২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মুসলিম উম্মাহর দুই প্রিয় নেতা এরদোগান ও আনোয়ার ইব্রাহিমের সাক্ষাৎ

মুসলিম উম্মাহর দুই প্রিয় নেতা এরদোগান ও আনোয়ার ইব্রাহিমের সাক্ষাৎ - সংগৃহীত

তুরস্কে সফররত মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগানের সাথে সাক্ষাত করেছেন। তিনি এরদোগানকে সাহসী নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বিশ্ব শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার হিম্মতের জন্য প্রশংসা করেছেন। তুরস্কের আগাম নির্বাচনে এরদোগানকে সমর্থন করেছেন এবং তার বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম তুরস্কে সফরে যাবার পূর্বে বলেছিলেন, আমি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য তুরস্কে যাচ্ছি, যিনি আমার একজন বন্ধুও এবং পরে সৌদি আরব সহ অন্যান্য এশিয়ান দেশ সফর করব।

আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমার অবস্থান এখন মালয়েশিয়ার নাগরিক হিসাবে। আমার কোনো পদ নেই, আমি এখানে মাহাথিরকে সমর্থন জানাতে আছি এবং আশা করি তিনি তার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করবেন। মন্ত্রিপরিষদে পাকাতান হারাপানের অন্যান্য নেতারা যাতে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, সেজন্য তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সময় হলেই, আমি একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। কিন্তু এখন আমি এটি নিয়ে ভাবছি না। আমি ড. মাহাথিরের ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করব এবং এটা কিছুটা সময়ের ব্যাপার। তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পরেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করব।

ইতোমধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের জনপ্রিয়তা দেশের সীমানা ছাড়িয়েছে। দিনদিন জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তার দল একেপি, তার সামাজিকতা, মানুষকে আপন করে নেয়ার ক্ষমতা। তার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তিনি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেন। এগুলো আসে তার অন্তর থেকে। তিনি হলেন নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি, এর আগের শাসকরা যাদেরকে উপেক্ষা করেছেন। এরদোগান সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে তুরস্ককেই শুধু নেতৃত্ব দিচ্ছেন না, মুসলিম বিশ্বের জন্যও একটা ‘ইমেজ’ সৃষ্টি করেছেন।

এরদোগান নিজেকে ‘জনগণের একজন’ বলে মনে করেন এবং তার কাজেকর্মেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা কুক্ষিগত করা উঁচু শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে একে পার্টি। আগে রাষ্ট্রযন্ত্রের সবগুলো অঙ্গের কার্যক্রমই ছিল জনগণবিমুখ। কিন্তু এখনকার প্রশাসন জনগণের প্রশাসন।’

ইমাম হাতিব স্কুলে এরদোগানের শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষক সেমরা আজার জানান, এরদোগান নেতা হয়েই জন্মেছিল। সে ক্লাসের সভাপতি (শ্রেণি প্রতিনিধি) ছিল। খেলাধুলা করত এবং খেলাধুলায় সফল হতো। বন্ধুদের সাথে তার খুবই ভালো সজনপ্রিয়তার ম্পর্ক ছিল, বড়দেরকে সে অনেক সম্মান করত।

স্কুলে কুরআন তেলায়াত, আযান প্রতিযোগিতা এবং কবিতা আবৃত্তিতে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বি। ১৯৭৩ সালে কবিতা আবৃত্তিতে পুরো তুরস্কে প্রথম হয়েছিলেন, ১৯৭৪ সালে কলেজ লেভেলের প্রতিযোগিতায় সারাদেশে কবিতা আবৃত্তিতে প্রথম হন।

এরদোগানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। ছুটির দিনগুলোতে তিনি বাজারে বেরিয়ে পড়তেন। সিমিট (রুটি), পানি, লেবু বিক্রি করতেন। এখান থেকে যে অর্থ আসত, তা দিয়ে পরিবারকে সহায়তার পাশাপাশি স্কুলের বেতন পরিশোধ করতেন। ব্যক্তিগত পাঠাগারের জন্য বই পড়তেন। কলেজ জীবনে পা রাখার আগেই তৈরি করে পেলেন মোটামুটি বড়সড় একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার।

আর আনোয়ারের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেটা ১৯৬০ সাল৷ তখন তরুণ ছাত্র নেতা ইব্রাহিম ‘মুসলিম ইউথ মুভমেন্ট অফ মালয়েশিয়া' (এবিআইএম) গঠন করেছিলেন৷ ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইব্রাহিম৷ সেসময় তিনি সুদক্ষ বাগ্মিতায় গ্রামীণ জীবনের সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন৷ এছাড়া তৎকালীন শাসক বারিসান ন্যাশানালের সঙ্গে ইউনাইটেড মালয়েজ ন্যাশানাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) জোটেরও তীব্র সমালোচক ছিলেন তিনি৷

ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের পক্ষ থেকে ইউএমএও-তে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান তিনি৷ ১৯৮২ সালে সেই আমন্ত্রণ স্বীকার করেন ইব্রাহিম৷ এরপরই তাঁর উত্থান ঘটে৷ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে ১৯৯৮ সালে তিনি ‘এশিয়ান অফ দ্য ইয়ার'-এর শিরোপাও পান৷

ইব্রাহিমের রাজনৈতিক জীবন উত্থান-পতনে ভরা৷ ২০১৪ সালের ভোটে যখন তাঁর জয়ের সম্ভবনা উজ্জ্বল, ঠিক তখনই ধাক্কা খান আনওয়ার ইব্রাহিম৷ দশ বছর আগে স্ত্রীয়ের গাড়িচালকের সঙ্গে যৌন সংসর্গের যে অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, আদালতের সেই নির্দেশ পালটে যায়৷ ফিরে আসে পুরনো অভিযোগ৷ আবারো জেলে যেতে হয় ইব্রাহিমকে৷

এদিকে রাজনীতির পট পরিবর্তন হতে থাকে৷ নাজিবের প্রতি বিরক্ত মাহাথির জোট ছেড়ে নয়া দল গঠন করেন৷ যে দলের হয়ে তিনি ২২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে সে দলেরই প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতাচ্যুত করেন তিনি৷ ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘুচিয়ে প্রতিশ্রতি দেন, জনতা তাঁকে ক্ষমতায় ফেরালে ইব্রাহিমের মুক্তির উদ্যোগ নেবেন তিনি স্বয়ং৷ ৯মে ভোটে জেতার পর কথা রেখেছেন মহাথির৷ অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন আনওয়ার ইব্রাহিম৷

রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইব্রাহিম বলেন, ‘দেশে নতুন ভোর এসেছে৷ আমি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই৷ জনতা যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, আমি তা পূরণ করতে চাই৷'

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা নিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি মাহাথিরকে সমর্থন জোগাতে চাই যাতে তিনি সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারেন৷ এ জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার দরকার নেই৷'

রাজার কাছ থেকে ক্ষমালাভের পর ইব্রাহিম বলেন, ‘বন্দি থাকার সময় বোঝা যায় স্বাধীনতার গুরুত্ব কোথায়৷ কারও ক্ষেত্রে যেন এমনটা না হয়৷ এ সময়টা অনেকে আমার পাশে থেকেছেন৷ তবে এটা ঠিক যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মানুষকে কারারুদ্ধ করা আমাদের বন্ধ করতে হবে৷'

রাজনীতিতে নিজের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি কখনো লড়াই ছাড়িনি৷ আমি রাজনীতিতেই ছিলাম৷ শারীরিকভাবে না হলেও ছিলাম৷ মাহাথিরের শেষ বার্তাটি ছিল খুব স্পষ্ট, আবেদনময়৷ সেই বার্তা আমি শুনেছি৷ তাঁর পাশেই থেকেছি৷'

রাজনীতিতে ফেরার পর এবার বিদেশ সফরের পরিকল্পনা করেছেন ইব্রাহিম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি হার্ভার্ড ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে যাব৷ কয়েকটি মুসলিম দেশও সফর করব৷ আমাকে এটা প্রচার করতে হবে যে, যুক্তি ও সহিষ্ণুতাই ইসলামের পথ৷ এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করা যাবে৷''

দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ইব্রাহিম জানান, ‘জনতার প্রতি অন্যায়, অপরাধ, চরম দুর্নীতি এ দেশের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এর জবাব তাঁকে দিতেই হবে৷ আমি অবশ্য তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি৷ কারণ আমি এগিয়ে যেতে চাই৷ নাজিবের বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ নেই৷'

মাহাথিরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার ব্যাপারে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার লক্ষ্য দেশের মঙ্গল৷ মাহাথির আমার মুক্তির জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন৷ সংস্কারের লক্ষ্যেও তিনি অবিচল৷ আমার তাঁর প্রতি ক্ষোভ থাকবে কেন?'

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল