২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যাদের ভয়ে আতংকিত ইসরাইলী সৈন্যরা!

এক ফিলিস্তিনী কিশোরকে আটকের জন্য ২৩ জন ইসরাইলী সৈন্য(!) এরপরও তার চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। - ছবি: সংগৃহীত

১৬ বছরের ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমি। গত বছর তার বাড়ির সামনে ইসরায়েলি এক সৈন্যের গালে সপাটে চড় বসিয়ে দেন। এরপর গ্রেফতার হন ইসরাইলী বাহিনীর হাতে। গ্রেফতারের পর সামরিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সে, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কাছে সে এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

অপর ১৬ বছরেরে ফিলিস্তিনি কিশোর ফাওজি মুহাম্মাদ আল-জুনাইদিকে ২৩ জন ইসরাইলি সেনারা চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিশ্বে শুধু আলোচিত নয়, তা উপস্থাপন করা হয়েছে ইসরাইলি আদালতে। এরপর ইসরাইলি পার্লামেন্টে বিল তোলা হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিধি প্রণয়নের জন্য। যদিও দেশটি ১৯৬১ সালে নাজি যুদ্ধাপরাধী এডলফ আইখম্যানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে এক বছর পরে তা কার্যকর করে আর কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেনি। এমনকি পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা আইনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে থাকলেও তা কার্যকর করা হয়নি।

এখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, ছয়টি কোয়ালিশন দলের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মত্যুদণ্ডকেই চূড়ান্ত করে বিল সংসদে উত্থাপনে একমত হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির দমনপীড়ন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি যে আরো উসকে দেবে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো। আভিগদর আরো বলেছেন, প্রস্তাবিত আইনটি খুবই পরিষ্কার এবং তা হচ্ছে যেসব সন্ত্রাসী সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।

সর্বশেষ ২০১১ সালে ইসরাইলি সেনা গিলাদ শালিতকে গাজায় পাঁচ বছর আটকের পর এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে মুক্তি দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড বিল ইসরাইলের পার্লামেন্টে পাস হলে এ ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আভিগদর এ কারণেই বলছেন, সন্ত্রাসীদের কারাগারে বসে পরিস্থিতি ভোগ করার পর তাদের মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ দিতে পারি না।

গত আগস্ট পর্যন্ত ৩৩১ জন ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর ইসরাইলি কারাগারে আটক রয়েছে বলে দেশটির সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের আটক করে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পথ পরিষ্কার করছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ না থাকলে তাদের যেটুকু অস্তিত্ব রয়েছে, তা-ও থাকবে না। এসব শিশু চোখের সামনে তাদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলতে ও স্বজনদের গুলি করে মরতে দেখে বড় হয়ে উঠেছে। খালি হাতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করলে তারা এখন সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ইসরাইলি আইনের বাতাবরণে মৃত্যুদণ্ড বরণ করবে।

কেন এসব ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে? ইসরাইলি সেনারা যখন অস্ত্র নিয়ে একজন কিশোরের মাথায় আঘাত করে, তখন কোনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান মৃদু প্রতিবাদ করেই কেন ক্ষান্ত থাকে? ইসরাইলিরা জানে শিশু-কিশোরেরা সহজেই সত্য ও মিথ্যার মধ্যে ফারাক ধরতে পারে এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক জটিলতা বা আপসকামিতা বোঝে না। এ জন্যই শিশুদের এত ভয় পায় ইসরাইলি সেনারা। এ জন্যই কি ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলের জবরদখলকৃত ফিলিস্তিনি শিশুদের বিচার করা হয় সামরিক আইনে। এবং বিশ্বের একমাত্র দেশ ইসরাইল শিশুদের বিচার করে সামরিক আইনে।

২০০০ সাল থেকে অন্তত আট হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে আটক করে বিচার করা হয়েছে এ আইনে। প্রতি বছর পাঁচ থেকে সাত শ’ শিশুকে আটক ও বিচার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ পাথর নিক্ষেপ ও প্রতিবাদ। আটকের পর অকথ্য নির্যাতন ছাড়াও তাদের টানা সময় ঘুমাতে দেয়া হয় না। অথচ কোনো ইসরাইলি শিশুর বিচার সামরিক আইনে করা হয় না। পাথর ছোড়ার জন্য তাদের বয়সের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয় ১০ থেকে ২০ বছরের জেল। এমনকি ইসরাইলি অভিভাবকদের মতো তাদের অভিভাবকেরা আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেন না।

২০১৩ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১৯৯ জন ফিলিস্তিনি শিশুকে আটক করে ইসরাইলি সেনারা। সামরিক আইনে দ্রুত সময়ে তাদের ভাগ্যে কারাদণ্ড জুটে যায় সহজেই। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ বা আদালতের কার্যক্রম চলে হিব্রু ভাষায় যা বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি শিশু বুঝে ওঠার আগেই সর্বনাশ ঘটে যায়। ২০১৩ সালে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ২৩ শতাংশ স্বীকারোক্তি যা হিব্রু ভাষায় লেখা এবং তাতে এদের স্বাক্ষর নেয়া হয়।

জবরদখলকৃত এলাকা থেকে শিশুদের ধরে ইসরাইলের কারাগারে চালান করে দেয়া হয়, যা ফোর্থ জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর ফলে তাদের অভিভাবকেরা আটক শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ বা আইনগত কোনো ব্যবস্থাই নেয়ার সুযোগ পান না।

জেনেভা কনভেনশনে বলা আছে আটক করতে হলে তাদের দিনের বেলায় তা করতে হবে। চোখ বাঁধা যাবে না। শারীরিকভাবে নির্যাতন করা যাবে। ছবিতে ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যায় একাধিক ইসরাইলি সেনারা কিশোরটিকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে এবং তার মুখ রক্তাক্ত। পশ্চিম তীর থেকে কোনো শিশুকে অন্যত্র স্থানান্তর কনভেনশনে নিষিদ্ধ হলেও বেশির ভাগ শিশুর হদিস মেলে না।


আরো সংবাদ



premium cement