১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাবধান! হৃদরোগের এই ওষুধ সেবনে ক্যান্সার হতে পারে

সাবধান! হৃদরোগের এই ওষুধ সেবনে ক্যান্সার হতে পারে - ছবি : সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট ফেইল্যুর ঠেকাতে এপিআই ‘ভালসারটান’ থেকে প্রস্তুতকৃত ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ভালসারটান থেকে প্রস্তুতকৃত ওষুধ সেবন করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) চীনে তৈরি একটি কোম্পানির ভালসারটানের সাথে পৃথক অন্য একটি উপাদান ‘এনডিএমএ’র অস্তিত্ব পেয়েছে। 

এফডিএ বলছে, ভালসারটান থেকে তৈরি হৃদরোগের ওষুধ সেবন করলে লিভার, ফুসফুস ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এফডিএর নির্দেশনা অনুসারে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ওষুধটি ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এফডিএ কেবল ওই চীনা কোম্পানির তৈরি এপিআই থেকে ওষুধটি থেকে ক্যান্সার হয় বলে জানিয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো শুধু কি চীনা একটি কোম্পানির ভালসারটান ব্যবহার করে? এর উত্তরে ওষুধ কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক ফার্মাসিস্ট নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বাংলাদেশে চীনের পাশাপাশি ভারতীয় কোম্পানির এপিআইও ব্যবহার হয়। কেউ কেউ হয়তো ভারতে উৎপাদিত ভালসারটান এপিআই থেকেও উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ তৈরি করে থাকতে পারে। অতএব সব কোম্পানির ভালসারটান বাজার থেকে তুলে নিতে হবে কি না ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে আগে বলতে হবে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত ২২ জুলাই বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে সভায় বাজার থেকে ভালসারটান তৈরি সব ওষুধ তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন এবং কেউ যেন এ উপাদানটি থেকে আর ওষুধ তৈরি না করে এবং ভোক্তারা যেন এ উপাদানটি থেকে তৈরি ওষুধ না কেনেন সে জন্য ওষুধ প্রশাসনকে জনসচেতনতা তৈরিও নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এফডিএ ভালসারটান থেকে তৈরি ওষুধের উৎপাদন ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়। এ ওষুধটি আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস সুইজারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কারখানায় তৈরি করে। এটি এ কোম্পানির গবেষণালব্ধ ওষুধ। এ কোম্পানি কেবল নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (এপিআই) উৎপাদন করে। তারা অন্য কোম্পানির কাছে তাদের কাঁচামাল বিক্রি করে না। তবে চীনা ও ভারতীয় কিছু কোম্পানি নোভারটিসের কাঁচামাল ‘কপি’ করে তৈরি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে। চীনাদের কপি করা কাঁচামাল ইউরোপ-আমেরিকার কিছু ওষুধ কোম্পানি ‘জেনেরিক’ নামে ভালসারটান থেকে হৃদরোগের ওষুধ বিক্রি করে আসছিল। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। 

নোভারটিস বাংলাদেশেও ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করছে। নোভারটিস গত মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, তাদের তৈরি ভালসারটানে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশে এ ওষুধ বাজারজাত করতে কোনো বাধাও নেই। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ভালসারটান দিয়ে বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি বিভিন্ন নামে বাজারজাত করছে। নোভারটিস ডায়োভান, কো-ডায়োভান, এক্সর্ফোজ ও এনট্রেসটো নামে বাজারে ছেড়েছে। ইনসেপ্টা ভালসারটিল প্লাস, অ্যামলোসোরটান, হেলথকেয়ার ডায়োসিস, কো-ডায়োসিস, ডায়োসিস প্লাস, এরিস্টোফার্মা অ্যারোভান, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল কার্ডিভাল-এভি, পপুলার অ্যামলোভান-ভিএস, স্কয়ার ক্যামোভাল, রেনেটা ভালজাইড, ওরিয়ন ভালসেট, জেনারেল ফার্মার আরনিচেন নামে বাজারজাত করছে। 

বাংলাদেশে অবশ্য ভালসারটান থেকে কপি করা যেসব ওষুধ বাজারজাত হচ্ছে সেখানে ওষুধটি নিরাপদ বলা হয়েছে। তবে তারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিছু কলা লিখেছে। একটি কোম্পানির ভালসারটান থেকে তৈরি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভালসারটান শরীরে সম্পূর্ণটাই সয়ে যায় এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিরল। তবে সাধারণভাবে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অল্পবিস্তর হতে পারে তা হলোÑ মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, অবসাদগ্রস্ততা, পেট ব্যথা, কফ, ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে। এ ওষুধটি সেবন করলে রোগীর রক্তে পটাসিয়াম লেবেল বেড়ে যেতে পারে (হাইপারকেলামিয়া), রেনাল ফাঙ্কশান হ্রাস পায়, অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ব্যাক পেইন, ত্বকে র‌্যাশ হতে পারে, নিদ্রাহীনতা, অস্বাভাবিক রকমের নিম্ন রক্তচাপ (লো-ব্লাড প্রেশার), শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ইরেক্টাইল সমস্যার মতো কারণ ঘটতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement