২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাতারে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেপথ্যে ছিল যারা

কাতারে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেপথ্যে ছিল যারা - ছবি : সংগৃহীত

কাতারে ১৯৯৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টা সম্পর্কে নতুন বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যে ফরাসি সেনাকর্মকর্তা ওই সামরিক অভ্যুত্থান সফল করার দায়িত্বে ছিলেন, তিনিই প্রকাশ করেছেন এসব। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই অভ্যুত্থানের নেপথ্যে ছিল তিন দেশ, যারা এখন কাতারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পল ব্যারিল নামে ওই সাবেক সেনাকর্মকর্তা বলেন, এতে সমর্থন ছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের। এই তিন দেশ ও মিসর ২০১৭ সালের ৫ জুন কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাদের অভিযোগ, কাতার সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয়। তবে কাতার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ব্যর্থ ওই সামরিক অভ্যুত্থানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন আবু আলি’। ১৯৯৬ সালের রমজান মাসে, অর্থাৎ তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আলে সানির ক্ষমতায় আসার এক বছর বাদে তাকে উৎখাতে এই চেষ্টা চালানো হয়। আমিরের কাজিন ও তৎকালীন পুলিশ প্রধান শেখ হামাদ বিন জসিম বিন হামাদ আলে সানির সহযোগিতায় পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।

ব্যারিল জানান, পুরো প্রচেষ্টায় আরব আমিরাত তাকে ব্যাপক সহায়তা দিয়েছে। পুরো অভিযান সফল করতে তার সাথে ছিল ৪০ জন উচ্চ প্রশিক্ষিত সেনা। পুরো দলকে রাখা হয়েছিল আবু ধাবির ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। সেখানেই অনেক অস্ত্র রাখা হয়েছিল। পুরো দলকে ইউএই’র পাসপোর্ট দেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ জায়েদ আল-নাহিয়ান, যিনি তখন আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। ব্যারিল বলেন, অস্ত্রের জোগান এসেছিল মূলত মিসর থেকে। যে সামরিক দল অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তাদের মধ্যে নির্বাসিত কাতারি কর্মকর্তারাও ছিলেন। পাশাপাশি সৌদি আরবও উপজাতীয় যোদ্ধাদের প্রস্তুত রেখেছিল। বাহরাইন ছিল ব্যারিল ও তার যোগাযোগ দলের অবস্থানস্থল। তারা সেখান থেকে আড়িপাতার মাধ্যমে কাতারের রাজধানী দোহায় চলমান ঘটনাপ্রবাহ জানবেন, এমনটাই কথা ছিল। তিনি আরো জানান, ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে ওই অভিযান সফল করতে তিনি একা গোপনে সাগরপথে দোহায় যান। তার উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর ছবি নেয়া। এর মধ্যে শেখ হামাদের বাসভবন, স্থানীয় টিভি স্টেশন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভবন অন্তর্ভুক্ত ছিল। রোববার ব্যারিলের তোলা ওই ছবি প্রথমবারের মতো আলজাজিরা প্রকাশ করে। অভিযানে অংশ নিতে তিনি আফ্রিকার দেশ শাদ থেকে তিন হাজার সেনা নিয়ে আসেন। বিনিময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস দেবিকে দুই কোটি ডলার পরিশোধ করেন। পুরো অভিযানের খরচ ছিল প্রায় ১০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

যেভাবে ব্যর্থ হয় অভিযান
ব্যারিল জানান, অভিযান ব্যর্থ হওয়ার একটি কারণ ছিল, তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক নিজে ব্যক্তিগতভাবে তাকে ফোন দিয়ে অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে অভিযান এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত রদ করেছিলেন কাতারের জাতির পিতা শেখ খলিফা বিন হামাদ আলে সানি, যিনি ছিলেন তৎকালীন আমিরের পিতা। শেখ খলিফা যখন জানতে পারেন যে, তার ছেলের বিরুদ্ধে ওই অভিযান চালানো হলে প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে, তখন তিনি ক্ষান্ত দেন। ব্যারিল বলেন, ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ‘হত্যাকাণ্ড’ সম্পন্ন করতে হতো। কারণ, তার দলের অন্যতম দায়িত্ব ছিল আমির শেখ হামাদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শাসক পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করা।

জাতীয় দিবস উদযাপন 
অবরোধের মধ্যেই জাতীয় দিবস উদযাপন করছে কাতার। দিবস উদযাপন উপলক্ষে গত রোববারই দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কূটনৈতিক অবরোধের কারণে কাতার আরো শক্তিশালী হয়েছে। ‘সম্মান ও কল্যাণের সুসংবাদ নাও’ শিরোনামে তিন দিনব্যাপী জাতীয় দিবস উদযাপন শুরু হয় সোমবার সকাল থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement