২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেঙ্গুইনের সংখ্যা কমছে কেন

প্রতি বছর আশঙ্কাজনক হারে কমছে পেঙ্গুইনের সংখ্যা - ছবি : সংগ্রহ

তিন দশকে বিশ্বে কিং পেঙ্গুইনদের সবচেয়ে বড় আবাসস্থানে তাদের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে। গত সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। 

কিং পেঙ্গুইন হলো পেঙ্গুইন প্রজাতির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। আয়তনের দিক থেকে অ্যাম্পেরার পেঙ্গুইনের পরেই কিং পেঙ্গুইন। এরা লম্বায় ৭০-১০০ সেমি এবং ওজন ১১ থেকে ১৬ কেজি হয়। দক্ষিণ আটল্যান্টিকে পাওয়া যায় এদের। কিং পেঙ্গুইন দক্ষিণ অ্যান্টার্কটিক দ্বীপপুঞ্জে অথবা উত্তর অ্যান্টার্কটিকায় প্রজনন করে। তারা কখনো বাসা বানায় না। তারা ডিম পাড়ার পর কখনো সেটাকে মাটিতে শুইয়ে রাখে আবার কখনো সেটিকে তাদের পায়ের ওপর ডানায় ঢেকে রেখে বহন করে। তাদের এ প্রক্রিয়াকে বলে ব্রড প্যাচ। বাচ্চা ফুটানোর দুই মাস সময়ের মধ্যে বাবা-মা পেঙ্গুইন পালা করে এক সপ্তাহ সময়ের জন্য সেটিকে তা দেয়। কিং পেঙ্গুইনদের মধ্যে দুইটি প্রজাতি রয়েছে। অ্যাপটেনোডাইস পেটেগনিকা পেটেগনিকাস নামের প্রজাতিটি বাস করে ফকল্যান্ড ও দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপে। অন্য দিকে অ্যাপটেনোডাইস পেটেগনিকা হ্যালি ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করে।

শেষবার যখন বিজ্ঞানীরা ফ্রান্সের অধিকৃত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইয়েল অক্স কোচনে পা রেখেছিলেন, তখন তারা সেখানে ২০ লাখ পেঙ্গুইনের দেখা পেয়েছিলেন। কিং পেঙ্গুইনদের এই কলোনিটি আফ্রিকা ও অ্যান্টার্কটিকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। তবে সম্প্রতি তোলা স্যাটেলাইট ইমেজ ও হেলিকপ্টার থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, পেঙ্গুইনের সংখ্যায় ধস নেমেছে।

অ্যান্টার্কটিক সায়েন্সে প্রকাশিত সেই রিপোর্টে বলা হয়, সেখানে মাত্র দুই লাখ পেঙ্গুইন অবশিষ্ট রয়েছে। কিং পেঙ্গুইনরা এ দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দা। প্রাপ্তবয়স্করা মাঝে মধ্যে খাদ্যের জন্য সাগরে যায়, কিন্তু তারা কখনো স্থানান্তরিত হয় না। কিন্তু ইয়েল অক্স কোচন দ্বীপটি কেন পেঙ্গুইনশূন্য হয়ে উঠছে? তার রহস্য কী? ফ্রান্সের সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজের পরিবেশবিদ এবং লেখক হেনরি উইমিস্ক্রিস বলেন, এটি পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এখানের কলোনিতে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কিং পেঙ্গুইন বসবাস করত। উইমিস্ক্রিস ১৯৮২ সালে প্রথম এ কলোনির ওপর দৃষ্টিপাত করেন। 

উইমিস্ক্রিস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ অংশে একটি এল নিনোর সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রভাবে সেখান থেকে মাছ ও স্কুইড দক্ষিণে সরে গিয়েছিল, ফলে পেঙ্গুইনগুলো খাদ্য সমস্যা পতিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পেঙ্গুইনদের সংখ্যা কমে যায় এবং তাদের প্রজনন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাধারণত প্রতি দুই থেকে সাত বছরে এল নিনো একবার আঘাত করে। উইমিস্ক্রিস ও তার সহযোগীদের গবেষণা অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে ইয়েল অক্স কোচন পেঙ্গুইনদের বাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। আর এই কিং পেঙ্গুইনদের জন্য স্থানান্তরও কোনো বিকল্প নয়, কারণ তাদের কাছাকাছি পরিসীমার মধ্যে এ রকম অনুকূল পরিবেশ বা দ্বীপ আর নেই। 

গবেষকেরা বলছেন, এ কলোনিতে তাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ার পেছনে তাদের আধিক্যেরও ভূমিকা রয়েছে। সংখ্যা অধিক হারে বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে তাদের মধ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা দ্রুত ও কঠোরভাবে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। তবে এই ঘনত্বের বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া তাদের সংখ্যা এভাবে হ্রাস পাওয়ার পেছনে অ্যাভিয়ান কলেরাকেও দায়ী করা হচ্ছে। ম্যারিয়ন ও আমস্টারডাম দ্বীপের কাছে কিং পেঙ্গুইনসহ বেশ কিছু সামুদ্রিক পাখিও এতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে সুখের খবর হচ্ছে, এখনো কিং পেঙ্গুইনদের সংখ্যা সর্বোচ্চপর্যায়ের আতঙ্কের জায়গায় নেই। অবশ্য এ রিপোর্টটি পুনঃমূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। 


আরো সংবাদ



premium cement