১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

জেলে যেতে হচ্ছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে?

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত

ইসরাইলের অ্যাটর্নি জেনারেল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিনটি অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও তার উপর চাপ বাড়ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটাতে প্রেসিডেন্ট সক্রিয় হচ্ছেন।

অনেক বাধাবিপত্তি কাটিয়ে ইসরায়েলের ক্ষমতাকেন্দ্রের শীর্ষে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটানোর রেকর্ড ভেঙেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০০৯ সাল থেকে একটানা প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন তিনি। এর আগে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকেও তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। তাকে ছাড়া ইসরাইলের রাজনীতির কথা অনেকেই ভাবতে পারেন না।

কিন্তু ইদানীং নেতানিয়াহুর সময়টা ভালো যাচ্ছে না। এক বছরের মধ্যে দু-দুটি সাধারণ নির্বাচনের পরেও তিনি সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে তৃতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

এবার ইসরাইলের অ্যাটর্নি জেনারেল আভিখাই মান্ডেলব্লিট তার বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও আস্থাভঙ্গের আইনি অভিযোগ আনলেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ইসরাইলের কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে এবং সংসদের কাছে আইনি রক্ষাকবচ আদায় করতে না পারলে সহজে কারাদণ্ড এড়াতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও এই মুহূর্তে কোনো আইনি পথে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার আনা এমন মারাত্মক অভিযোগের মুখেও দমে যাবার বদলে আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখালেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। তার অভিযোগ, জেনে শুনে, চক্রান্ত করে সপরিবারে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে এবং মোক্ষম সময় বেছে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি এই পদক্ষেপকে এমনকি ‘অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা' হিসেবেও বর্ণনা করলেন। আবেগভরা এক টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

আপাতত ইসরাইলের রাজনৈতিক সংকট কাটাতে সংসদ দলমত নির্বিশেষে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য কোনো নাম প্রস্তাব করতে পারে। বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিন সংসদের উদ্দেশ্যে এমন পদক্ষেপ নেবার ডাক দেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সেই ব্যক্তি সরকারের রাশ ধরতে পারেন। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

ততদিনে আইনি প্রক্রিয়ার ফলে জেরবার না হলেও নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে নির্বাচনি প্রচারে হাতিয়ার করবে। সে ক্ষেত্রে তার লিকুদ দলও কতটা সংহতি দেখাবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র কার্যকর গণতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে-বিদেশে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহু যেভাবে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন এবং কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠছে।

নেতানিয়াহুর বর্তমান দুর্দশার কারণে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। বুধবারও ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সিরিয়ায় ইরানের স্থাপনার উপর হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, এমন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছাড়া সেই উদ্যোগ সমস্যার মুখে পড়তে পারে। ইহুদি বসতিকে বৈধতা দিয়ে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও শেষরক্ষা হবে কিনা, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement