২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রেসিডেন্ট সিসি’র সাক্ষাৎকার প্রচারে কেন বাধা দিচ্ছে মিসর?

সিবিএস টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি - সংগৃহীত

সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্ক জানিয়েছে মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি'র একটি সাক্ষাৎকার প্রচার না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মিসরীয় রাষ্ট্রদূতের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে তারা।

অনুষ্ঠানটিতে দেয়া সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট সিসি নিশ্চিত করেন যে মিসরীয় সেনাবাহিনী সিনাই পর্বতমালায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।

২০১৩ সালে মিসরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে চালানো সহিংস অভিযানকেও সমর্থন করেন প্রেসিডেন্ট সিসি। মিসরে কোনো রাজনৈতিক বন্দী থাকার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।

সিবিএস জানিয়েছে সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করার কিছুক্ষণ পরই তাদেরকে অনুরোধ করা হয় যেন সেটি প্রচার না করা হয়। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি মিসর সরকার।

কী বলেছেন প্রেসিডেন্ট সিসি?

প্রেসিডেন্ট সিসি'র সাথে সাক্ষাৎকারের অনুলিপি প্রকাশ না করলেও সিবিএস টেলিভিশন বলেছে, ২০১৩ সালে মি. সিসি'র নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর যেই অভিযানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসা মোহাম্মদ মুরসি'র সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, সেই অভিযানকে সমর্থন করেছেন মি. সিসি।

২০১৩ সালের ১৪ই অগাস্ট নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা কায়রোর রাবা আল-আদাউইয়া স্কয়ার আর নাহদা স্কয়ারে বিক্ষোভরত মানুষকে ছত্রভঙ্গ করার সময় ৯শ'র বেশি মানুষ মারা যায়। দুইদিন পর রামসেস স্কয়ারে মারা যায় আরো ১২০ জন।

সে সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মি. সিসি'কে সিবিএস জিজ্ঞাসা করে যে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোঁড়ার নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন কিনা।

জবাবে তিনি বলেন,‘৪০ দিনের বেশি সময় ধরে সেখানে হাজার হাজার সশস্ত্র বিক্ষোভকারী অবস্থান নিয়েছিল। আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করার সব ধরণের শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি চেষ্টা করেছি।’

এই ঘটনা সম্পর্কে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, সেখানে কিছু সশস্ত্র মানুষ ছিল, আর বিক্ষোভ দমনের পদ্ধতি দেখে ধারণা করা যায় যে ঐ সহিংসতা পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল এবং এটিকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

২০১৩ সাল থেকে মিসরে অন্তত ৬০ হাজার মানুষকে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে - এই প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন,‘আমি জানি না তারা এই সংখ্যা কোথা থেকে পেলো। যখনই সংখ্যালঘু কোনো গোষ্ঠী তাদের চরমপন্থী মতবাদ সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখনই আমরা তাদের দমন করি।’

কেন সাক্ষাৎকারটি প্রচার করতে দিতে চায় না মিসর?

সিবিএস কর্তৃপক্ষ জানায়, 'দ্যা সিক্সটি মিনিটস' নামের অনুষ্ঠানটির কর্মীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মিসরীয় রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় যেন প্রেসিডেন্ট সিসির সাক্ষাৎকারটি প্রচার না করা হয়।

কিন্তু সিবিএস রোববার রাতে অনুষ্ঠানটি প্রচার করবে বলে জানিয়েছে। মিসরীয় রাষ্ট্রদূতের নাম প্রকাশ না করলেও সিবিএস বলেছে সরকার বিরোধী মতবাদে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে মিসরে যে ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়, ঐ ধরণের খবর 'প্রচারিত হোক তা প্রেসিডেন্ট সিসি'র সরকার চায় না।

উত্তর সিনাই পর্বতমালায় বিদ্রোহী দমনের উদ্দেশ্যে ইসরাইলের সাথে মিসরীয় সোবাহিনীর একজোট হয়ে কাজ করার খবরটিও মিসরে বিতর্ক তৈরি করতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে শান্তিচুক্তি করার আগে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে ৪টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement