২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কী শাস্তি অপেক্ষা করছে সৌদি আরবের জন্য

খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিপাকে সৌদি আরব - ছবি : সংগ্রহ

অবশেষে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সৌদি আরব। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুল নগরীর সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে যাওয়ার পর আর ফেরেননি সৌদি শাসকদের ভিন্নমতাবলম্বী এই সাংবাদিক। তখনই বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় যে, খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে কনস্যুলেটের ভেতরেই। ওই দিন সকালে সৌদি আরব থেকে
বিশেষ একটি টিম এই কাজের জন্য ইস্তাম্বুল যায় বলেও বিভিন্ন সংবাদে বলা হয়।

অবশেষে বিভিন্ন চাপের মুখে সৌদি সরকার স্বীকার করেছে কনস্যুলেটের ভেতরেই খাসোগির নিহত হওয়ার কথা। আর এই স্বীকারোক্তির পরই এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ জন্য সৌদি আরব কী শাস্তি পেতে পারে তা নিয়ে কৌতুহল শুরু হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে সারা বিশ্বেই তোলপাড় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ এই ঘটনাটি স্পষ্ট করতে সৌদি আরবকে চাপ দিয়েছে। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহেই বলেছেন, ঘটনা সত্যি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তুর্কি সরকারের নিয়মতান্ত্রিক চাপ ছিলো খাসোগি নিখোঁজ রহস্যের সমাধানে। তারা কনস্যুলেটের ভেতরে তল্লাশিও করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রিয়াদ সফর করে সৌদি বাদশার সাথে বৈঠক করেছেন বিষয়টি নিয়ে। এত কিছুর পর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পর রহস্যের জট খুলেছে সৌদি সরকারের স্বীকারোক্তিতে।

কাজেই বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবকে কঠির শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার নতুন করে আবারো হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, জামাল খাসোগি নিখোঁজের ইস্যুতে সৌদি আরবের ওপর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চিন্তা করছে মার্কিন সরকার। কথাগুলো তিনি বলেছেন সৌদি আরবের স্বীকারোক্তির আগে।

ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক খাসোগির সাথে কী হয়েছে তা অস্পষ্ট। এ বিষয়ে কী করা যায় তা নির্ধারণ করবে কংগ্রেস। কংগ্রেস কী বলে তা শোনার অপেক্ষায় আমি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেন, সৌদি আরবের ওপর কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সে ব্যাপারে কংগ্রেসের কাছে তিনি সুপারিশ করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক বিবেচনায় রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সৌদি আরবের স্বীকারোক্তির পর ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় ছাড় দেয়া যায় না। ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরব আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র; কিন্তু যা ঘটেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়’। তবে তিনি আভাস দেন যে, সৌদি আরবের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তার মধ্যে শত কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিলের শর্ত থাকবে না।

ধারণা করা হচ্ছে এই ঘটনা স্পষ্ট হওয়ার পর সৌদি আরবের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান আরো কঠোর হতে পারে। তেমন আভাস পাওয়া গেছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর বক্তব্যে। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘সৌদি আরব যদি এই ঘট্নার সাথে জড়িত থাকে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে। পম্পেও বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই আমরা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাবো। তবে ঘটনা স্পষ্ট হওয়াটা আগে গুরুত্বপূর্ণ’।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস এক রিপোর্টে লিখেছে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যে খাসোগির নিখোঁজ ঘটনার সাথে জড়িত সে ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা ক্রমশই জোরালো হচ্ছে। পত্রিকাটি বলছে, তেমনটি হলে সৌদি আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করা হোয়াইট হাউজের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। রিপোর্টে বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যুবরাজের জড়িত থাকার প্রমাণ ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে।

এই ঘটনার জের ধরে মোহাম্মাদ বিন সালমানকে যুবরাজের পদ থকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। ফ্রান্সের দৈনিক লা ফিগারো বৃহস্পতিবার প্যারিসের একটি কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে। দৈনিকটি জানিয়েছে, রিয়াদ-বিরোধী সাংবাদিক জামাল খাসোগির গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে এরই মধ্যে সৌদি আরবের প্রভাবশালী এলিজেন্স কাউন্সিল গোপনে বৈঠক করেছে। ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এরই মধ্যে যুবরাজ বিন সালমান বহু প্রিন্সের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এই কাউন্সিলের বিরাগভাজন হয়েছেন।

ফরাসি পত্রিকাটি বলছে, এই কাউন্সিল এখন মোহাম্মাদ বিন সালমানের ছোট ভাই ২৮ বছর বয়সি খালিদ বিন সালমানকে উপ যুবরাজের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তাকে যুবরাজের পদে অভিষিক্ত করা হবে। খালিদ বর্তমানে আমেরিকায় সৌদি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে খাসোগি হত্যকাণ্ড নিয়ে শুরু থেকেই তৎপর রয়েছে তুরস্কের পুলিশ। তাই তুর্কি আইনেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে পারে। যদিও সৌদি যুবরাজ শুরুতে বলেছিলেন কনস্যুলেট সৌদি সার্বভৌমত্বের অধীন। এই দাবির অর্থ হচ্ছে কনস্যুলেটে যে কোন ঘটনা-দুর্ঘটনার বিচার হবে সৌদি আইনে। যদিও ঘটনার ১০ দিন পর তারা তুর্কি পুলিশকে কনস্যুলেটের ভেতর তল্লাশি চালাতে অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

তুর্কি সংবাদ মাধ্যম বলছে, কনস্যুলেটের ওপর সৌদি সার্বভৌমত্ব থাকার যুক্তি ভিয়েনা কনভেনশনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই এই কনস্যুলেট তুর্কি প্রশাসনের অধীনেই এবং বিচার হবে তুর্কি আইনে।

কাজেই বিষয়টি যে সব দিক থেকেই সৌদি আরবের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা
জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হোয়াইট হাউজ,
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল