২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হামলার জবাব দিতে রিয়াদ প্রস্তুত

হামলার জবাব দিতে রিয়াদ প্রস্তুত - ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর দু’টি বৃহৎ তেল স্থাপনায় ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রিয়াদ। ভয়াবহ ওই হামলার পর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। এ সময় যুবরাজ ট্রাম্পকে সাফ জানিয়ে দেন, এ হামলার জবাব দিতে তার দেশ প্রস্তুত রয়েছে।

যুবরাজ বলেন, ওই হামলার পাল্টা জবাব দেয়ার মতো সক্ষমতা ও প্রস্তুতি দু’টিই রিয়াদের রয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী সৌদি আরব।

২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। ওই লড়াই শুরুর পর থেকে সৌদি আরবে বেশ কয়েক দফায় হামলা চালানোর স্বীকারোক্তি দিয়েছে হাউছি বিদ্রোহীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা সৌদি আরবের দু’টি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালায়। এতে ওই স্থাপনাগুলোতে আগুন লাগে। ফলে দুনিয়াজুড়ে জ্বালানি সরবরাহে বিঘœ ঘটে। এ ঘটনায় তেলের উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়ে আনে রিয়াদ। হামলার পর হাউছি বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে জানান, ইয়েমেনের ওপর পাঁচ বছরের আগ্রাসন ও অবরোধের যে জবাব দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বৈধ ও স্বাভাবিক।
সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) খবরে বলা হয়েছে, শনিবার টেলিফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে যুবরাজের কথা হয়েছে। এ সময় এমবিএস জানান, ‘সন্ত্রাসী হামালা মোকাবেলায় রিয়াদ সক্ষম ও প্রস্তুত।’ যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি দূতাবাসের এক বিবৃতি বলা হয়েছে, ট্রাম্প এমবিএস-কে জানিয়েছেন, ‘ড্রোন হামলার পর সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশটিকে সহায়তায় প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।’ এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে প্রায় ১০০ হামলার পেছনে তেহরান জড়িত। উত্তেজনা হ্রাসের সব আহ্বানের মধ্যেও ইরান এখন বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহে ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে।’

সৌদি আরবের ঘাঁটিগুলোতে হামলায় ব্যবহৃত হাউছিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো ইরান তাদের সরবরাহ করে। বরাবরই এমন অভিযোগ করে আসছে রিয়াদ। তেহরান ও হাউছি হুথি বিদ্রোহীরা অবশ্য বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এদিকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিতে হুথিদের ড্রোন হামলার পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) একজন কমান্ডার দাবি করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও বিমান ক্যারিয়ারগুলো তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে।
সৌদি আরবের তেল শিল্প ক্ষেত্রে হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। গত শনিবারের হামলায় ইয়েমেনের সংশ্লিষ্টতা উড়িয়ে দিয়ে তিনি ইরানকে দায়ী করেছেন। পাশাপাশি তেহরানের কূটনৈতিক ‘ভানের’ নিন্দাও করেছেন তিনি। তবে পম্পেওর এ বক্তব্য অস্বীকার করেছে ইরান।

তেল উৎপাদন অর্ধেক হ্রাস
ইয়েমেনের ইরানঘনিষ্ঠ হাউছিরা সৌদি আরবের তেল শিল্পের কেন্দ্রস্থলের দু’টি প্লান্টে ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে। আক্রান্ত দু’টি প্লান্টের একটিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল শোধনাগার রয়েছে। এ হামলায় সৌদির তেল উৎপাদন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এ ঘটনায় তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা আরো তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সৌদির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর বিবৃতি অনুযায়ী, এই হামলায় দেশটির দৈনিক তেল উৎপাদন ৫৭ লাখ ব্যারেল হ্রাস পাবে। এটি বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের ৫ শতাংশেরও বেশি।

সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, ‘এই সন্ত্রাসী আক্রমণের মোকাবেলা ও এর সাথে লড়াই করার’ সামর্থ্য রিয়াদের আছে বলে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিল সালমান টেলিফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র হামলার নিন্দা করেছে এবং সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াশিংটন রিয়াদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত বলে ক্রাউন প্রিন্সকে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
দরকার হলে তাদের কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুদ থেকে তেল খালাসে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া দরকার হয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার সাথে তার মন্ত্রণালয় কাজ করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি।

হাউছিরা দায় স্বীকার করলেও টুইটারে মাইক পম্পেও বলেছেন, হামলাগুলো ইয়েমেন থেকে হয়েছে এর কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেছেন, ‘রুহানি আর জারিফ যখন কূটনীতিতে ব্যস্ত থাকার ভান করছেন, তখন তেহরান সৌদি আরবে প্রায় ১০০টি হামলা চালিয়েছে। উত্তেজনা নিরসনের এত আহ্বানের পরও ইরান বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহে নজিরবিহীন আঘাত হেনেছে। আমরা বিশ্বের সব দেশকে প্রকাশ্যে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ইরানি হামলার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’ মিত্রদের সাথে নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে তার ‘আগ্রাসী ভূমিকার জন্য জবাবদিহি’ করতে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মাইক পম্পেও এসব দাবি করলেও তার দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে রাজি হয়নি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইরানও এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।
বছরখানেকেরও বেশি ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর সম্প্রতি কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ উন্মোচিত হওয়ার যে সামান্য আভাস দেখা গিয়েছিল মাইক পম্পেওর টুইটে তার উল্টো সুর দেখা যাচ্ছে বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের। তারা বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টুইট তেহরানের প্রতি ওয়াশিংটনের কট্টর অবস্থানেরই ইঙ্গিত। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাথে বৈঠকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ধরনের বৈঠক কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই হতে হবে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।

আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement