২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পরমাণু চুক্তি থেকে আংশিক সরে দাঁড়াল ইরান

চার বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সাথে করা পারমাণবিক চুক্তির ‘কিছু প্রতিশ্রুতি’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান - ফাইল ছবি

চার বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সাথে করা পারমাণবিক চুক্তির ‘কিছু প্রতিশ্রুতি’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও ভারী পানি মজুদ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ইরান আর মানবে না দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার এক বছর পর তেহরান এ পদক্ষেপ নিলো।

ওয়াশিংটনকে ছাড়াই চুক্তিটি বাঁচাতে বদ্ধপরিকর বাকি বিশ্বশক্তিগুলোকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বুধবার নতুন এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তবে চুক্তিতে দেয়া কোন কোন প্রতিশ্রুতি থেকে তেহরান সরে আসছে তার বিস্তারিত জানাননি তিনি।

তেহরানে নিযুক্ত ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের রাষ্ট্রদূতদের আজ (বুধবার) এ বিষয় অবহিত করেছে ইরান। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সই করা একটি চিঠির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান হয়।

এর আগে পাঁচ দেশের রাষ্ট্রদূতদের তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের হাতে এ চিঠি তুলে দেন ইরানের উপ পরররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বা এনএনএনসির বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা বিশদভাবে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গত মে মাসে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা এক তরফাভাবে বের হয়ে যাওয়ার পর ইরান সর্বোচ্চ আত্মসংযম ও ধৈর্য দেখিয়েছে। এ ছাড়া সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশকে ইরানের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের অনুরোধে পর্যাপ্ত সময়ও দেয়া হয়েছে। ইরানের অপরিসীম ধৈর্য ধারণ সত্ত্বেও তেহরানের ওপর পুনরায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে অন্যপক্ষ। অধিকার ও দায়িত্ব পালনের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টির জন্য এ অবস্থায় পরমাণু সমঝোতার প্রতি প্রতিশ্রুতি হ্রাস করা ছাড়া আর কোনো পথ ইরানের জন্য ছিল না। বর্তমান অবস্থায়, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এবং ভারী পানি মজুদ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি ইরান আর মানবে না।

চিঠিতে ইরানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বিশেষ করে তেল ও ব্যাংকিং খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য পরমাণু সমঝোতায় সই করা দেশগুলোকে ৬০ দিনের সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরানের দাবি যতটা মেনে নেয়া হবে সে অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে ইরান। না হলে পর্যায় ক্রমে আরো প্রতিশ্রুতি পালন করা থেকে বিরত থাকবে ইরান।

ইরানের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে বা ইরানের পরমাণু তৎপরতার বিষয়টি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে নেয়াসহ যেকোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ নেয়া হলে তেহরান তার দৃঢ় ও দ্রুত জবাব দেবে বলেও চিঠিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

পারমাণবিক কর্মসূচি হ্রাস করার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য ও জার্মানির সাথে ইরান এ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্লø্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত বছর যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নিলে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। ইরানের তেল রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিতেও জোর ধাক্কা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানি মুদ্রার মূল্যমান কমতে কমতে রেকর্ড সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে, মূল্যস্ফীতি হয়েছে চারগুণ, হাতছাড়া হয়েছে বিদেশী বিনিয়োগ। এরপরও ইরান এতদিন ধরে চুক্তিতে দেয়া সব প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করে আসছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষকেরা।

২০১৫ সালে চুক্তির পর থেকে এ সংস্থাই তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছে। জেসিপিওএর ইউরোপীয় অংশীদারেরা শুরু থেকেই ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরোধী ছিল। চুক্তিটি বাঁচাতে নানা ধরনের চেষ্টাও করে যাচ্ছে তারা। এ ক্ষেত্রে ইরানকে চুক্তিতে করা সব প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিশ্রুতিগুলোকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে বলেও তারা সতর্ক করেছিল। অন্য দিকে জেসিপিওএ চুক্তির পর ইরান বলেছিল, তাদের ওপর ফের যেকোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তা ‘প্রতিশ্রুতির পুরোটা কিংবা কিছু অংশ স্থগিত করার কারণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’

পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করবে না ইরান : জারিফ
এ দিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তেহরান যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তার সবই ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতার আওতায় করা হচ্ছে। কোনোভাবেই ইরান পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করবে না। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পৌঁছে জাওয়াদ জারিফ মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মস্কো সফরে তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভসহ অন্য কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে পরমাণু সমঝোতা ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement