২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্কাইপিতে দেয়া হয় খাসোগি হত্যার নির্দেশ!

খাসোগি হত্যার প্রতিবাদে সারা বিশ্বে প্রতিবাদ হচ্ছে। - ছবি: সংগৃহীত

সৌদি যুবরাজ (মোহাম্মদ বিন সালমানের) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো চালাতেন তিনি। সৌদি আরবের অভিজাত ও ধনী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। লেবাননের একজন প্রধানমন্ত্রীকেও (সাদ হারিরি) আটক করেন তিনি।

আবার সেই তিনিই স্কাইপেতে বসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সৌদি আরবের দুজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স এ সংবাদটি প্রকাশ করেছে।

স্কাইপিতে খাসোগিতে হত্যার নির্দেশদাতা ব্যক্তি হলেন সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সৌদ আল-কাহতানি, যাকে এরই মধ্যে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে, তিনিই খাসোগি হত্যাকাণ্ডে স্কাইপেতে এই নির্দেশনা দেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে।

কাহতানি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিশেষ ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত ১৫ জনের সৌদি দলের চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় মোট ১৮ জন সৌদি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবরে জানিয়েছে সৌদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

কাহতানিকে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের হোতা প্রমাণ করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু গত তিন বছরে কাহতানির উত্থান ও যুবরাজের সঙ্গে সখ্যর বিষয়টি লুকানো সম্ভব হচ্ছে না, ফলে এ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতাও ঢাকা সম্ভব হচ্ছে না।

কাহতানি এর আগে অবশ্য বলেছিলেন, তিনি তার বসের (মোহাম্মদ বিন সালমান) অনুমতির বাইরে কিছুই করেন না। কিছুদিন টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আজ্ঞার বাইরে তিনি আসলে কিছুই করেন না।

বরখাস্তের রয়টার্স কাহতানির বক্তব্য জানতে চায় কিন্তু তিনি কোন সাড়া দেননি। তবে তার টুইটারে অ্যাকাউন্টে ব্যক্তিগত তথ্যে পদবির জায়গায় গত দু-তিন দিন আগে রাজতন্ত্রের উপদেষ্টা পদ সরিয়ে দিয়ে নিজেকে ‘সৌদি ফেডারেশন অব সাইবার সিকিউরিটি, প্রোগ্রামিং অ্যান্ড ড্রোনস‌’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করে রেখেছেন।

 

আরো পড়ুন : যেভাবে সরানো হয়েছিল খাশোগির লাশ

আলজাজিরা ও মিডলইস্ট আই, ২৩ অক্টোবর ২০১৮


তুরস্ক সরকার বিশ্বাস করে কন্স্যুলেটের ভেতর হত্যা করা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির লাশ রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এক দেহরক্ষী খাশোগির লাশ একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে সৌদিতে নিয়ে গেছেন। বিভিন্ন সূত্র জানায়, মাহির আবদুল আজিজ মুতরিব নামের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির লাশ সরিয়ে নেয়ার সাথে জড়িত। 

ধারণা করা হচ্ছে, একটি বড় ব্যাগে করে তার মরদেহ কন্স্যুলেট থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। সৌদি যুবারজের সাথে প্রায়ই মুতরিবকে বিভিন্ন সফরে যেতে দেখা যায়। ২ অক্টোবর জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার দিনে তিনি ইস্তান্বুল থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে দেশে যান।


তিনি তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তার ব্যাগ পরীক্ষা করতে দেননি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত ওই বিমানটির কোনো ফ্লাইট শিডিউল, বিমান এবং ফ্লাইটের কোনো তথ্যও তিনি বিমানবন্দরে দেননি। সূত্র বলছে, কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী মুতরিবকে বিমানবন্দরে খুব দ্রুত চলাচল করতে দেখা যায়।

তবে আলজাজিরা জানায়, খাশোগিকে হত্যার জন্য যে ১৫ জনের দলটি এসেছিল, তাতে একজনের চেহারা ছিল খাশোগির মতো। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, খাশোগিকে হত্যার পর মোস্তফা মাদানি নামের ওই ব্যক্তি কন্স্যুলেট ভবনের পেছন দিক দিয়ে খাশোগির মতো পোশাক পরে বেরিয়ে যায়। তখন তার সাথে প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে মাথাঢাকা আরেকজনকে দেখা যায়। তাদের দুজনকে একটি ট্যাক্সিতে করে ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমদ মসজিদে যেতে দেখা যায়। সেখানে তারা বাথরুমে ঢুকে পোশাক বদল করেন। অথচ খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মাদানিকে কালো শার্ট ও নীল রঙের জিন্স পরে কন্স্যুলেটে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল। মসজিদের বাথরুম থেকে বের হয়ে এ দুইজনে একটি প্লাস্টিক ব্যাগ একটি আবর্জনার পাত্রে ফেলেন। 

উল্লেখ্য, সৌদি কন্স্যুলেটে ঢোকার ১৭ দিন পর অবশেষে গত শুক্রবার খাশোগি হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি। তাদের কর্মকর্তারাই খাশোগিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে তারা। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, খাশোগির লাশ কোথায় আছে এ বিষয়ে তারা কিছু জানে না। রোববার সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের প্রথমবারের মতো সরাসরি এ ইস্যুতে কথা বলেন। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর দাবি করেছেন, ওই গোয়েন্দা সদস্যরা ‘ভুলবশত’ খাশোগিকে খুন করার পাশাপাশি ঘটনাটি আড়াল করতে চেয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের সাজা দিতে সৌদি আরব বদ্ধপরিকর। কিন্তু তার দেয়া তথ্যের সাথে সৌদি আরবের আগের তথ্যের অনেক অমিল রয়েছে। জুবায়ের বলেছেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ড বিশাল এবং মারাত্মক ভুল। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, তিনি (এমবিএস) এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সৌদিকর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কার্পেটে করে পেঁচিয়ে খাশোগির লাশ স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দেয়া হয়। এর আগে রোববার তুরস্কের কর্মকর্তারা বলেন, বেঁচে থাকতেই খাশোগির লাশ ১৫ টুকরো করা হয়। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো বিস্তারিত জানাতে পারেনি তারা।

খাশোগি হত্যার সব তথ্য প্রকাশ করবে তুরস্ক

এ দিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, খাশোগি হত্যার নগ্ন সত্য প্রকাশ করা হবে। আজ মঙ্গলবার খাশোগি ইস্যুতে একটি বিবৃতি তিনি। এরদোগান ইস্তান্বুলের একটি প্রচারণা সভায় বলেন, আমরা এই হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করব, যার মাধ্যমে এ হত্যার নগ্ন সত্য প্রকাশিত হবে। আমরা শুধু সাধারণ কিছু তথ্যই প্রকাশ করব না, আমরা এ ঘটনার পেছনের নগ্ন সত্যটা বের করেই ছাড়ব। তুরস্ক প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এরদোগানের মধ্যে একটি ফোনালাপ হয়। যেখানে দুই নেতাই খাশোগি হত্যার সব রকম বিষয় খোলাসা করার ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেন।

সৌদি কন্স্যুলেট ভবনে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার স্বীকারোক্তি দেয়ার পর থেকে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে রিয়াদের ওপর চাপ বাড়ছে। এমন সময় তুরস্কের পক্ষ থেকে ঘটনার বিস্তারিত আলামত জনসমক্ষে হাজির করার ঘোষণা এলো। তুরস্কের এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে খাশোগি নিখোঁজের রহস্য উন্মোচিত হওয়ার আশা জোরালো হয়েছে। 
সৌদি আরব খাশোগি হত্যাকাণ্ডকে কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার অপরিকল্পিত আকস্মিক কর্মকাণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও তুরস্কের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, পরিকল্পিতভাবেই তাকে খুন করা হয়েছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, তারা এমন সব শক্ত ও বিপুল প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন, যাতে দেখা যায় খাশোগি পূর্বনির্ধারিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। এর আগে তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানায়, খাশোগিকে নির্যাতন, হত্যা এবং টুকরো টুকরো করে ফেলার প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে।

কন্স্যুলেট কর্মচারীদের সাক্ষ্যগ্রহণ

সৌদি কন্স্যুলেটে কর্মরত তুরস্কের পাঁচ নাগরিক সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল সোমবার তুরস্কের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি বলেছে, তদন্তকারীদের কাছে কন্স্যুলেটের পাঁচ তুর্কি কর্মচারী তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এর আগে তুর্কি এই সম্প্রচার মাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে কন্স্যুলেটের চালকসহ প্রায় ২০ কর্মচারী এ হত্যাকাণ্ড তদন্তের সাথে সম্পর্কিত প্রসিকিউটরদের কাছে তাদের বিবৃতি দিয়েছেন। সিএনএন তুর্ক বলছে, প্রসিকিউটররা কন্স্যুলেটের ৪৫ কর্মচারীকে এ ব্যাপারে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement