২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মৃত সন্তানকে তিন দিন আগলে রাখলো তিমি মা

সন্তানকে মুখে নিয়ে সাঁতরে যাচ্ছে মা তিমি - সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৭টা মাস, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল সে। কবে মা হবে, কবে সন্তানের মুখ দেখবে! কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না মা তিমির।

মঙ্গলবার সকালে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়ার কাছে সন্তানের জন্ম দেয় ‘জে৩৫’ নামে বিপন্নপ্রায় ‘কিলার হোয়েল’টি। মেয়ে হয়েছিল। গত তিন বছরে ওই তিমি পরিবারে প্রথম জীবিত সন্তানের জন্ম দিয়েছিল জে৩৫ (সংরক্ষণবিদরা তাই বলছেন)। তাই আনন্দের সীমা ছিল না। জে৩৫ ও তার সদ্যোজাত সন্তানকে ঘিরে ছিল পরিবারের সবাই। সব কিছু একদম ঠিক ছিল।

 

কিন্তু হঠাৎই নড়াচড়া বন্ধ করে দেয় সদ্যেজাত তিমিটি। একজন মা-কে সব চেয়ে ভয়াবহ যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে, সেটাই হয়েছিল। তৈরি ছিল না জে৩৫। মাত্র কয়েকটা ঘণ্টার চোখের সামনে মারা গিয়েছিল তার সদ্যোজাত সন্তান। কিচ্ছু করতে পারেনি সে।

‘সেন্টার ফর হোয়েল রিসার্চ অন স্যান জুয়ান আইল্যান্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা বিজ্ঞানী কেন ব্যালকোম্ব বলেন, ‘‘এরপরের দৃশ্যগুলো চোখে দেখা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেছে, সন্তানকে মুখে নিয়ে সাঁতরে যাচ্ছে জে৩৫।’’ ঘণ্টার হিসেব ক্রমে দিন ছুঁয়েছে। বৃহস্পতিবারও দেখা গেছে, মৃত সন্তানকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করছে না সে। ব্যালকোম্বের কথায়, ‘‘এমন নয় যে এ ঘটনা আগে দেখা যায়নি। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়, এই প্রথম দেখলাম।’’

 

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার থেকে তিন দিনে নিজের দলের সাথে ভ্যাঙ্কুভার গিয়ে, সেখান থেকে স্যান জুয়ান আইল্যান্ড ফিরেছে জে৩৫। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ মাইল সাঁতরে পার করেছে। আর গোটা সময়টা তার সন্তানের ৪০০ পাউন্ডের দেহটা ভাসিয়ে রেখেছে সে।

‘‘ব্যাপারটা সামলানো জে৩৫-এর জন্য খুব একটা সহজ নয়,’’ বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন সেন্টার ফর কনজারভেশন বায়োলজি’র তিমি বিশেষজ্ঞ ডেবরা গিলস।

বৃহস্পতিবার একটি নৌকা থেকে জে৩৫-এর উপর নজর রাখছিলেন ডেবরা। তার কথায়, ‘‘সন্তানের মৃতদেহ যতবার ডুবে যাচ্ছে, ওকে দেহটা তুলে আনতে হচ্ছে। মাথার উপর সন্তানের দেহটা নিয়ে সাঁতরে চলেছে সে। এই ভাবে তিন-তিনটে দিন! সন্তান হারানোর শোক সব প্রাণীদেরই ক্ষেত্রেই একই রকম।’’

 

আরো পড়ুন : সন্তানকে বাঁচাতে বন্য কুকুরদের সাথে একাই লড়াই করলো মা সিংহ

মা, সন্তানের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে পারেন। পাশাপাশি সন্তানকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তেমনটাই করলো এক সাহসী মা সিংহ। সন্তানদের বাঁচাতে একাই যুদ্ধ চালিয়ে গেল সে।

হ্যাঁ, যুদ্ধই বলা চলে। যেভাবে বন্য কুকুরদের দলের সাথে লড়াই করেছে সে, তাতে হতভম্ব না হয়ে পারা যায় না।

ঘটনাটি ঘটেছে আফ্রিকার বতসোয়ানার মোরেমি গেম রিজার্ভে। অন্য দিনের মতো সেখানে গাড়ি নিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিরেন শালিন ফারনান্দো। হঠাৎ তিনি দেখতে পান, এক মা সিংহকে ঘিরে আছে এক দল বন্য কুকুর। তাদের চোখ সিংহীর সন্তানদের ওপর। লোলুপ দৃষ্টি সিংহ শাবকদের ছিড়ে কুড়ে খাওয়ার।

কিন্তু সেই দৃষ্টি মা সিংহীকে দুবর্ল নয়, বরঞ্চ সাহস বাড়িয়ে দেয়। সন্তানদের বাঁচাতে সর্বশক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ধীরে ধীরে বন্য কুকুরগুলো মা সিংহকে ঘিরে ধরে। তেড়ে যায় সিংহী। যুদ্ধের মাঠে তাণ্ডব চালায় একাই। ঘুরে ঘুরে বন্য কুকুরদের শায়েস্তা করতে থাকে। ততক্ষণে সিংহ শাবক দেয় ছুট। আর মা একাই লড়াই চালিয়ে যায়।

এক পর্যায়ে কামড় বসায় এক কুকুরের ঘাড়ে। আছড়ে পাছড়ে নিস্তেজ করে ছাড়ে। তখনো বাকি কুকুরগুলো ঘিরে আছে, একের পর আক্রমণ করছে। কিন্তু সিংহী তাতেও দমে যাচ্ছে না। যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করেই যাচ্ছে।

এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা চলে যুদ্ধ। ফারনান্দো পুরো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন।

তার ভাষ্য, 'আমি পুরো ঘটনা দেখে যার পর নাই আশ্চর্য হয়েছি। কিভাবে মা সিংহ একাই লড়াই করে যাচ্ছে।'

তবে দুঃখের কথা হলো, বন্য কুকুরদের হাত থেকে সব সন্তানদের বাঁচাতে পারেনি মা। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছে।

ফারনান্দো জানান, এই ঘটনার পরদিন বেঁচে যাওয়া সিংহ শাবকটিকে শিকার করতে ঘুর ঘুর করছিল লড়াইয়ে আহত বন্য কুকুরের দল।


আরো সংবাদ



premium cement