১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেপরোয়া জবি ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ নেই নেতাদের

বেপরোয়া জবি ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ নেই নেতাদের - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণীর নেতাকর্মীর উচ্ছৃঙ্খলতা যেন থামছেই না। কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হয়ে উঠেছে। প্রতিপরে ওপর হামলা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য, এমনকি ছাত্রী হয়রানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ারও অভিযোগ উঠেছে অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। শুধু গত ১ মাসেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায় ১৫টি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় গত এক মাসে সাংবাদিকসহ আহত হন ২৭ জন। বেশির ভাগই ঘটেছে আধিপত্য বিস্তার, অন্তঃকোন্দল ও মেয়েঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে। ছাত্রলীগ নেতারা অভিযুক্ত হচ্ছেন প্রশ্নফাঁসের মতো কেলেঙ্কারিতেও। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বহিষ্কারের মতো ঘটনাও ঘটে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও ছাত্রলীগ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাও বিরক্ত। অপরাধীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকরী পদপে না নেয়া ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের সঠিক ব্যবস্থা না করায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা।

ছাত্রলীগ সূত্রে, ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নাল আবেদীন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য জবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার ছয় মাসের মাথায় কেন্দ্রীয় কমিটি জবি ছাত্রলীগের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। বিগত সময়ে ক্যাম্পাসে মারামারি, শিক্ষক-সাংবাদিক লাঞ্ছনা, বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের তিন মাসের মাথায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

গত বুধবার ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার পথে ইংরেজি বিভাগ ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমনকে বেধড়ক মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের ১৩তম ব্যাচের কিছু জুনিয়র কর্মী। আহত সুমন কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বিভাগীয় এক শিক্ষকের পক্ষে আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। হামলাকারীরা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মী।

গত ২৭ জুলাই মেয়েঘটিত প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে সভাপতি গ্রুপের এক ছেলেকে মারধর করে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের জুনিয়র কর্মীরা। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে বিকেল ৪টার দিকে সভাপতি গ্রুপের কর্মী শরীফুল ইসলাম শিমুল (১১তম ব্যাচ) ও তার বন্ধু দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা নাইমুর রহমান নাবিল ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরার সময় বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের কর্মী আশিকুর রহমান আশিক (১২তম ব্যাচ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ), কৌণিক (১২তম ব্যাচ) তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী আশিকুর রহমান আশিক সাংবাদিক নাবিলকে গুরুতর আহত করেন।

গত ৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে প্রতিগতিশীল ছাত্রজোট ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিােভ মিছিলে ছাত্রলীগের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় জবি ছাত্রলীগের কর্মী রিয়াজের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ অংশ নেয়। এ সময় সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকের ওপরও তারা হামলা চালায়। হামলায় সাংবাদিকসহ ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত হন দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, জবি সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি বণিক বার্তার জবি প্রতিনিধি সামি সরকার, ইত্তেফাকের জবি সংবাদদাতা আহসান জোবায়ের ও ডেইলি সানের সাংবাদিক কবির হোসেন, আমার সংবাদের আসলাম অর্ক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি কিশোর কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বি, সাংগঠনিক সম্পাদক সমিত ভৌমিক, দফতর সম্পাদক অনিমেষ রায়, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আও সদস্য জাহিন।
এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন ছাত্রলীগ কর্মী হাবুল হোসেন পরাগ ও নূরে আলম সিদ্দিকি।

গত ১৮ জুলাই শিাবর্ষের ভর্তি পরীায় জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততার সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিার্থী ও জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব বিন বারীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১২ মার্চ বাসে বসাকে কেন্দ্র করে বাসে অবস্থানরত শিার্থীদের বেধড়ক মারধর, ঘটনা পর্যবেণে যাওয়া শিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা এবং এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী অর্ণব। কর্মকর্তা মারধরের ঘটনায় স্থায়ী বহিষ্কার হন রাজিব বিশ্বাস, সিনিয়র শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়ে বহিষ্কার হন সিয়াম ও সাংবাদিক মারধরের আরেক ঘটনায় সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারাদেশ পান আরেক ছাত্রলীগ কর্মী শাকিল।

কখনো সংগঠন আবার কখনো প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করেও বেপরোয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল তাদের কর্মীদের শান্ত রাখার অঙ্গীকার করলেও বরাবরই তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

সিনিয়র এক নেতা বলেন, বর্তমান নেতাদের সাংগঠনিক প্রজ্ঞা না থাকা, ক্যাম্পাস পর্যায়ে রাজনীতিতে অভিজ্ঞতার অভাব, পূর্ববর্তী বিভিন্ন গ্রুপের আধিপত্য থাকা ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সাবেক নেতাদের অবমূল্যায়ন করার কারণে মাঠপর্যায়ে কর্তৃত্ব হারাচ্ছেন বর্তমান নেতারা।


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল