২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তেলের বাজার অস্থিরতায় ট্রাম্পকে দায়ী করলো ইরান

- ছবি : সংগৃহীত

পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় অন্য দেশগুলোকেও ইরানের তেল কেনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। সেই সাথে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষাকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ নিষেধাজ্ঞা থেকে ভারত-তুরস্কসহ কিছু দেশকে কয়েক মাসের জন্য ছাড় দেয়া হয়েছিল।

ইরান দাবি করছে, বিশ্বের তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ট্রাম্পের এসব একতরফা পদক্ষেপের কারণেই। ইরানের জ্বালানিমন্ত্রী বিজান নামদার জেনগেনেহ অভিযোগ করেন, তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা, তেলবাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা, তেলের দাম নিয়ে নিয়মিত মন্তব্য করে যাওয়া ইত্যাদি তেলের বাজারকে অস্থির করে তোলে।

সেই সাথে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও পেট্রোপণ্যের দর নিয়েও অবিরামভাবে টুইটারে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে থাকেন। এগুলো তেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখছে। গত শনিবার তার এসব মন্তব্য সংবাদ মাধ্যম সানায় প্রকাশিত হয়।

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লোকেরা খুব বেশি কথা বলেন। আমার কথা শুনুন, দয়া করে একটু কম কথা বলুন। কারণ এতে তেলের বাজারে সমস্যা তৈরি হয়। আর এ রকম চলতে থাকলে বাজারে আরো চাপ বাড়বে।

 

আরো পড়ুন : এবার টিকে থাকতে পারবে তো ইরান?
বিবিসি, ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:২১

ইরানের তেল খাতকে লক্ষ্য করে আমেরিকা আজ থেকে কঠোর অবরোধ আরোপ করতে যাচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন এ‌ই ষড়যন্ত্র করে যুক্তরাষ্ট্র কোনও সাফল্য অর্জন করতে পারবে না’।


ইরান তেল রপ্তানির ওপর প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল এবং নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বহাল হলে দেশটির অর্থনীতিতে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। নতুন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সাথে বাণিজ্য-রত কোম্পানিগুলোকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

কিন্তু দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার ফলে এই কেম্পানিগুলোর আমেরিকার সাথে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে যা তাদের ঝুঁকি বাড়াবে।

আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞার কারণ কী?

ইরানের সাথে ২০১৫ সালে করা এক বহুপাক্ষিক চুক্তিকে ভয়ঙ্কর হিসেবে আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবছরের শুরুর দিকে তা থেকে বেরিয়ে যান। ওই চুক্তির ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর সরাসরি নজরদারি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যার বিনিময়ে বিশাল পরিসরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ায় দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এক তরফাভাবে পুনরায় বহাল হচ্ছে।

এই ঘোষণা অন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ইরান থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার ঘটনা বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট এবং ইতোমধ্যে দেশটির অপরিশোধিত তেল রপ্তানি কমে গেছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কিভাবে কাজ করবে?

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের সাথে কোনও দেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখলে তাকেও নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে হবে। অর্থাৎ কেউ ইরানের সাথে ব্যবসা করলে যুক্তরাষ্ট্রের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

একইসঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কোনও মার্কিন কোম্পানি ইরানে ব্যবসা করে এমন কোম্পানির সাথে ব্যবসা করলে তাকেও শাস্তির মুখে পড়তে হবে। আজ সোমবার থেকে ব্যাংকিং সেক্টরেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। গত অগাস্টে স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু এবং অটোমোবাইল সেক্টরসহ বেশকিছু শিল্পখাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল।

আমেরিকা পরিষ্কারভাবে যেটি চাইছে তা হল ইরানের সামগ্রিক তেল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে কিন্তু আটটি দেশকে সাময়িক ছাড় হিসেবে সময় দিচ্ছে আমদানি কমিয়ে আনার জন্য। ইটালি, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই আট দেশের অন্তর্ভুক্ত, দি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর রিপোর্ট বলছে।

এই অবরোধ এড়ানোর উপায় হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছে - যাতে ইরানের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যায়, আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোরও শিকার হতে না হয়। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের মতো স্পেশাল পারপোজ ভিহাইকেল বা এসপিভি-র মাধ্যমে ইরান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সম্পাদন কো যাবে সরাসরি লেনদেন এড়িয়ে।যখন ইরান ইউরোপীয় কোন দেশে তেল রপ্তানি করবে যে দেশ তা নেবে সেই দেশের কোম্পানি এসপিভির মাধ্যমে দাম পরিশোধ করবে। ইরান তারপর সেই অর্থ ক্রেডিট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ থেকে এসপিভির মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারবে।

ইইউ'র এই পরিকল্পনা কার্যকর হলেও ইরান-সম্পর্কিত ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ অনেক কোম্পানির জন্যই খুব চড়া হবে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র গবেষক রিচার্ড নেপিউ বলেন, ইরানের অর্থনীতি সরাসরি মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু ইরানের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক অংশীদার নির্ভরশীল এবং ইরানের সাথে ব্যবসা করার ফলে আমেরিকায় তাদের অভিগমন ঝুঁকির মুখে পড়বে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে রপ্তানি শূন্যে আনতে জোর দিচ্ছে কিন্তু তেলের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে, এমনটাই মত বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্কট লুকাসের।

ইরানের তেল কেনার জন্য অনুমোদিত দেশগুলোর পাশাপাশি ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সমর্থন জটিল প্রমাণিত হতে পারে।

২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইরানের তেল শিল্পে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যার ফলে ইরানের রপ্তানি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

এতে সন্দেহ নেই যে রপ্তানি এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে এটিও পরিষ্কার যে ইরান এবং তার অবশিষ্ট ব্যবসায়িক অংশীদাররা বাণিজ্য যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে।

ইরানীদের তেল বিক্রি করার সৃজনশীল উপায় খোঁজার জন্য বাধ্য করা হবে, পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞার অধীনে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলির উপর নির্ভর করে।

ইউরোপীয় বিনিয়োগ হারিয়ে ফেললে সেই শূন্যতা পূরণ করতে, ইরান রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য যোগাযোগ তৈরি করতে মনোযোগী হবে।


আরো সংবাদ



premium cement