২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাইকেল চালিয়ে হজে যাচ্ছেন তারা

মেসিডোনিয়ার সেনাদ ইদ্রিস ও ইমাম আমির আসলানি - ছবি : সংগ্রহ

বয়স তার ৫৮, এই বয়সে যানবাহনে দীর্ঘ যাত্রাই যখন কঠিন হয়ে পড়ে, সে সময় আফ্রিকার দেশ মরক্কো থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে হজ করতে যাচ্ছেন মোহাম্মাদ রুবুহাত। পবিত্র ইবাদত হজ পালন, আর মক্কা-মদিনার দর্শন লাভের আকাঙ্ক্ষা তাকে অদম্য করে তুলেছে কঠিন এই মিশনের পথে। অন্যদিকে প্রায় একই সাথে ইউরোপের দেশ মেসিডোনিয়ার দুই যুবক সাইকেলে চড়ে হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে এই দুই বন্ধু পালন করবেন এবারের হজ।

গত ১ এপ্রিল প্রিয় বাইসাইকেলটি নিয়ে মরক্কো থেকে যাত্রা শুরু করেছেন রুবুহাত। প্রায় চার মাস লাগবে তার এই যাত্রায়। আবার ফিরবেনও চার মাসের পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে। উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোর উত্তরাঞ্চলীয় শহর মেকনেস থেকে যাত্রা শুরু করে মৌরিতানিয়া, মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, শাদ হয়ে তিনি পৌছেছেন সুদানের রাজধানী খার্তুমে। সেখানে আনাদোলু বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন তার এই যাত্রার কথা। হজ পালনের পাশাপাশি আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে দিয়ে যাত্রার সময় তিনি সেখানে ছড়িয়ে দিয়েছেন শান্তির বার্তা।

খার্তুম থেকে মোহাম্মাদ রুবুহাত যাবেন লোহিত সাগরে অবস্থিত সুদানের সুকিন দ্বীপে। সেখান থেকে লোহিত সাগর পাড়ি দিলেই অপর পাড়ে অবস্থিত পবিত্র নগরী মক্কা। জাহাজে করে এই পথটুকু পাড়ি দিবেন তিনি।

দীর্ঘ এই যাত্রায় রুবুহাত প্রতিদিন পাড়ি দিয়েছন ১২০ কিলোমিটার পথ। পথে অনেক দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় তাকে মুখোমুখী হতে হয়েছে বিপজ্জনক পরিস্থিতির। কোথাও পড়েছেন চিতাবাঘ, হায়েনা, হাতির মতো বন্য প্রাণীর কবলে। তবে নিরাপদেই তিনি সেসব পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেয়েছেন।

তুর্কি সরকারের উদ্যোগে সম্প্রতি সুকিন দ্বীপটিতে আফ্রিকার হাজিদের মক্কা যাত্রার সুবিধার জন্য ব্যয় বহুল প্রকল্প নেয়া হয়েছে। রুবুহাত এজন্য ধন্যবাদ দিতে ভুল করেননি তুরস্ককে। রুবুহাত জানান, তার পরবর্তী পরিকল্পনা মরক্কো থেকে সাইকেলে ফিলিস্তিন যাওয়া। নির্যাতিত জনপদটির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টিতে তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে চান।

মেসিডোনিয়ার আইনজীবী সেনাদ ইদ্রিস ও ইমাম আমির আসলানি উত্তর মেসিডোনিয়ার টেটোভো শহর থেকে তাদের যাত্রা শুরু করে ইতোমধ্যেই পৌছেছেন তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে। পথে তারা পাড়ি দিয়েছেন আলবেনিয়া ও গ্রিস। আরো অন্তত ৪০-৪৫ দিন লাগবে তাদের মক্কায় পৌছতে। তিনটি মহাদেশ ও ছয়টি দেশ পাড়ি দিয়ে তারা পৌছবেন পবিত্র মক্কা নগরীতে। তুরস্কের পর তারা ফেরিতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে পৌছবেন মিসরে। সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের সড়ক পথ নিরাপদ না হওয়াতেই তারা এই পথ বেছে নিয়েছেন। মিসর থেকে জর্দান হয়ে ঢুকবেন সৌদি আরবে। মসজিদুল হারামের দর্শন পেয়েই অবশেষে থামতে চান তারা।

মরক্কো থেকে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌছতে হবে মক্কায়

 

ইদ্রিস জানান, এই উদ্যোগ নেয়ার পেছনে তাদের একটি উদ্দেশ্য ছিলো নবী মোহাম্মদ (সা.) ও তার পরবর্তী সময়ের মানুষদের হজ করার স্মৃতি স্মরণ করা। সে সময় হজ করার জন্য কোন উন্নত যানবাহন ছিলো না, পায়ে হেঁটে হজে যেতে হতো মুসলিমদের। দুই বছর আগ থেকে তারা এই সফরের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ইদ্রিস জানান, মেসিডোনিয়ার অনেক মুসলিম ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের ব্যাপক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এই দুর্গম যাত্রার পথে।


আরো সংবাদ



premium cement