২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পিয়ংইয়ং দখলের ষড়যন্ত্র করছে যুক্তরাষ্ট্র!

পিয়ংইয়ং দখলের ষড়যন্ত্র করছে যুক্তরাষ্ট্র! - সংগৃহীত

পম্পেওর সফর বাতিলের পর উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রীয় পত্রিকা কঠোর ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে। রবিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তীব্র সমালোচনা করে বলেছে,যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার সাথে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে এবং দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তর কোরিয়ার রোডং সিনমুন পত্রিকা বলে, পিয়ংইয়ং দখল করার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ একটি দল জাপানের আকাশে মহড়া দিচ্ছে। এসব পদক্ষেপ থেকে প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে একটা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিমুখী ভঙ্গি বিশেষ গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করছি। তারা মানুষকে গোপনে হত্যাযজ্ঞে সক্ষম বিশেষ দলের মহড়া চালাচ্ছে; আবার একই সাথে মুখে হাসি নিয়ে আলোচনায় বসছে, সংলাপ চালাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, তিনি পত্রিকায় বর্ণিত এই মহড়া সম্পর্কে কিছু জানেন না। রোডং  সিনমুনের সম্পাদকীয়তে পম্পেওর সফরের কথা উল্লেখ না করলেও, যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থহীন সামরিক জুয়া না খেলে সিঙ্গাপুর বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানে দুই দেশের নেতা কোরীয় উপত্যকাকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর শীঘ্রই উত্তর কোরিয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা বাতিল করেন। তার মানেই হচ্ছে- জুন মাসে সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আর আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করতে পরিমাপযোগ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন পম্পেও। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সরকার চাইছে আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কঠোর পদক্ষেপগুলো শিথিল করুক বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় দিক।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ান রেডিওর একটি সূত্র উদ্ধৃত করে রোডং সিনমুন পত্রিকা জানায়, মার্কিন ড্রোন হামলার অংশ হিসেবে মার্কিন বিশেষ ইউনিট ফিলিপাইনের কাছে পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেলিফোনে বিভন্ন প্রসঙ্গে আলাপ করেছেন এবং পম্পেওর সফর বাতিলের ব্যাপারে কথা বলেছেন।

উন্মুক্ত কারাগার উত্তর কোরিয়া

১১ জুন ২০১৮

উত্তর কোরিয়ায় সবকিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে

কিম পরিবারের তিন পুরুষ শাসন করে আসছে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এই দেশটিকে। বর্তমান নেতা কিম জং আন এবং তার পরিবারের প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য দেখিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে দেশটির নাগরিকদের। প্রত্যেক নাগরিকের ওপরই ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। আর দেশের অর্থনীতি, সেটিতো সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে।

মানুষের খাদ্য, জ্বালানিসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে ভয়াবহ সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু কিম জং আনের সরকার অর্থ ব্যয় করছে পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এর মন্তব্য হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া একটি সর্বগ্রাসী রাষ্ট্র। পরমাণু কর্মসূচির পিছনে অর্থ ঢালতে গিয়ে সরকার দেশের ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার কেড়ে নিচ্ছে।


গণমাধ্যমও সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রণে

উত্তর কোরিয়ায় গণমাধ্যমের বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠিনভাবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স সর্বশেষ বিশ্বের ১৮০টি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান ১৮০তম।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থেকেই নাগরিকদের খবর, বিনোদন বা সব ধরণের তত্যের খোরাক মেটাতে হয়। কিন্তু তাতে থাকে শুধু সরকারের প্রশংসা।

পরিস্থিতি সেখানে এতটাই ভয়াবহ যে কেউ দেশের বাইরের বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে কিছু জানার চেষ্টা করলে তাকে জেলে যেতে হয়।

অভিজাতরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাতেও নজরদারি আছে। দেশের বাইরে ফোন করা যায় না।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কালোবাজারির মাধ্যমে কিছু চীনা মোবাইল ফোন পাওয়া যায়, গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়লে, ফোন ব্যবহারকারি ব্যক্তিকে হয়রানি পোহাতে হয়।

উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ংয়ে অভিজাতদের কেউ কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এই সেবাও নজরদারির বাইরে নয়।

ধর্মীয় স্বাধীনতা কতটা আছে?

উত্তর কোরিয়ার সংবিধান কিন্তু নিজস্ব বিশ্বাসের অধিকারের কথা বলা আছে। সেখানে বৌদ্ধ, শামানিস্ট এবং স্থানীয় চন্দোইজম ধর্মের অনুসারি রয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গির্জাও সেখানে আছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, ধর্ম নিয়ে সেখানে লোকদেখানো কিছু কর্মকাণ্ড আছে। আসলে নাগরিকদের কিম পরিবারের বন্দনা করা ছাড়া ধর্মীয় কোনো স্বাধীনতা নেই।

বন্দীদের জন্য শর্ত অনেক কঠিন

দেশটিকেই বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার বলা যায় বলে মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্র্যাড অ্যাডামস।

সামান্য বিষয়ে কারাদণ্ড হতে পারে। আর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সেখানে কোনো বিষয়ই নয়। প্রকাশ্যে শিরচ্ছ্বেদ করা হয়।

কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হলে তার পুরো পরিবারকেই চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হয়।

কেউ যদি দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা বা ডিভিডি বা কিছু দেখে, তাহলে তাকেও বন্দী করা হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় সোয়া লাখের বেশি মানুষ কারাগারে রয়েছে।

২২ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিক্ষার্থী উত্তর কোরিয়া বেড়াতে গিয়ে ১৭ মাস জেল খেটেছিলেন।

নাগরিকের শ্রমের উপরও জবরদস্তি চলে

দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে বছরের কোনো না কোনো সময় সরকারের কাছে বিনামূল্যে শ্রম দিতে হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ নিয়েও ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছিল।

উত্তর কোরিয়া ছেড়ে যাওয়া সাবেক একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, বছরে দু'বার তাদের স্কুল থেকে জোর করে বিনামূল্যে কাজ করিয়ে নেয়া হয়েছিল।

চীন, কুয়েত এবং কাতারে উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার নাগরিককে ক্রীতদাসের মতো নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করতে পাঠানো হয়। তারা নামমাত্র যে পারিশ্রমিক পান, তারও বড় অংশ সরকার নিয়ে নেয়।

নারীদের কোনো অধিকারই সেখানে নেই

উত্তর কোরিয়া নিজেদের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করলেও সেখানে নারীরা চরম বৈষ্ণ্যমের শিকার। তাদের শিক্ষা এবং কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। আর আহরহ ঘটে যৌন হয়রানির ঘটনা। ফলে নারীদের জীবন সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

শিশুরাই বা কতটা নিরাপদে আছে?

প্রাথমিক স্কুল থেকেই শিশুদের ঝড়ে পড়ার হার উদ্বেগজনক। শিশুরা স্কুল যাওয়া শুরু করে। কিন্তু পরিবারকে সাহায্য করার জন্য শিশু বয়সেই অর্থ আয়ের চেষ্টা করতে হয়। ফলে তাদের আর স্কুলে যাওয়া হয় না।

স্কুলের পাঠ্যক্রম রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত। এই পাঠ্যক্রম দিয়ে জানার পরিধিও সীমিত করে রাখা হয়েছে।

ইউনিসেফ এর হিসাব অনুযায়ী দুই লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

উত্তর কোরিয়ার সরকার নাগরিকদের অধিকার নিয়ে সমালোচনা অস্বীকার করে আসছে।

তবে মানবাধিকার কর্মি ব্র্যড অ্যাডামস এর মন্তব্য হচ্ছে,উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতিকে তলাবিহীন গভীর কূপের সাথে তুলনা করা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement