২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাসোগির কারণে যেভাবে ফেঁসে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

খাসোগির কারণে যেভাবে ফেঁসে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ। - সংগৃহীত

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা থাকার ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দাদের সন্দেহ প্রবল হয়ে উঠেছে। এ সন্দেহ ক্রমাগত তাদের বিশ্বাসে রূপ নিচ্ছে। সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে যাওয়া সৌদি স্কোয়াডের ১৫ সদস্যের ছবি ও তুরস্কের কাছে থাকা অডিও রেকর্ডিং এর ভিত্তিতে মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস জোরালো হয়ে উঠেছে। তারা মানতে শুরু করেছেন যে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে এবং সৌদি যুবরাজ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জমা দেওয়ার জন্য গোয়েন্দারা এ সংক্রান্ত একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করছেন।

জামাল খাসোগি গত ২ অক্টোবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর বের হননি। সৌদি আরব অবশ্য বলছে, খাসোগি কনস্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে এর প্রমাণ চাওয়া হলে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ। তুরস্কের দাবি, তাদের তদন্তকারীদের হাতে নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। ২ অক্টোবর তুরস্কে আসা ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার।

শুরু থেকেই সৌদি আরব এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, কনস্যুলেট থেকে সেদিন বের হয়ে গেছেন খাসোগি। অবশ্য, খাসোগির কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। ফাঁস হওয়া বিভিন্ন আলামত ও তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খাশোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা থাকার দাবি করা হয়েছে।

এরমধ্যেই বুধবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মার্কিন গোয়েন্দারাও সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ফাঁস হওয়া তথ্য, ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে যাওয়া ১৫ সৌদি নাগরিকের নাম ও ছবি এবং তুরস্কের কাছে থাকা অডিও রেকর্ডিং এর ভিত্তিতে মার্কিন গোয়েন্দাদের সন্দেহকে প্রবল করতে ভূমিকা রেখেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, খাসোগির ঘটনায় সৌদি যুবরাজের জড়িত থাকার ব্যাপারে সরাসরি কোনও প্রমাণ গোয়েন্দারা পাননি। সৌদি যুবরাজই খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিনা কিংবা তাকে আটক করে সৌদি আরবে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিলেন কিনা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত প্রমাণ গোয়েন্দাদের হাতে নেই।

এর আগে তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ওই ১৫ সদস্যবিশিষ্ট সৌদি স্কোয়াডের মধ্যে একজনকে সৌদি যুবরাজের দেহরক্ষী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেব নামের ওই দেহরক্ষী একসময় লন্ডনস্থ সৌদি দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুর্কি কর্তৃপক্ষ তাকে এখন খুঁজছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজের মাদ্রিদ, প্যারিস ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে তোলা ছবিতে মুতরেবকে পাহারারত অবস্থায় দেখা গেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুতরেবসহ চার সন্দেহভাজনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নিরাপত্তাজনিত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট স্কোয়াডের অন্তত ৯ জন সৌদি সিকিউরিটি সার্ভিস, সেনাবাহিনী কিংবা অন্য সরকারি মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে। চেহারা শনাক্তকরণ সফটওয়্যার, সৌদি সেলফোন নম্বরের ডাটাবেজ, সৌদি সরকারের ফাঁস হওয়া নথি, প্রত্যক্ষদর্শী ও মিডিয়ার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার কথা জানায় সংবাদমাধ্যমটি।

শুরু থেকেই খাসোগিকে হত্যার একটি অডিও প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করে আসছে তুরস্ক। ওই অডিও রেকর্ডিং পুরোপুরি শুনেছেন এমন এক তুর্কি সূত্র মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আইয়ের কাছে দাবি করেন, ২ অক্টোবর মাত্র সাত মিনিটে পুরো হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে।

ওই সূত্র দাবি করেছে, খাশোগিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেনারেল সিকিউরিটি বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণ সংক্রান্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগিসহ ১৫ জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওইদিন সকালে আঙ্কারা পৌঁছান। দূতাবাসের কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে খাসোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় উপরে প্রচণ্ড চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, তাকে চেতনানাশক কিছু দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র দাবি করেছে, খাসোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও আলামত দেখা যায়নি। তাকে হত্যা করতেই স্কোয়াডটি এসেছিল। স্টাডিরুমের টেবিলে ওপর শুইয়ে খাসোগিকে জীবিত অবস্থায় কেটে টুকরো টুকরো করেন তুবাইগি। পুরো হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট। তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া এ সময় তিনি তার সহকর্মীদেরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। ওই রেকর্ডে তুবাইগিকে বলতে শোনা গেছে, ‘যখন আমি এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’
মিডল ইস্ট আই জানায়, খাসোগিকে হত্যার পর ওইদিন সৌদি কনসাল জেনারেলের বাড়িতে নৈশ ভোজ করেছে সন্দেহভাজনরা।


আরো সংবাদ



premium cement