২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিনিত, নিষাদদের দোয়া অনুষ্ঠান, হুমায়ূনের মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজন

নিনিত, নিষাদদের দোয়া অনুষ্ঠান, হুমায়ূনের মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজন - ছবি : সংগৃহীত

জনপ্রিয় কথা সাহিত্যক হুমায়ূন আহমেদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভক্ত ও পরিবারের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রকাশকরাও লিচু তলায় হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল থেকে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও এতিমদের খাবার বিতরণসহ দিনব্যাপি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়। বৃহষ্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই ছেলে নিনিত, নিষাদ, শ্বশুর মোহাম্মদ আলী তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া হিমু পরিবহন, চেতনায় হুমায়ূন হৃদয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে প্রকাশনার এলাকা বাংলাবাজার, বাংলা একাডেমীর চত্বর এমন উল্লেখযোগ্য স্থানে হুমায়ূন আহমেদের নামে একটি চত্বর হবে এরকম স্বপ্ন আমরা দেখি। এটি বাস্তবে হলেও দেখব, না হলেও দেখব।এসময় তিনি হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনে দেশের গুণীজন ও বুদ্ধিজীবিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। এছাড়া হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনের একটি উদ্যোগ অনেকটা অগ্রসর হয়েছে বলে তিনি জানান।

তাকে শ্রদ্ধা জানানোর পর নুহাশ পল্লী চত্বরে পবিত্র কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়। ভক্ত অনুরাগী ছাড়াও আশপাশের মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান জননন্দিত কথাশিল্পী, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১১ সালে তার অন্ত্রে ক্যানসার ধরা পড়ে। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাশ ঢাকায় এনে ২৪ জুলাই গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে তার প্রিয় নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

আরো পড়ুন :

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, খ্যাতিমান কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। 

দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে নূহাশ পল্লীতে বিস্তারিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রকাশকরা নূহাশ পল্লীতে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে’ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া হুমায়ূনভক্তরা তার কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন। 

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফয়েজুর রহমান। মা আয়েশা ফয়েজ। স্কুলজীবনে হুমায়ূন আহমেদকে বাবার চাকরিস্থল কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বাস করতে হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনেই তার লেখালেখি শুরু। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শংখনীল কারাগার’। এই দু’টি বই প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন। সেই থেকে জীবিতকালে তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়। 
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজধারাকে প্রাধান্য দেন। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাকে পথিকৃৎ হিসেবে মূল্যায়ন করেন সমোলোচকরা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কয়েকটি নাটক, চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত। 

হুমায়ূন আহমেদ শিক্ষকতায় ছিলেন দীর্ঘ দিন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ূন আহমেদ গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নূহাশ পল্লী’।
হুমায়ূন আহমেদের ১১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ। তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে, জ্যো¯œা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, কিশোর সমগ্র, হিমুর আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হিমুর বাবার কথামালা, আজ হিমুর বিয়ে, হিমু রিমান্ডে, মিছির আলীর চশমা, আমিই মিছির আলী, দিঘির জলে কার ছায়া গো, কিছু শৈশব, হুমায়ূন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস, আগুনের পরশমণি, পাপ ৭১, শ্রাবণ মেঘের দিন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে শংখনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও শ্যামল ছায়া। সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ বহু পুরস্কার লাভ করেন।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী দিনটি উপলক্ষে আজ গাজীপুরের পিরুজালী এলাকার নূহাশ পল্লীতে কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। নূহাশ পল্লীর আশপাশের মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্র, পরিবারের সদস্য এবং হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন লেখকসহ প্রায় ৬ শ’ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে।

নূহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নূহাশ পল্লীতে কুরআন তেলাওয়াত করবে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় শরিক হবে। এ দিনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বৃহস্পতিবার সকালে নূহাশ পল্লীতে পৌঁছাবেন। এদিনে কর্মসূচিতে অংশ নিতে হিমু পরিবহনের কমপক্ষে ৬০ সদস্যের একটি দল নূহাশ পল্লীতে আসবে।

ইতোমধ্যে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী নূহাশ পল্লীতে আসছেন। ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল আরো জানান, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় হুমায়ূন আহমেদের হাতেগড়া শিাপ্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠেও অনুরূপ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement