২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইসরাইলকে নির্দোষ প্রমাণে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের চেষ্টা রুখে দিলো কুয়েত

ইসরাইলকে নির্দোষ প্রমাণে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের চেষ্টা রুখে দিলো কুয়েত - সংগৃহীত

জাতিসঙ্ঘের জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা গাজায় চলমান উত্তেজনার জন্য ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোকে দায়ী করে ইসরাইলকে অসহায় হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন।

দেশ দুটি ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলার নিন্দা জানানোর প্রস্তাব আনলেও কুয়েতের বিরোধিতার কারণে তা পাস হয়নি। কুয়েত বলেছে, দেশটির পক্ষ থেকে গাজার চলমান পরিস্থিতির জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে আলাদা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা গাজা উপত্যকাকে আরেকটি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জাতিসঙ্ঘ। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত নিকোলাই ম্লাদেনভ সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, গাজায় কারো পক্ষে আরেকটি যুদ্ধ সহ্য করা সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ওই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার অন্তত ৩০টি অবস্থানে ইসরাইলি বাহিনীবিমান হামলা চালানোর পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। তেল আবিব দাবি করছে, গাজা উপত্যকা থেকে একঝাঁক রকেট ও মর্টার হামলার পর তারা এ আগ্রাসন চালিয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া দিলাত্রে বলেন, গাজা সঙ্কটের ব্যাপারে এ পরিষদ কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জাতিসঙ্ঘের বদনাম হবে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গাজা অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে এবং এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করা যাবে না।

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও জিহাদ আন্দোলন ইসরাইলে রকেট হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলেছে, গত কয়েক দিন ধরে গাজা উপত্যকায় তাদের অবস্থানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলার জবাবে তারা ওই প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।

বৈঠকে জাতিসঙ্ঘ নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর গাজা উপত্যকার ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানান।

সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা ও গুলিবর্ষণে অসংখ্য ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। তাদের যথাযথ চিকিৎসা সামগ্রী ও ডাক্তার না থাকায় যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়। আর সে শূন্যতা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে রেড ক্রস। এদিকে গাজায় মারাত্মক আহতদের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গাজায় দুটি সার্জিক্যাল টিম পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস (আইসিআরসি)।

৩০ মার্চ থেকে গাজার ইসরাইলি সীমান্তে ‘মার্চ অব রিটার্ন’বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ওই বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ওই দুটি টিম পাঠানোর পাশাপাশি গাজা ভূখণ্ডের প্রধান হাসপাতালে একটি সার্জিক্যাল ইউনিটও স্থাপন করা হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে রেড ক্রস।

 

ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিচ্ছিন্ন ওয়াশিংটন, ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা চায় কুয়েত
এএফপি

কুয়েত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মিশন মোতায়েনের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে। খসড়া প্রস্তাবটির ওপর এ সপ্তাহে ভোটাভুটি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কুয়েত ইউরোপীয়দের সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা করছে। কূটনীতিকরা বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে এই খসড়া প্রস্তাবটির ওপর বৃহস্পতিবার ভোটাভুটি হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে ভেটো দিতে পারে।

কুয়েত এখন আশা করছে যে, এই ভোটে তাদের প্রস্তাবের পক্ষে অনেক বেশি ভোট পড়বে। এর মধ্যদিয়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ওয়াশিংটন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। অস্থায়ী সদস্য কুয়েত পরিষদে আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে। খসড়া প্রস্তাবটিতে ওই অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মিশন মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। এতে অনুমোদন দেয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।

নতুন খসড়ায় গাজার বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তার জন্যে নিশ্চয়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে একটি আন্তর্জাতিক মিশন প্রতিষ্ঠাসহ ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষকে রক্ষায় ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গুতেরেসের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন দুই সদস্য রাষ্ট্র ফ্রান্স ও ব্রিটেন অভিযোগ করেছে, খসড়া প্রস্তাবটিতে সুরক্ষা মিশনের স্থান ও লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কিছু বলা হয়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, পদক্ষেপটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বমূলক। ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এই প্রস্তাবকে ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, গাজার ইসলামপন্থী শাসক হামাসকে সাহায্য করতেই প্রস্তাবটি সাজানো হয়েছে। 

ফ্রান্স থেকে বিধ্বংসী সমরাস্ত্র কিনছে কুয়েত
আইআরআইবি

ফ্রান্সের সাথে ২৫০ কোটি ইউরোর কয়েকটি সামরিক চুক্তি করেছে কুয়েত। গত বুধবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এ চুক্তি করা হয়েছে এবং কয়েকজন মন্ত্রী এতে সই করেছেন। 

এ চুক্তি অনুযায়ী এয়ারবাস কোম্পানির তৈরী ২৪টি কারাকাল বহুমুখী হলিকপ্টার ক্রয় করবে কুয়েত। যুদ্ধ ও দূরপাল্লার সেন মোতায়েনে ব্যবহারযোগ্য এ হেলিকপ্টারে আকা থেকে ভূমি এবং সাগরে নিপেযোগ্য পেণাস্ত্র রয়েছে। 

এ ছাড়া, পেণাস্ত্র ঠেকানোর মতো রাডারও আছে কারাকালের। ইউরোফাইটার কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে ২৮টি টাইফুন যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি গত মাসে করেছে কুয়েত। এ ছাড়া আরো চুক্তি অনুযায়ী কুয়েতকে ফরাসি হালকা সাঁজোয়া গাড়ি এবং পেট্রোল বোট সরবরাহ করবে ফ্রান্স। এ দিকে এর আগে যে আটটি পি৩৭ নৌযান কুয়েতকে দিয়েছে তাও সংস্কার করবে ফ্রান্স।

 

কাতার সঙ্কট নিরসনে কুয়েত সফরে এরদোগান

চলমান কাতার সঙ্কট নিরসনের লক্ষে সৌদি আরব থেকে কুয়েত পৌঁছেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। রোববার স্থানীয় সময় রাতে কুয়েত পৌঁছান তিনি।

তুর্কি সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু সংস্থা বলেছে, দার সালওয়া প্রাসাদে কুয়েতি আমিরের সাথে বৈঠক করেছেন এরদোগান। বৈঠক এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছে বলে জানান হলেও বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

কুয়েতের সরকারি সংবাদ সংস্থা কেইউএনএও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

কাতারের সাথে সৌদি নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনের আঞ্চলিক দেশগুলো সফর করছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।

জুনে 'সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয়া' এবং ইরানের সাথে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর।

এরপর দুই দফায় কাতারকে নানা রকম শর্ত দেয় আরব দেশগুলো, যা মানতে অস্বীকৃতি জানায় কাতার।

বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এ সফরের মাধ্যমে এরদোয়ানের পক্ষে এই বিরোধ নিরসনে ভূমিকা রাখার সুযোগ খুবই কম।

কেননা, তুরস্ক ইতোমধ্যেই কাতারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আবার একইসাথে দেশটি সৌদি আরবের বিপক্ষে অবস্থান নেবে না।

উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের ফলে দেশটিতে যেন খাদ্য সঙ্কট তৈরি না হয় সেই জন্য খাদ্যসামগ্রী পাঠায় তুরস্ক।

সেসময় দেশটির ওপর আরোপ করা অবরোধেরও কড়া সমালোচনা করেছিলেন এরদোয়ান।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাতারের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।

২০১৫ সালে সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দুই দেশ। এ ছাড়া কাতারে সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করেছে তুরস্ক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আরব বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দোহাকে অন্যতম মিত্র হিসেবে আঙ্কারার অবস্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

গত বছর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সেনা সদস্যদের একাংশের অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টার সময় প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।

অভ্যুত্থান চেষ্টার পর এরদোয়ানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাতারের বিশেষ বাহিনীর ১৫০ সদস্যের একটি ইউনিট তুরস্ক পাঠানো হয়েছিল বলেও জানা যায়।

তাছাড়া দুই দেশের সরকারের মধ্যে আদর্শিক ঐক্যও রয়েছে।

মিসরভিত্তিক ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে মনে করে না দুই দেশই।

আবার ইরানের প্রতিও দেশ দুটির দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম। দুই পক্ষই স্বীকার করে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তি হলো ইরান।

বিমানবন্দরে এরদোগানকে স্বাগত জানান কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমেদ আস-সাবাহ।


আরো সংবাদ



premium cement