২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসরাইলের ওমান-আমিরাত মিশন

ইসরাইল
ইসরাইলের মন্ত্রী মিরি রেগেভ আবুধাবিতে শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শন করেন - ছবি : টাইমস অব ইসরাইল

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ওমান সফরের পর এবার আরব আমিরাত গেলেন ইসরাইলের আরেক মন্ত্রী। শুক্রবার ওমান যান ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাত যান ইসরাইলি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী মিরি রেগেভ। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের মাঝে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আকস্মিক সফরে শুক্রবার ওমান গিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজেক রবিনের পর দ্বিতীয় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সেখানে গেলেন।

এদিকে নেতানিয়াহুর এ সফরের নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরান। শনিবার এক বিবৃতিতে ইরানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইসরাইল ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে জায়নিস্টরা (ইসরাইল) মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ৭০ বছর ধরে চলা দখলদারিত্ব এবং হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে।’

নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উপসাগরীয় দেশটির শাসক সুলতান কাবুসের আমন্ত্রণে শুক্রবার হঠাৎ করেই নেতানিয়াহু সেখানে গেছেন।

ইরানের মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসলামিক দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।

‘ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ দাবিতে আত্মসমর্পণ এবং জায়নিস্টরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে এদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং মুসলমান ও ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে’, বলেন কাসেমি।

১৯৯৫ সালে জেরুসালেমে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ ও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসেফ বিন আলাবির মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।

মাসকাটে নেতানিয়াহু ও সুলতান কাবুস

 

ওমান ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম দেখভালের জন্য ১৯৯৬ সালে দেশদুটি অফিস স্থাপনে সম্মত হয়েছে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনী ইনতিফাদার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মাসকাট আবারো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ভেঙে দেয়।

এদিকে, ইসরাইলের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মিরি রেগেভের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সংগঠনের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, দখলদার ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে তখন একজন ইহুদিবাদী মন্ত্রীকে আবুধাবি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে আরব আমিরাত।

মিরি রেগেভ গত রোববার একটি ক্রীড়া প্রতিনিধিদল নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। মুসলমান ও মানবজাতির শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইলের কোনো মন্ত্রীর এটাই প্রথম আরব আমিরাত সফর।

ওই মন্ত্রী আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মাদ বিন জায়েদের আমন্ত্রণে নগরীর একটি মসজিদও পরিদর্শন করেন।

এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি। তিনি তার অফিসিয়াল টুইটার পেইজে লিখেছেন, আবু ধাবিতে ইহুদিবাদী প্রতিনিধিদলকে দেয়া উষ্ণ সংবর্ধনার দৃশ্য গাজা উপত্যকার শিশু হত্যার চেয়ে কোনো অংশে কম বেদনাদায়ক নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলো দেড়শ’ কোটি মুসলমানের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। গত ২৫ অক্টোবর ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওমান সফরে গিয়ে সুলতান কাবুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার এ সফরের খবর একদিন পর ছবিসহ প্রকাশ করা হয়।

আরো পড়ুন :
আল-আকসা মসজিদবিহীন জেরুসালেমের পরিকল্পনা ইসরাইলের
আল-জাজিরা, রয়টার্স, জেরুসালেম পোস্ট ও বিবিসি, ২৬ মে ২০১৮
বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ইসরাইল। একর পর এক স্বপ্ন পূরণের দিকে ছুটছে দেশটি। ইতোমধ্যেই জেরুসালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদবিহীন একটি পোস্টার নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রাইডম্যান।

তেল আবিবের কাছেই অবস্থিত ইসরাইলি শহরে ডেভিড ফ্রিডম্যানের সফরে তার হাতে ছবিটি তুলে দেন আচিয়ার এক কর্মকর্তা। সমালোচকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদকে গুড়িয়ে দেয়ার ইসরাইলি পরিকল্পনা সামনে আসলো।

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে ফিলিস্তিনের জেরুসালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পর এবার সিরিয়ার গোলান মালভূমিরও স্বীকৃতি চাইছে ইসরাইল। ১৯৬৭ সালে এই মালভূমির একাংশ দখল করে নেয় তেল আবিব। সিরিয়ার কাছ থেকে দখলে নেয়া গোলান মালভূমিকে এবার ইসরাইলের এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ ঘোষণা ত্বরান্বিত করতে মার্কিন প্রশাসনে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে ইসরাইল।

জেরুসালেমের স্বীকৃতি আদায়ের পর উজ্জীবিত ইসরাইল গোলানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ট্রাম্প প্রাশাসনের ওপর চাপ তৈরি করছে। ২৪ মে ২০১৮ বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা স্বীকার করেছেন ইসরাইলের গোয়েন্দামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ।

ইসরাইল কাটজ বলেন, গোলান মালভূমির ইস্যুটি ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে এজেন্ডার প্রথমে রয়েছে। আমেরিকা দখলকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তা হবে ইরানের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ইরানবিরোধী তৎপরতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। গত ৫১ বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গোলান স্বীকৃতির বিষয়টি প্রধান ইস্যু হিসেবে ঘুরপাক খাচ্ছে ।

তিনি বলেন, গোলান মালভূমি বিষয়ে পদ্ক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সেখানে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মার্কিন স্বীকৃতি সম্বলিত বিবৃতি হবে ইরানের জন্য আরো একটি বেদনাদায়ক জবাব। চলতি বছর আরো কয়েক মাস পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তেহরানকে এই বার্তা দেয়া হবে যে, তারা দেখুক যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইলকে ধ্বংস করার চেষ্টার প্রতিফল তারা পাচ্ছে।

১২০০ বর্গফুটের গোলান মালভূমি সিরিয়া ও ইসরাইল দুই দেশের জন্যই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে ছয় দিনের যুদ্ধে অঞ্চলটি দখল করে নেয় ইসরাইল। পরে ১৯৮১ সালে এসে এটিকে তারা নিজেদের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করে। সেখানে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনো তেল আবিবের এই দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেয়নি।

১৯৬৭ সালে দখলের পর থেকেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলে বড় ধরনের সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। অথচ শান্তিচুক্তির আওতায় ওই ভূখণ্ড কাগজে-কলমে ফেরত দেয়া হয়েছে। আর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ভূমিকে ইসরাইলের ‘নিজস্ব ভূমি’ বলেই স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল।

সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে গোলানকে দামেস্কের কাছে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের প্রভাব ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মালভূমিটির নিয়ন্ত্রণ এখন নিজের কাছে রাখতেই আগ্রহী ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবেলার কৌশল হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনও গোলান নিয়ে ইসরাইলের প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে জানান কাটজ।

গোলান মালভূমিটির সাথে জর্ডানেরও সীমান্ত আছে। তেলআবিবের দখল থেকে গোলানমুক্ত করতে ১৯৭৩ সালে সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ হয় দামেস্ক। পরের বছর দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হয়। এরপর থেকে গোলান নিয়ে তুলনামূলকভাবে শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement