২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নোংরা পানিতে ম্লান

হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নোংরা পানিতে ম্লান - ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা হাতিরঝিলের নোংরা পানি ম্লান করে দিচ্ছে এর সব সৌন্দর্য। দুর্গন্ধে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ার আনন্দটাই ফিকে হয়ে যায়। এতটা দুর্গন্ধ হয়ে গেছে নাক চেপে অতিক্রম করতে হয় অনেকটা পথ। ময়লাযুক্ত মিশমিশে কালো পানি মিশে গেছে হাতিরঝিলের অর্ধেক এলাকা পর্যন্ত। এ কালো পানিটা আসছে হোটেল সোনারগাঁওয়ের দিক থেকে। স্যুয়ারেজের পানির পুরোটাই পাইপের মাধ্যমে অতিক্রম না করে অর্ধেকেরও বেশি মিশে যাচ্ছে হাতিরঝিলের পানিতে। 
হাতিরঝিল প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীর মাঝখানে একটি নয়নাভিরাম স্থান তৈরি করা, যেখানে থাকবে পরিষ্কার টলটলে পানি। এর চার দিকে থাকবে চলাচলের রাস্তা। মানুষ কান্তি-শ্রান্তি দূর করতে এখানে এসে টলটলে পানি থেকে উঠে আসা মৃদুমন্দ বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে এবং ভ্রমণ শেষে পূর্ণ আনন্দ ও জীবনী শক্তি নিয়ে ফিরে যাবেন ঘরে এবং নিজের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দেবেন। হাতিরঝিল তৈরির উদ্দেশ্যটা অনেকটা এমনই ছিল। 

কিন্তু হাতিরঝিলের বর্তমান অবস্থা দেখে ভ্রমণপিপাসুরা হতাশ। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরু থেকে হাতিরঝিলে কাজ শুরু হলেও শেষ হয় বর্তমান সরকারের প্রথম দিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প উদ্বোধন করে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। ভ্রমণপিপাসু মোস্তফা হারুন (৬০) গত বুধবার বলছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যদি হাতিরঝিলের পানিটা দেখেন তাহলে তিনি বেশ হতাশ হবেন।’

হাতিরঝিলে নোংরা পানি যে কেবল হোটেল সোনারগাঁওয়ের পয়েন্ট থেকে আসছে, তা নয়। নোংরা পানি ঢুকছে অন্যান্য পয়েন্ট থেকেও। এর মধ্যে অন্যতম হলো নিকেতনের দিক থেকে লেকটা মিশেছে হাতিরঝিলে। সে লেক থেকে ভয়াবহ রকমের নোংরা, পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি এসে মিশছে। এমনকি গুলশান থেকে লেকের মাধ্যমে যে পানি আসছে তাও অনেকটা দুর্গন্ধময়, ময়লা ও কালো।

নোংরা দুর্গন্ধ ছোট শিশুদের কাছে বেশ ধরা পড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে বনশ্রীর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী নুসাইবা জান্নাহ ফারিহা (১০) ওয়াটার ট্যাক্সিতে যেতে যেতে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করছিল, টেলিভিশনে কী সুন্দর দেখি হাতিরঝিলকে! কিন্তু এখন দেখছি এটি খুবই নোংরা। চার দিকে থেকে এত দুর্গন্ধ আসছে কেন?

নোংরা পানির দুর্গন্ধ যে ওয়াটার ট্যাক্সি চড়লেই পাওয়া যাচ্ছে, তা নয়। এর দুই পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটলেও পাওয়া যাচ্ছে। ভ্রমণপিপাসুদের অসতর্কতায়ও হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তারা খাবারের অবশিষ্টাংশ ফেলে দিচ্ছেন পানিতে। পানির বোতল, কোমল পানীয়ের বোতল, চিপসের প্যাকেট সবই ফেলে দিচ্ছেন রাস্তার নিচে। অবশেষে বৃষ্টিতে অথবা প্রাকৃতিক নিয়মে গড়িয়ে গড়িয়ে তা পানিতে গিয়ে পড়ছে অথচ কিছুদূর পরপরই রাজউকের বসানো অনেক আবর্জনা রাখার (বিন) পাত্র রয়েছে। 

নোংরা পানি অবশ্য রামপুরা ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে কিছুটা হালকা হয়ে পানির রঙ পরিষ্কার হচ্ছে আবার দুর্গন্ধও কিছুটা কমছে। হাতিরঝিলে নিয়মিত ভ্রমণকারী মোস্তফা হারুন জানান, দুর্গন্ধযুক্ত পানি কিভাবে হাতিরঝিলে এসে পড়ছে তা বের করে তা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পানি শুকিয়ে গেলে এ পানি আরো দুর্গন্ধযুক্ত হবে। রাজধানীর হৃৎপিণ্ডের খ্যাতি হারিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার আগেই এর বিহিত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মোস্তফা হারুনের মতো ভ্রমণপিপাসুরা।


আরো সংবাদ



premium cement