২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিক্ষোভ ঠেকাতে মিসরে কঠোর নিরাপত্তা

- সংগৃহীত

মিসরের একনায়ক প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগ দাবিতে গতকাল শুক্রবারও রাজধানী কায়রোসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক ধরপাকড় করে মিসরের কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতার করা হয় দুই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে। বন্ধ করে দেয়া হয় ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিসি। তবে জনসাধারণের উদ্দেশে বলেছেন, সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসঙ্ঘের অধিবেশন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

২০১৩ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিসরে সব ধরনের গণবিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেন সামরিক শাসক আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি। দীর্ঘ দিন পর রাতের নীরবতা ভেঙে গত ২০ সেপ্টেম্বর হঠাৎ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মিসরীয়রা। ২০ সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ পরদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার আবার বিক্ষোভের ডাক দেয় তারা; কিন্তু বিক্ষোভ বেগ পাওয়ার আগেই তা রোধ করতে দুই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ছাড়াও অধিকারকর্মী, মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, এমনকি গত বিক্ষোভের প্রত্যক্ষদর্শীরাও রয়েছেন।

ইজিপসিয়ান কমিশন ফর রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমের তথ্য অনুসারে, গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়া, প্রচার চালানো, ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও বিক্ষোভের ডাক দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব কাজকর্মের মাধ্যমে তারা সন্ত্রাসী প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে চেয়েছে ও জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

২০১১ সালে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্র ছিল তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভ। গত ২০ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভও সেখানেই হয়েছে। মোবারকের পতনের পর মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুহাম্মদ মুরসি। তিনি দেশটিতে নিষিদ্ধ সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন। তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন সিসি। কিন্তু ২০১৩ সালে সিসি নেতৃত্বাধীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসির পতন হয়। তার জায়গায় প্রেসিডেন্টের আসন গ্রহণ করেন সিসি। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সিসির বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। মোবারকের আমলের চেয়েও কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে ন্যূনতম বিরোধিতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনাকারী কোনো মন্তব্য করলেও তার পরিণতি হয় বিপজ্জনক।

এমতাবস্থায় গত সপ্তাহের বিক্ষোভ অনেকের কাছেই অবাক করা ছিল। সিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রথম স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ছিল ওই বিক্ষোভ। আর তাই এই পরবর্তী কোনো বিক্ষোভ দমনে সরকার সর্বোপরি চেষ্টা চালাচ্ছে। স্থানীয় অনলাইন সেন্সরশিপ পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন নেটব্লকস জানিয়েছে, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম উপায় হচ্ছে ফেসবুক।


আরো সংবাদ



premium cement