২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খাশোগি হত্যাকাণ্ড

সৌদি যুবরাজকে দায়ী করতে মার্কিন সিনেটরদের প্রস্তাব পেশ

সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান - সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দলের ছয়জন সিনেটর সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে সাংবাদিক খাশোগি হত্যার জন্য দায়ী করতে একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন। গত বুধবার উপস্থাপিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ওই হত্যাকাণ্ডে যে মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত আছেন সে ব্যাপারে সিনেটের উচ্চমাত্রার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। 

সিনেটে প্রস্তাবটি পাস হলে তা হবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ী করা। অক্টোবরের ২ তারিখে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান দলের একজন সিনেটর এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, এ প্রস্তাবে সোজাসাপ্টা ভাষায় বলা হয়েছে সৌদি যুবরাজ জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে বিনষ্ট করছেন। 

ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ইস্তাম্বুলের প্রধান কৌসুলি সৌদি যুবরাজের শীর্ষস্থানীয় সহযোগী ও সৌদির পররাষ্ট্র গোয়েন্দাবিষয়ক বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরপরই সিনেটরদের এ পদক্ষেপ দেখা গেল। 

সৌদি আরব বলছে, যুবরাজ মোহাম্মদ এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতেন না। প্রাথমিকভাবে রিয়াদ খাশোগির হত্যকাণ্ডের কথাই অস্বীকার করেছিল। তবে বেশ কয়েকবার নিজেদের বিবৃতি পাল্টানোর পর তারা স্বীকার করে নেয় যে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটেই নির্মমভাবে নিহত হন খাশোগি। সৌদি আরবে ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছিল। তার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে স্বীকৃতি দিলেও দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও খাশোগির লাশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। 

ইয়েমেন যুদ্ধ ও কাতার প্রসঙ্গ
প্রস্তাবে ইয়েমেন যুদ্ধের জন্যও সৌদি যুবরাজকে দায়ী করা হয়েছে। দেশটি ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের যুদ্ধে জড়ায়। এরপর থেকে দেশটি গণহারে বোমাবর্ষণের শিকার হয়। তখন থেকে মার্কিন সহায়তায় সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জোট ইয়েমেনে ১৮ হাজারের বেশি বিমান হামলা চালায়। এসব হামলায় হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।

সিনেটররা ইয়েমেনের যুদ্ধ শেষ করতে হাউছি বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান। প্রস্তাবে গত বছরের জুনে কাতারের ওপর আরোপ করা অবরোধ তুলে নিতেও সৌদির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) কূটনৈতিক অচলাবস্থা তুলে নিতেও বলা হয় রিয়াদকে। এ ছাড়া, সৌদির কারাগারে আটক নারী অধিকারকর্মী ও অন্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়ারও জাবি জানানো হয়। 

শীর্ষ প্রশাসন ও সিনেটের ভিন্ন অবস্থান
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান জিনা হ্যাসপেলের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর কয়েকজন সিনেটর জানান, এ ঘটনায় যুবরাজের জড়িত না থাকার সম্ভাবনা শূন্য। তাদের এ বক্তব্যের একদিন পরই সিনেটররা এ প্রস্তাব পেশ করলেন। 

এর এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস সিনেটরদের জানান, তাদের হাতে যুবরাজকে দায়ী করার মতো শক্ত কোনো প্রমাণ নেই। ফলে এ ইস্যুতে সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট না করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। অবশ্য সিআইএ বারবার বলে আসছিল, যুবরাজ মোহাম্মদই খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হওয়াবিষয়ক যেকোনো বিবৃতি-প্রমাণ উপেক্ষা করে আসছেন। সিআইএর বিবৃতির ব্যাপারে তিনি বলেন, সংস্থাটি অনুভব করছে মোহাম্মদ এর জন্য দায়ী। কিন্তু তাদের হাতে শক্ত কোনো প্রমাণ নেই। 

আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের
এ দিকে, জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশন। গত বুধবার জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের কার্যালয়ে সংস্থাটির প্রধান মিশেল ব্যাশেলে বলেন, কেবল জাতিসঙ্ঘের একটি তদন্তেই হবে না বরং এর জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তও হওয়া দরকার।

মিশেল বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একটি ফৌজদারি তদন্তের এখতিয়ার আমাদের নেই। সৌদি কনসুলেটে যেদিন তাকে হত্যা করা হয়, সেদিন ভেতরে কী ঘটেছিল, তা জানতে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য কারা দায়ী তা আমাদের জানতে হবে।

এ ঘটনায় জাতিসঙ্ঘের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমরা অপোয় রয়েছি। অনিশ্চিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা কোনো পদপে নিতে পারি না।


আরো সংবাদ



premium cement