১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা বাড়ানো শুরু

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা বাড়ানো শুরু - ছবি : সংগৃহীত

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বেঁধে দেয়া সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রমে যাত্রা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইরান। চার বছর আগে ছয় বিশ্ব শক্তির সাথে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে এই সর্বোচ্চ মাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। গতকাল রোববার সকালে দেশটির উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ‘আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে’ ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশিতে উন্নীত করতে কাজ শুরু হচ্ছে। বুশেহর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি পেতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধের এ মাত্রা বৃদ্ধি বলে জানান তিনি। এর আগে শনিবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইরানি কর্মকর্তা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৫ শতাংশে উন্নীত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। পরমাণু অস্ত্র বানাতে সমৃদ্ধকরণের এ মাত্রা ৯০ শতাংশ বা তার বেশি হতে হয়।
ছয় বিশ্ব শক্তির সাথে তেহরানের পরমাণু চুক্তিতে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে রাখার শর্ত ছিল। গত রোববারের সংবাদ সম্মেলনে আরাকচি সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে কত শতাংশে উন্নীত করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

ইরানের এ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার দেশ এখনো ২০১৫ সালে হওয়া জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ গ্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তিটি রক্ষা করতে চায়। গত বছর ওয়াশিংটন সরে যাওয়ার পর চুক্তিটি বাঁচাতে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেরাই যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বর্ষপূর্তিতে তেহরান ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়ানোর উপায় বের করতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর রোববার ইরানের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর এ ঘোষণা এলো। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটি চলতি বছরের মে মাসে পরমাণু চুক্তির শর্ত ভেঙে বেঁধে দেয়া পরিমাণের চেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম মজুতেরও ঘোষণা দিয়েছিল। ইরান শুরু থেকেই তার পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে আসছে। বোমা বানাতে নয়, বিদ্যুৎ ও অন্য কাজে পরমাণুর ব্যবহারই তেহরানের লক্ষ্য, বলছে তারা।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে আরাকচি বলেছেন, ইউরোপের দেশগুলো চুক্তি টেকাতে কার্যকর কোনো পন্থা বের করতে না পারলে প্রতি ৬০ দিন পরপর তেহরান ২০১৫ সালের চুক্তিতে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো থেকে একে একে বেরিয়ে আসবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে, আলোচনার দরজা খোলা থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলেও ইউরোপের দেশগুলো ওই পরমাণু চুক্তির শর্ত মেনে চলতে ইরানকে চাপ দিয়ে আসছিল। অন্য দিকে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটি গত কয়েক মাস ধরেই চুক্তি বাঁচাতে ইউরোপীয় দেশগুলো তেমন কিছুই করছে না বলে অনুযোগ করে আসছিল। রোববার ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নতুন ঘোষণা ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে বেকায়দায় ফেলবে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা। 

‘বোমার পথে যাত্রা’
এদিকে ইরানের ঘোষিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বৃদ্ধির মাত্রা ‘মধ্যম পর্যায়ের’ হলেও দেশটি ‘পারমাণবিক অস্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের জ্বালানিমন্ত্রী। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সদস্য জ্বালানিমন্ত্রী ইভুুল স্টাইনেজ রোববার দেশটির ইনেট টেলিভিশনকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ইরান শুরু করেছে- যদিও এখন পর্যন্ত এটি মধ্যম পর্যায়ের বৃদ্ধি- কিন্তু তারা তাদের ওপর আরোপিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা ভেঙে বের হয়ে আসার জন্য বাড়ানো শুরু করেছে। এর মানে তারা সমঝোতা হওয়া রেড লাইন মুছে ফেলা শুরু করে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেছে, এই এগিয়ে যাওয়া সাধারণ নয়, এটি পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’ তেহরানের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চরম উদ্বেগের মধ্যেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ইরানের পরমাণু প্রশ্নে নতুন আলোচনা শুরুর শর্তগুলো ঠিক করতে একমত হয়েছেন। ‘ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে’ ম্যাক্রোঁ তেহরানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন বলেও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
গত শনিবার রাতে এক ফোনালাপে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ ব্যাপারে সম্মতি জানান।

পরমাণু সমঝোতায় ইউরোপের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য তেহরানের পক্ষ থেকে দেয়া ৬০ দিনের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এ টেলিফোন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। টেলিফোন আলাপে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, শুরু থেকেই তার সরকার পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে এসেছে। তিনি দাবি করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরমাণু সমঝোতা রক্ষা করতে চায় এবং প্যারিস এ লক্ষ্যে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ইউরোপ ইরানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে স্বীকার করেন ম্যাক্রোঁ। এখন থেকে এ লক্ষ্যে আরো বেশি তৎপরতা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ১৪ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি এসআই গৌতম রায়ের পবিবার

সকল