২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

যে কারণে সৌদি থেকে পালালো জামাল খাশোগির ছেলে

সৌদি প্রেস এজেন্সির দেওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, সালাহর সঙ্গে যুবরাজ করমর্দন করছেন। - ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের ভিন্নমতাবল্বী সাংবাদিক সাংবাদিক জামাল খাশোগির ছেলে সালাহ খাশোগি যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। সৌদি সরকার তার ওপর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে সালাহকে সপরিবারে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেয় সৌদি আরব। সেই প্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর সৌদি ছাড়েন তিনি। ২৫ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান সালাহ খাশোগি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সালাহ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মা ও তিন সহোদরের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সালাহর পা রাখার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপ-মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো জানান, স্টেট সেক্রেটারি মাইক পম্পেও চলতি মাসে সৌদি নেতাদের ওপর চাপ দেন তাদের নাগরিক সালাহ খাশোগিকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে।

এদিকে, সালাহকে মুক্তি দেওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। উপ-মুখপাত্র পালাদিনো বলেন, ‘এমন পদক্ষেপে আমরা খুশি।’ সে সঙ্গে তিনি গত ২ অক্টোবর ইস্তান্বুলে সৌদি কনসুলেটে জামাল খাশোগির নিহত হওয়া সংক্রান্ত সব তথ্য হাতে পাওয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার কথাও জানান পালাদিনো।

খাশোগির হত্যা পরিকল্পিত

ক্রমাগত নিজেদের দাবি শুধরে নিচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির সরকার আগে বলেছিলো- কনস্যুলেটের ভেতরে ‘হাতাহাতি’-র ফলে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক খাশোগির মৃত্যু হয়েছে।

তবে গতকাল দেশটির সরকারি কৌঁসুলি বলেন, জামাল খাশোগির মৃত্যু পরিকল্পিত।

এদিকে, সালাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা রিয়াদের ইয়ামামা রাজপ্রাসাদে সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজের সঙ্গে দেখা করেন। সেসময় তার বাবার মৃত্যুতে তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। সৌদি প্রেস এজেন্সির দেওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, সালাহর সঙ্গে যুবরাজ করমর্দন করছেন। আর সালাহ শীতল চোখে যুবরাজের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর ইস্তান্বুলে সৌদি কনসুলেটে ব্যক্তিগত কাজের জন্যে এসে নিখোঁজ হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। সেসময় তার মৃত্যুর খবরটি প্রচারিত হতে থাকে। ঘটনার ১৮ দিন পর সৌদি সরকার খাশোগির নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে।

 

আরো পড়ুন : ভিন্ন মতালম্বী সেই যুবরাজদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল?

 ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৩৫


২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপে বসবাসরত তিনজন সৌদি যুবরাজ নিখোঁজ হয়ে যান যাদের প্রত্যেকেই সৌদি সরকারের সমালোচক ছিলেন।

তাদের তিনজনকেই অপহরণ করে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল - এমন প্রমাণও রয়েছে। আর তারপর থেকে তাদের সম্পর্কে আর কিছু জানা যায়নি।


সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুলআজিজ
২০০৩ সালের ১২ জুন সকালের ঘটনা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের বাইরে একটি প্রাসাদে ঢুকতে দেখা যায় একজন সৌদি যুবরাজকে। তার নাম সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুল আজিজ।

প্রাসাদটিও যুবরাজের আত্মীয় মরহুম সৌদি বাদশাহ ফাহাদের। বাদশাহ ফাহাদের ছেলে যুবরাজ আবদুলআজিজ বিন ফাহাদের সাথে সকালের নাস্তা খেতে প্রাসাদে যান সুলতান।

একপর্যায়ে সৌদি সরকারের সমালোচক সুলতানকে নিজ দেশ সৌদি আরবে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন যুবরাজ আব্দুলআজিজ।

সুলতান ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তখন যুবরাজ আব্দুলআজিজ একটি ফোন করতে যান। তখন ঐ কক্ষে থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তি, সৌদি আরবের ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী শেখ সালেহ আল-শেখ, কক্ষ ছেড়ে চলে যান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখোশ পরা কয়েকজন ঘরে ঢুকে এবং সুলতানকে চেতনাহীন করে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। অজ্ঞান অবস্থাতেই সুলতানকে জেনেভা বিমানবন্দরে নেয়া হয় এবং সেখানে অপেক্ষারত একটি বিমানে ওঠানো হয় তাকে।

অনেক বছর পর সুইজারল্যান্ডের একটি আদালতে ঠিক এভাবেই সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন সুলতান।

পরে জেনেভার হোটেলে থাকা সুলতানের সঙ্গীসাথীদের জানানো হয় যে সুলতানকে রিয়াদ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাই তাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই।

কিন্তু সুলতান কী এমন করেছিলেন যেজন্য তাকে এভাবে অপহরণ করতে হলো?

সৌদি আরবে ফেরত গিয়ে সুলতানের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় তাকে কারাগারে এবং ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

দীর্ঘসময় কারাগারে এবং বাড়িতে আটক থাকার পর সুলতানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে সম্মত হয় রাজপরিবার।

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সুইস আদালতে আব্দুলআজিজ বিন ফাহাদ এবং শেখ সালেহ আল-শেখ এর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন সুলতান।

প্রথমবার কোনো সৌদি রাজপরিবারের সদস্যের আরেক রাজপরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমা আদালতে মামলা দায়েরের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সেখান থেকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যান সুলতান।

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ইউরোপে পৌঁছানোর পর থেকেই সৌদি সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন ইউরোপিয় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেন সুলতান।

তার সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন সুলতান।

এরপর ২০১৬ সালে সুলতান এবং তার ১৮ জন সফরসঙ্গীকে প্যারিস থেকে কায়রো নিয়ে যাওয়া হবে বলে একটি বিমানে উঠিয়ে রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়।

তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি সুলতানের।

যুবরাজ তুর্কি বিন বান্দার একসময় সৌদি পুলিশের একজন মেজর ছিলেন, যিনি রাজপরিবারের সদস্যদের পুলিশি সেবা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

কিন্তু উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্বে পরিবারের সদস্যদের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পরলে একসময় কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১২ সালে প্যারিসে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়েই সৌদি আরবের সংস্কার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন তিনি।

যুবরাজ সুলতানের মতো তুর্কিকেও আলোচনার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে আলোচনার মাধ্যমে যুবরাজ তুর্কির মন গলাতে পারেনি সৌদি সরকারি কর্মকর্তারা।

২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে যান তুর্কি।

সেবছরের শেষদিকে হঠাৎই উধাও হয়ে যান তিনি। তারপর এখন পর্যন্ত যুবরাজ তুর্কি বিন বান্দার এর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

যুবরাজ তুর্কি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি সময় একই ধরণের পরিণতি হয় আরেকজন যুবরাজ সউদ বিন সাইফ আল-নাসেরের।

ইউরোপে বিলাসবহুল জীবনযাপনে উৎসাহী ছিলেন এই যুবরাজ।

২০১৪ সাল থেকে টুইটারে সৌদি রাজতন্ত্রকে কটাক্ষ করে পোস্ট দেয়া শুরু করেন সৌদ।

পরের বছর বাদশাহ সালমানকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতনামা একজন সৌদি যুবরাজের লেখা দু'টি চিঠি ফাঁস হলে ঐ যুবরাজের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন সৌদ।

এক টুইটে ঐ চিঠির বিষয়বস্তুকে গুরুত্বের সাথে নিতে সৌদি জনগণকে আহ্বান জানান সৌদ।

এর কিছুদিন পর থেকে তার টুইটার অ্যাকাউন্টটি নিরব হয়ে যায়।

জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া আরেকজন সৌদি যুবরাজ খালেদ বিন ফারহানের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক বৈঠকের কথা বলে কৌশলে সৌদকে রিয়াদে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

যুবরাজ খালেদ বলেন, "সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা আমার চারজনই ছিলাম ইউরোপে, যাদের মধ্যে তিনজনকেই অপহরণ করা হয়েছে।"

যুবরাজ খালেদ আশঙ্কা করছেন নিকট ভবিষ্যতে তাকেও অপহরণ করা হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘বঞ্চিত ও অসহায় শিশুদের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই’ ময়মনসিংহে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত রমজানের প্রথমার্ধে ওমরাহ পালন করলেন ৮০ লাখ মুসল্লি পোরশায় বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী যুবক লাশ ফেরত গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, এতে আমরা বিজয়ী হবো : মির্জা ফখরুল নিঝুমদ্বীপে পুকুরে পাওয়া গেল ১০ কেজি ইলিশ ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় চলবে ১৫ ফেরি ও ২০ লঞ্চ দি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের রক্তদাতাদের সংবর্ধনা প্রদান কক্সবাজারে ওরিয়ন হোম অ্যাপ্লায়েন্সেসের ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত সৈয়দপুরে ফেসবুক লাইভে থেকে যুবকের আত্মহত্যা! মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫

সকল