২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইসরাইলের দখলের বিরুদ্ধে যা করতে যাচ্ছে আরব বিশ্ব

- ছবি : সংগৃহীত

অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক আগ্রহকে মাথায় রেখে আস্তে আস্তে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ৷ কিন্তু ইসরাইলের পশ্চিম তীর অধিগ্রহণকে কীভাবে দেখবে আরব বিশ্ব, সে বিষয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা৷

আগামী ১ জুলাই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ নিতে যাবেন বলে জানা গেছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই চাল সারা বিশ্বজুড়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷

ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা আরব লীগও জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে ধর্মীয় যুদ্ধের আঁচ৷ পাশাপাশি, জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ মে মাসে জার্মান সংবাদপত্র ডেয়ার স্পিগেলকে জানিয়েছেন যে ইসরাইল এই অধিগ্রহণের পথে অনড় থাকলে ব্যাপক গণ্ডগোল বাধতে পারে৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরব আমিরাতের দূত ইউসেফ আল-ওতাইবাও মনে করেন যে এই পদক্ষেপ আরব-ইসরাইল সম্পর্কের স্বাভাবিকত্বে আঘাত হানতে পারে৷

আংশিক অধিগ্রহণ
জেরুসালেমে মার্কিন কনসুল জেনারেল জেক ওয়ালেস এবিষয়ে বলেন, ‘‘ইসরাইল থেকে পাওয়া খবর থেকে আমরা জেনেছি যে আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ার জেরে সম্পূর্ণ অধিগ্রহণের বদলে আংশিক অধিগ্রহণের পথে হাঁটছে তারা৷’’

ওয়ালেসের মতে, আরব দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই এমন পদক্ষেপ৷ এই অধিগ্রহণ যদি ১৯৬৭ সালের তথাকথিত সীমান্ত মেনে করা হয়, যা আন্তর্জাতিক মতানুসারে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও ইসরাইলের সীমান্তও (সম্পাদকের নিজস্ব মতামত), তাহলে এর প্রত্যুত্তরে জর্ডান নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, জানান তিনি৷

এর আগে মার্কিন-ইসরাইলের অধিগ্রহণ বিষয়ক সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনের বন্ধু হিসেবে পরিচিত আরব দেশগুলোর বিরোধিতা নজরে আসলেও তা ছিল তুলনামূলকভাবে ক্ষীণ৷ এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইসরাইলের সাথে এই দেশগুলির ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুসম্পর্কের কথা৷

এবিষয়ে ইসরাইল ফোরাম ফর রিজিওনাল থিংকিঙের গবেষক এলিজাবেথ সুরকভ বলেন, ‘‘আরব দেশগুলো এতদিন ধরে যা করে এসেছে তারই ফসল এই দুর্বল প্রতিরোধ৷ ফিলিস্তিনিদের ওপর অসহনীয় সামরিক অত্যাচারের সময়েও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে লেগেছিলেন তারা৷’’

দ্বিধাবিভক্ত মধ্যপ্রাচ্য
জর্ডান ও অন্যান্য আরব দেশগুলো যদি ইসরাইলের এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় অনড় থাকে, তাহলে তা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে আরো কড়া হতে উৎসাহ দেবে৷ পাশাপাশি, গাজা অঞ্চলে হামাসের কার্যকলাপ বাড়িয়ে ইসরাইলকে কড়া বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে৷

কিন্তু ইসরাইলের তিন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক প্রধান ফরেন পলিসি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে আরব দেশগুলোর উদ্দেশ্যে সাবধানবাণী দিয়েছেন৷ তাদের মত, বিরোধিতার পথে থাকলে এরপর কূটনৈতিক রাস্তায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা কমবে৷

এর মধ্যে, বর্তমান অবস্থাকে আরো জটিলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়টি৷ কড়া পদক্ষেপের ফলে যদি বড় সংখ্যায় শরণার্থীরা জর্ডানের সীমান্তে এসে পৌঁছান, তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে বলে অনেকের ধারণা৷

জেক ওয়ালেসের বক্তব্য, ‘‘রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ওপর এখন একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখা ও অন্যদিকে নিজের দেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে উঠে আসা ফিলিস্তিনপন্থি আওয়াজের চাপ৷ এটাই হয়ত জর্ডানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণের সময়৷’’ ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement