১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৬ বছর পর আল আকসার বাবুর রহমায় ফিলিস্তিনিদের জুমা আদায়

জেরুসালেমের আল-আকসার বাবুর রহমাহতে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনি মুসল্লীরা - ছবি : সংগৃহীত

২০০৩ সালের পর প্রথমবারের ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা আল আকসার বাবুর রহমাহতে (রহমতের দরজা) প্রবেশ করে জুমার নামায আদায় করেছে। গত শুক্রবার জেরুসালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মোহাম্মদ হোসাইনের নেতৃত্বে শত শত ফিলিস্তিনি সেখানে প্রবেশ করে।

২০০৩ সাল থেকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ সেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ এবং জুমার নামায আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। ফলে ১৬ বছর ধরে এই এলাকার বাইরেই জুমা আদায় করতে তারা বাধ্য হতো।

ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, ফিলিস্তিনিরা সেখানে প্রবেশ করার পর তারা ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তারা সেখানে ফিলিস্তিনের পতাকাও ওড়ায়।

গত মঙ্গলবার আল আকসা মসজিদের ভিতরেই ইসরাইলি বাহিনী মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। এতে তাদের অনেকে আহত হয় এবং অনেক মুসল্লি ইসরাইলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে আবারো উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় ইসরাইলি পুলিশ সাময়িক সময়ের জন্য আল আকসা মসজিদের আল রহমাহ গেটটি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পরের দিন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা।

জেরুসালেমকে মুসলমানরা তাদের তৃতীয় পবিত্রতম জায়গা হিসেবে মনে করে থাকে। অন্যদিকে ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানে প্রাচীনকালে দুইটি ইহুদি উপসনালয় ছিল।

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়। ১৯৮০ সালে তারা পুরো শহরটিই দখল করে নেয়। তারা এটিকে ইহুদি রাষ্ট্রটির রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক বিশ^ কখনোই তাদের সে দাবিতে কান দেয়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং তাদের দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তর করেন।


সূত্র  : ডেইলি সাবাহ


আরো পড়ুন : খালিদা জারার : এক ফিলিস্তিনি নারীর গল্প
মু: ওমর ফারুক আকন্দ, ২৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ইসরাইলের কারাগারে বর্তমানে ৫৩ জন ফিলিস্তিনি নারীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এসব নারীকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিনা বিচারে বন্দী করে রেখেছে ইসরাইল। তাদের বন্দী করার মতো তেমন কোনো কারণ ইসরাইলি কর্তৃপরে কাছে নেই। তারপরও দীর্ঘ সময় এসব ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসরাইলের কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের সম্পর্কে পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, ইসরাইল মোটামুটি ফিলিস্তিনের সব ধরনের নাগরিককে বন্দী করে থাকে। বন্দীদের মধ্যে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-তরুণ, ইসলামপন্থী, ধর্মনিরপে, সমাজতান্ত্রিক, এমনকি শিশুরাও রয়েছে। এখনো ২৭০ জন ফিলিস্তিনি শিশু ইসরাইলের কারাগারে বন্দী রয়েছে।

প্রিজনার্স সাপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন ‘অ্যাডামেরা’র মতে, বর্তমানে ৪৫০ ফিলিস্তিনিকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। এসব বন্দীর বেশির ভাগই বিচার এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এ বন্দীদের মধ্যে ফিলিস্তিন আইন পরিষদের (পিএলসি) কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন। এমন একজন সংসদ সদস্য খালিদা জারার। তিনি ফিলিস্তিনি অন্যান্য বন্দীর মতোই কঠোর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।

২০১৫ সালের এপ্রিলে ইসরাইলি সৈন্যরা যখন খালিদার বাড়িতে অভিযান শুরু করে, তখন তিনি তার গবেষণার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ততদিনে তিনি ইসরাইলের জন্য এক মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন। ইসরাইলের কৃত অপরাধের জন্য তাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) নিয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা যারা রেখেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন খালিদা। আর এসব কারণেই তাকে বিনা অপরাধে ইসরাইলি কর্তৃপ আটক করেছে।

তাকে ২০১৬ সালের জুনে মুক্তি দিয়ে আবার ২০১৭ সালের জুলাইয়ে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবরে গ্রেফতার করে কোনো প্রকার বিচার ছাড়াই তাকে আটকে রেখেছে। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো খালিদাকে আটক করা হয়েছে।

খালিদা মুক্তির জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে করুণা ভিা করেননি। বরং তার সাথে থাকা অন্যান্য বন্দীর আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। তিনি তাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে পরামর্শ দেন। এটি তার চারিত্রিক ও মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় বহন করে। খালিদা তার রুগ্ণ স্বাস্থ্য নিয়েও অবিচল ছিলেন। তিনি কারাবাসকালীন কখনো ভেঙে পড়েননি বা কারো কাছে মাথানত করেননি।

৫৫ বছর বয়সী এই নারী আইনজীবী ফিলিস্তিনের দু’টি অংশের নেতৃত্ব দানকারী দু’টি দল হামাস ও ফাতাহর মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের একজন সদস্য ও ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে খালিদা জারার সবসময় জনগণের পক্ষের রাজনীতি করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে সবার কাছে তিনি আপসহীন ও দৃঢ় নারী নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

খালিদা বলেন, ফিলিস্তিনের কোনো কর্মকর্তার ইসরাইলের সাথে কোনো ধরনের আলোচনায় বসা উচিত হবে না। এর ফলে গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলকরণের মাধ্যমে গড়ে উঠা অবৈধ রাষ্ট্রকে বৈধতা দেয়া হয়। ইসরাইল একাধিক যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। খালিদা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে এসব অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খালিদার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার। তিনি সব ধরনের তথাকথিত ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারগুলো স্বীকার করে না। তিনি প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটির (পিএনএ) সাথে ইসরাইলের চলমান আলোচনাকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং সংগ্রামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন।

যেখানে পিএনএ কর্মকর্তারা ‘নেতৃত্বের’ শিখরে অবস্থান করে মৃতপ্রায় ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ ও ‘দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার সমাধান’ খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ফিলিস্তিনের একজন নারী হয়ে খালিদা জেলে বন্দী থেকেও এসবের বিরুদ্ধে বাস্তব অবস্থা তোলে ধরার কাজ চালিয়েছেন।

২০১৪ সালের আগস্টে ইসরাইল নিরাপত্তার নামে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়। এ সময় খালিদার বাড়ি ইসরাইলি সৈন্যরা ঘিরে ফেলে। ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী হিসেবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। তাই ইসরাইলিদের কাছে তিনি তাদের ‘নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি’। ইসরাইলিরা খালেদার কর্মকাণ্ড ও আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয়ের জন্য খালিদাকে যমের মতো ভয় করে।

এ ছাড়া তিনি ইউরোপীয় কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি। এসব কারণে তারা খালিদার কণ্ঠরোধ করতে না পেরে বিচারের মুখোমুখি করেছে। ইসরাইলি বাহিনী রামাল্লার কাছে আল বিরেহে তার বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য একটি সামরিক ফরমান জারি করে। তার কণ্ঠ রুখতে না পেরে এর পরের বছরের এপ্রিলে তাকে আটক করা হয়। তখন থেকে খালিদার ওপর শুরু হওয়া অত্যাচার-নির্যাতন এখনো চলছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু করার জন্য ১২টি অভিযোগ এনেছে। তার ওপর আনীত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- একজন কারামুক্ত বন্দীর সাথে সাক্ষাৎ ও একটি বইমেলায় অংশগ্রহণ। খালিদাকে শাস্তি দেয়ার মতো যথাযথ কোনো প্রমাণ ইসরাইল জোগাড় করতে পারেনি। এটি ইসরাইলের নৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রমাণ করে।

ইসরাইল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে ভুয়া কল্পকাহিনী প্রচার করে থাকে, তার বিরুদ্ধে জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ হলেন খালিদা জারার। তিনি একজন আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নারীদের প্রতিনিধিত্বকারী। খালিদা বাগ্মী ও সাহসী। তিনি মানুষের অধিকার নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করে থাকেন।

আরবি ভাষায় খালিদা মানে ‘অমর’ এবং এটিই হয়তো এই সংগ্রামী নারীর জন্য প্রকৃত উপাধি। ফিলিস্তিনের এ বীরাঙ্গনা আগামী প্রজন্মের জন্য অনন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল