১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরান ও তুরস্ক বিশ্বস্ততা ও বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়েছে যেভাবে

ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রতিবেশী ইরান ও তুরস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতেও এ দুই দেশের প্রভাবশালী ভূমিকা ও গুরুত্ব রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও তুরস্কের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়ক যৌথ কমিশনের নিয়মিত বৈঠক ছাড়াও পরিবহণ, কৃষি কার্যক্রম, দু'দেশের মধ্যে অর্থ লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং কার্যক্রমসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা ও সহযোগিতা আরো জোরদার হয়েছে। আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা ঠিক রাখার জন্য ইরান ও তুরস্কের শীর্ষ নেতাদের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে আর্থিক লেনদেন এবং অন্য দেশগুলোর সাথে ত্রিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তার এ দুই দেশসহ গোটা অঞ্চলের মানুষের জন্য কল্যাণকর। জ্বালানি, কৃষি, পর্যটক, পরিবহন খাত, রেল যোগাযোগ, সীমান্তে নিরাপত্তা, বেসরকারি খাতে পুঁজি বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আরো সহযোগিতা বিস্তারের সুযোগ রয়েছে ইরান ও তুরস্কের মধ্যে।

ইরানের প্রেসিডেন্টের দফতর প্রধান মাহমুদ ওয়ায়েজি তেহরানে তুরস্কের স্বাধীনতাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে অভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে যা কিনা আরো শক্তিশালী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কেবল দু'দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং আঞ্চলিক ঘটনাবলীতেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বজায় রয়েছে। সিরিয়া সংকট সমাধানে রাশিয়ার সহযোগিতায় ইরান ও তুরস্ক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। উগ্রবাদী আইএসের হাত থেকে সিরিয়াকে রক্ষায় এ তিন দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে।

এ ছাড়া, তুরস্কের গুলেনপন্থীরা নির্বাচিত এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করলে ইরানই প্রথম এরদোগানের প্রতি সমর্থ ঘোষণা করেছিল। আমেরিকা তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলে ইরান তার নিন্দা জানিয়েছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে বলেছিলেন নিষেধাজ্ঞা দেয়া আমেরিকার বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া, তুরস্কের অভ্যন্তরে যেসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে ইরান তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তুরস্ককে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অন্যদিকে, তুরস্ক সরকারও ইরানের দুর্দিনে তেহরানকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। আমেরিকা ইরানের তেল বিক্রি শূন্যে নামিয়ে এনে ইরানের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে তুরস্ক ইরানের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আর্থিক লেনদেন বজায় রেখেছে।

এ ছাড়া, ইরান ও তুরস্ক সিরিয়া সংকট সমাধানে চেষ্টার পাশাপাশি কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা দোহাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। অন্যদিকে, কুর্দিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের নামে ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাককে খণ্ডবিখণ্ড করার জন্য আমেরিকা যে ষড়যন্ত্র করেছিল ইরান ও তুরস্ক সম্মিলিতভাবে তা বানচাল করে দিয়েছে।

এ কারণে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের গত এক দশকের পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে ইরান ও তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে প্রমাণিত হয় এই দুই দেশ একসাথে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।

সূত্র : পার্সটুডে


আরো সংবাদ



premium cement