসলামের ভবিষ্যৎ। আমাদের অবশ্যই নারীদের জন্য পুরুষদের মত সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’

বেশিরভাগ ইসলামী বিশেষজ্ঞের মতে- পবিত্র কুরআনে নারীদের নামাজে ইমামতি করার ব্যাপারে সরাসরি কোনো কিছু বলা হয়নি। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নারীদেরকে ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন- নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নারীদেরকে শুধুমাত্র গৃহে ইবাদত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নারীরা যখন নামায রত থাকেন তখন পুরুষদের তাদের কণ্ঠস্বর শোনা উচিত নয়।

তবে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গিউলিয়া লিবারেটর নামের একজন অধ্যাপক যিনি মুসলিম নারী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গবেষণারত আছেন। তিনি বলেন, মুসলিম নারীদেরকে যদি ক্ষমতা দেয়া হয় তবে তার প্রভাব ইতিবাচক হতে পারে। যখন নারীরা অন্য নারীদেরকে উচ্চ আসনে দেখবে তখন তাদের মধ্যে এই ধারণা জন্মাবে যে, তারাও চেষ্টা করলে একজন বিশেষজ্ঞ হতে পারবেন।’

 

জাপানে মোবাইল মসজিদ
২৪ জুলাই ২০১৮

২০২০ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে। আর এই অলিম্পিককে সামনে রেখে দেশটির সরকার ‘মোবাইল মসজিদ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বৈশ্বিক এই ইভেন্টকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে একটি ‘মোবাইল মসজিদ’ তৈরিও করেছে জাপান সরকার।

এই মোবাইল মসজিদ বানাতে চার বছর লেগেছে। একটি ২৫ টন ট্রাককে একটু মডিফাই করে সেটিতে নামাজের জন্য ৪৮ স্কয়ার মিটার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। ওই জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন নামাজ পড়তে পারবেন। এমনকি এই মোবাইল মসজিদের ভেতর ওজুর জন্য পানি রয়েছে। কিবলার দিকও নির্দেশ করা আছে।

মোবাইল মসজিদ আইডিয়ার জনক টোকিওর বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে। এর আগে ২০০৪ সালে এথেন্সে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ফুটবাথ তৈরি করে ছিলেন। এরপর ২০১২ সালে লন্ডন গেমসে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। গ্রেট ইস্ট জাপান ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।

তবে কাতারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে মোবাইল মসজিদ বানানোর এই আইডিয়া তার মাথায় আসে। তিনি বলেন, নামাজ মুসলমানদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নামাজ পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আমি মুসলমানদের ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।

জাপানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি মসজিদ রয়েছে। তবে ‘মোবাইল মসজিদ’-এর মাধ্যমে যেমন অলিম্পিকের মতো বড় আসরের প্রচারণা ও প্রসার কাজ চলছে তেমনি এই ধারণা মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে

সকল