২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পশ্চিম তীরকেও ইসরাইলভুক্ত করা হবে : নেতানিয়াহুর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি

- নয়া দিগন্ত

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুনর্নির্বাচিত হলে পশ্চিম তীরের সব ইহুদি বসতিকে ইসরাইলের অংশ করে নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ইসরাইলে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে নেতানিয়াহুকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সাথে যারা চায় পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ইসরাইল নিজের সীমানার মধ্যে ঢুকিয়ে নিক।

পশ্চিম তীরে ইসরাইল যেসব ইহুদিবসতি গড়ে তুলেছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সেগুলো অবৈধ। তবে ইসরাইল তা মনে করে না।ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে যে গোলান মালভূমি দখল করে নেয়, সেটিকে নিজের সীমানায় ঢুকিয়ে নিয়েছিল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের ভূমি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতিগুলোতে প্রায় চার লাখ ইহুদিকে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে ইসরাইল। পূর্ব জেরুসালেমেও একইভাবে ২০ হাজার ইহুদির জন্য বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। পশ্চিম তীরে থাকে প্রায় ২৫ লাখ ফিলিস্তিনি। যে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে ফিলিস্তিনিরা, সেটি হওয়ার কথা পশ্চিম তীর এবং গাজা ভূখণ্ড নিয়ে। আর তাদের রাজধানী হওয়ার কথা পূর্ব জেরুসালেম।

ইসরাইল আর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সঙ্ঘাত নিরসনে যেকোনো শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিতর্কিত একটি ইস্যু হচ্ছে পশ্চিম তীরের এসব বিতর্কিত ইহুদিবসতি। ফিলিস্তিনিরা মনে করে, এই ইহুদিবসতিগুলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অন্যতম বাধা। এগুলো একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারটিকে রীতিমতো অসম্ভব করে তুলেছে।

কী বলেছেন নেতানিয়াহু : একটি ইসরাইলি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞেস করা হয় কেন তিনি পশ্চিম তীরের বিরাট ইহুদিবসতি পর্যন্ত ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করছেন না।

জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি জানতে চাইছেন আমরা পরবর্তী ধাপে যাচ্ছি কি না। আমার উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, আমরা পরবর্তী ধাপের দিকে যাব। আমি ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করব এবং আমি গুচ্ছ বসতি এবং বিচ্ছিন্ন বসতির মধ্যে কোনো তফাৎ করি না।’

ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া কী?
একজন সিনিয়র ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা সায়েব এরেকাত বলেছেন, ইহুদিবসতির প্রশ্নে নেতানিয়াহু যে অবস্থান নিয়েছেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলকে যা খুশি তা করার সুযোগ দিয়ে যাবে, তত দিন তারা নির্লজ্জভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে যাবে। যেভাবে ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগণের জাতীয় অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তার জন্য ইসরাইলকে বরং উল্টো পুরস্কৃত করা হচ্ছে।’

ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘যে ঘোষণা বা যে পদক্ষেপই নেয়া হোক, তাতে সত্য বদলাবে না। এই ইহুদিবসতিগুলো অবৈধ এবং এগুলো অপসারণ করা হবে।’

‘বিস্ফোরক মন্তব্য’ : বিবিসির আরববিষয়ক বিশ্লেষক সেবাস্টিয়ান আশার বলছেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইহুদিবসতি সম্পর্কে যা বলেছেন, তা সম্ভাব্য মারাত্মক গণবিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কারণ বহু বছর ধরে এই ইস্যুতেই শান্তি প্রক্রিয়া বারবার থমকে গেছে।
তিনি বলছেন, নেতানিয়াহু যেসব দলের সাথে জোট বেঁধে সরকার গঠন করতে চাইছেন, তারা এই কথা শুনে বেশ খুশি হবে। কিন্তু এটি ফিলিস্তিনিদের মারাত্মক বিক্ষুব্ধ করে তুলবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবেও নিন্দিত হবে।

সেবাস্টিয়ান আশার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা হয়তো বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আরো বেপরোয়া করে তুলেছে।

এর পেছনে রাজনীতিটা কী?
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দক্ষিণপন্থী লিকুদ পার্টির সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে নীল ও সাদা জোটের। কিন্তু অন্য অনেক ছোট ছোট দক্ষিণপন্থী দল আছে, যাদের সমর্থন হয়তো পরবর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। লিকুদ পার্টির ২৯ জন এমপির মধ্যে নেতানিয়াহু ছাড়া আর সবাই চান, ইহুদিবসতিগুলোতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। এতদিন পর্যন্ত নেতানিয়াহু ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রম। এখন মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তিনিও তার অবস্থান বদলাচ্ছেন। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement