২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ৬ আরব দেশ

জর্দানের মৃত সাগর তীরের কনভেনশন সেন্টারে সমবেত ৬ আরব রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা - ছবি : এএফপি

কুয়েত, মিসর, সৌদি আরব,বাহরাইন, আরব আমিরাত ও জর্দান এই ছয় আরব রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল জর্দানে মিলিত হয়েছিলেন অঞ্চলিক সঙ্কট নিরসনে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে। জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ খবর জানিয়েছেন।

মৃতসাগরের তীরে বাদশাহ হোসেন বিন তালাল কনভেনশন সেন্টারে সফররত পাঁচ আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান আল সাফাদি। বৈঠকের আগে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুফিয়ান কুদাহ জানান মন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবেন। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি, কুয়েতের সাবাহ খালেদ আল সাবাহ, আরব আমিরাতের আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান,বাহরাইনের খালিদ বিন আহমদ আলখালিফা ও সৌদি আরবের আদেল আল জুবায়ের মঙ্গলবার আম্মান পৌঁছেন। তারা জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সাথেও বৈঠক করেন। তিনি আঞ্চলিক ইস্যুতে সমন্বিত আরব অবস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সূত্র : আলজাজিরা 

সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা
বিবিসি ও রয়টার্স

২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া ব্যাপক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। এ অভিযানে দেশটির কয়েক শ’ প্রিন্স, ধনকুবের ও শীর্ষ ব্যবসায়ী ধরপাকড়ের শিকার হয়েছিলেন। এতে নগদ অর্থ ও সম্পত্তিসহ ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি সম্পদ জরিমানা হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
অভিযোগ স্বীকার করা ৮৭ জনের সাথে ফয়সালার মাধ্যমে সমস্যা মিটানো হয়েছে, ফয়সালায় রাজি না হওয়া আটজনকে সরকারি কৌঁসুলির জিম্মায় দেয়া হয়েছে এবং অপরাধের অভিযোগ সাব্যস্ত না হওয়ায় অপর ৫৬টি মামলার নিষ্পত্তি বাকি আছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এ অভিযান শুরু করেছিলেন।

অভিযান শুরুর পর দুই শ’রও বেশি প্রিন্স, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এদের অনেককে রাজধানী রিয়াদের বিভিন্ন হোটেলে বন্দী করে রাখা হয়। এসব হোটেলের মধ্যে পাঁচ তারকা রিজ-কার্লটন হোটেলেও ছিল। অভিযানে ৩৮১ জনকে তলব করেছে সরকার। তাদের কয়েকজনকে অবশ্য সাক্ষী হিসেবে সমন দেয়া হয়েছিল। তবে তলব করা ব্যক্তিদের কারও নাম এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। সৌদি আরবের অভিজাতদের বিরুদ্ধে চালানো এ শুদ্ধি অভিযানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এ অভিযান কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারীকেও বিচলিত করে তুলেছিল। কিন্তু এ অভিযান চলার মধ্যেই গত বছরের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে খ্যাতিমান সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন হন। তারপর থেকে এ খুনের ঘটনা নিয়ে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ ব্যাপক চাপের মধ্যে আছেন। 
সৌদিতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল, বন্ধও হয়েছে তেমনি আকস্মিক। যদিও স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিলÑ এই বুঝি নতুন করে আটক অভিযান শুরু হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকায় ৫৬ জনের সাথে কোনো সমঝোতায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সৌদি সরকারি কৌঁসুলি। আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযুক্ত হননি এমন আটকদের ছেড়ে দেয়া হয়নি বলেও জানানো হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী আটক অভিযানের প্রথম তিনি মাসে রিয়াদের বিলাসবহুল রিজ-কার্লটন হোটেলে সৌদি আরবের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অভিজাতদের আটক রাখা হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

সমালোচকদের দাবি, যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতেই এমন আয়োজন করেছেন। এতে বেশ কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারীকেও অস্থিতিশীল করে তুলেছেন তিনি। যদিও যুবরাজ তেল সম্পদ থেকে বেরিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার কথা বলে আসছেন। পাশ্চাত্যে এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ নিজের এ অভিযানকে ‘শক থেরাপি’ কিংবা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আকস্মিক আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সৌদি অর্থনীতিতে নতুন করে সংস্কার করার দাবি করেছেন তিনি। ওয়াশিংটনে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের আবাসিক স্কলার কারেন ইয়ং বলেন, সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সফল হয়েছে কিনা, তা বলা মুশকিল। এর মধ্যে ভালো খবর হচ্ছেÑ সরকার আভাস দিয়েছে যে তারা এগিয়ে যেতে চায়।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি ও ঘরোয়া রাজনীতি, বিশেষভাবে নাগরিক অ্যাকটিভিস্টদের ওপর যে আচরণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে পাশ্চাত্যে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। সৌদি নীতিকে নিয়মিত সমর্থন করে যাওয়া ওয়াশিংটনে অ্যারাবিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান আলী শিহাবি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা মেনে চলা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ পাশ্চাত্যের দেশগুলো করে আসছে, তা নিরসন চেষ্টার সরকারি প্রতিফলন হচ্ছে সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বন্ধ করা।

তিনি বলেন, সমালোচকরা এখন আটক ও মামলার ঘটনাগুলোতে নাম প্রকাশ না করায় হতাশা ব্যক্ত করবেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আটক ব্যক্তিরাই তাদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। অভিযানে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের চাচাতো ভাই বিনিয়োগকারী ধনকুবের প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল, ন্যাশনাল গার্ড মন্ত্রী প্রিন্স মিতাব বিন আব্দুল্লাহ ও রিয়াদের সাবেক গভর্নর প্রিন্স তুর্কি বিন আব্দুল্লাহকেও দুর্নীতির ফাঁদে ফেলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement