২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহাকাশে বিলাসবহুল হোটেল!

-

এক দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় দেখতে চান? মহাশূন্যে ভেসে বেড়াতে চান? মহাশূন্যে থেকে পৃথিবীকে কেমন দেখায়, সে অভিজ্ঞতা নিতে চান? আর মাত্র চার বছর ধৈর্য ধরুন। গুছিয়ে ফেলুন ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। এই টাকা খরচ হবে বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল মহাকাশ হোটেলে থাকা-খাওয়ার বিল হিসেবে। হোটেলের নাম ‘অরোরা স্টেশন’।

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসেতে অনুষ্ঠিত স্পেস ২.০ সম্মেলনে ওই মহাকাশ হোটেল তৈরির ঘোষণা করা হয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ প্রযুক্তিবিষয়ক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন স্প্যান ওই হোটেল তৈরি করবে। ১২ দিনের মহাকাশ সফরে এখানে দু’জন ক্রু সদস্যসহ একসঙ্গে ছ’জন থাকতে পারবেন। ২০২২ সালে প্রথম অতিথি হিসেবে সেখানে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।

ওরিয়ন স্প্যানের প্রধান কর্তা ফ্র্যাঙ্ক বাংগার বলেন, সবার জন্য মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্য তাদের। মহাকাশে হোটেল চালুর পরপরই কম খরচে সেখানে সবাইকে থাকার সুযোগ দেয়া হবে। দুই সপ্তাহের ভ্রমণে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচের বিষয়টি অনেকের কল্পনা বাইরে। তবে ওরিয়ন স্প্যানের দাবি, সত্যিকারের মহাকাশচারীর অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে এতে।

বার্গনার বলেন, মহাকাশ স্টেশনে যেতে নভোচারীদের ২৪ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তারা একে তিন মাসে নামিয়ে এনেছেন। ১২ দিনের এই রোমাঞ্চকর যাত্রায় পর্যটকরা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মাইল উপরে লো আর্থ অরবিটে (এলইপি) উড়বেন। সেখান থেকে পৃথিবীর চমৎকার দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এই হোটেল পৃথিবীকে প্রতি ৩০ মিনিটে প্রদক্ষিণ করবে। অর্থাৎ হোটেলের অতিথিরা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। হোটেলে বসে অতিথিরা খাবার উৎপাদনের মতো গবেষণায় অংশ নিতে পারবেন। এসব খাবার তারা উপহার হিসেবে পৃথিবীতে সাথে নিয়ে আসতে পারবেন। উচ্চগতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সিস্টেম থাকবে সেখানে। সরাসরি পৃথিবীতে লাইভ ভিডিও চ্যাট করা যাবে। এ ছাড়া পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে। ভরশূন্য অনুভূতির মজা নেয়া ছাড়াও অতিথিরা মুক্তভাবে হোটেলের ভিতর ভেসে থেকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু প্রভার দৃশ্য দেখতে পারবেন। যারা এই সুযোগ হারাতে চান না, তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতে শুরু করেছে ওরিয়ন স্প্যান। ৮০ হাজার ডলার দিয়ে আগাম বায়না করে রাখতে হবে। তবে পরে যদি কেউ পুরো অর্থ না দিতে পারেন, তবে ওই অর্থ ফেরত দেয়া হবে।

অবশ্য মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিতে ওরিয়ন স্প্যানের মতো আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যাক্সিওম স্পেস। টেক্সাসের ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। ২০২৪ সালে একটি বাণিজ্যিক স্পেস স্টেশন চালু করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তারা এখনও খরচের কথা প্রকাশ করেনি। তবে আগে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে মহাকাশ ভ্রমণ করা ডেনিস টিটোর চেয়ে তখন মহাকাশ ভ্রমণে খরচ কম হবে বলেই জানিয়েছে তারা। ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণকারীদের পৌঁছে দেবে এক্সিওম। পরে নিজেদের স্টেশনে যাত্রী নিয়ে যাবে।

অবশ্য মহাকাশ ভ্রমণে খরচ যা-ই হোক, যাত্রী খুব কম পাওয়া যাবে। তবে বার্গনার বলছেন, অরোরা স্টেশন শুধু হোটেল হিসেবে কাজ করবে না। এটি মহাশূন্যে ভরশূন্য অবস্থায় বিভিন্ন গবেষণা ও মহাশূন্যে কারিগরি কাজে মহাকাশ সংস্থাগুলোর জন্য কাজ করবে। বর্তমান বাজার চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও সুবিধা ওরিও স্প্যানে বাড়ানো যাবে বলেই জানিয়েছেন বার্গনার।


আরো সংবাদ



premium cement