২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইসরাইলকে রুখতে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ সংগ্রামীদের পাল্টা হুমকি

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা। - ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো গাজায় ইসরাইলের সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছে। বুধবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিরোধকামীরা সব সময় ফিলিস্তিনি জাতিকে রক্ষায় সোচ্চার রয়েছে এবং তাদের অস্ত্র শত্রুদের দিকে তাক করা আছে।

নিজ ভিটেমাটিতে ফেরার দাবিতে চলমান গণআন্দোলনের প্রতি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

নিজ ভিটেমাটিতে ফেরার আন্দোলন বন্ধ না হলে গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালানো হবে বলে ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী হুমকি দেওয়ার পর প্রতিরোধ সংগঠনগুলো এ প্রতিক্রিয়া জানালো।

গত ৩০ মার্চ থেকে নিজেদের ভিটেমাটিতে ফেরার দাবিতে গণবিক্ষোভ শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা এবং তখন থেকে প্রতি শুক্রবার গাজার অধিবাসীরা এই বিক্ষোভ করে আসছেন।

ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত এ ধারাবাহিক বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিলেন বিক্ষোভ শুরুর দিন ৩০ মার্চ।

 

আরো পড়ুন: ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা
আলজাজিরা, ১০ আগস্ট ২০১৮, ১২:০৪


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বৃহস্পতিবার ইসরাইল অন্তত ১৪০ দফায় বিমান হামলা করেছে। অন্য দিকে গাজা থেকে ইসরাইলে হামাস ১৫০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন অবরুদ্ধ গাজায় তেল আবিবের এই বর্বরতার কারণে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

ইসরাইল জানায়, তারা গাজা উপত্যকায় হামাসের ১৪০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। আর গাজা থেকে ১৫০টির বেশি রকেট ছোঁড়া হয়েছে। তবে এসব রকেটের মধ্যে ২৫টিকে তারা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম দিয়ে ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে। এসব রকেট হামলায় কয়েকজন ইসরাইলি আহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে। ইসরাইলের দাবি, গাজা থেকে দেড় শতাধিক রকেট ছোঁড়ার পর তারা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। 


এদিকে হামাস এই হামলার কথা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, মঙ্গলবার তাদের দুই যোদ্ধা ইসরাইলি ট্যাঙ্কের গোলায় শহিদ হওয়ার পর এর প্রতিশোধ নিতে তারা এ হামলা চালিয়েছে। হামাস বলছে, ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল এবং এখন তা পূর্ণ হয়েছে।  স্থানীয় সময় বুধবার রাত থেকে চালানো এসব বিমান হামলায় এক অন্ত:সত্ত্বা ফিলিস্তিনি নারী ও তার দেড় বছর বয়সী সন্তানসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস ও ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরাইলকে থামানোর জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি বীর কন্যা তামিমি 

দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবশেষে বিজয়ী হয়েছেন ফিলিস্তিনি বীর কন্যা আহেদ আল-তামিমি। নতুন প্রজন্মের এক বীরপ্রতীক হিসেবে ফিলিস্তিনিদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ানো তামিমি আট মাসের বন্দিজীবন শেষে ইসরাইলের কারগার থেকে ২৯ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা ১৭ বছর বয়সী তামিমির মুক্তির সংবাদে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। নিজের গ্রামে ফিরে আসার পর সবার আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় সাহসী ও প্রতিবাদী তামিমিও চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি; তাকে কাঁদতে দেখা গেছে। অথচ এই ছোট মেয়েটিই নিরস্ত্র হয়েও অস্ত্রের মুখোমুখি হয়েছে, সাধারণ শিশু হয়েও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে এবং সাহসিকতা ও বীরত্বের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। 

তামিমি মাসহ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েই সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তামিমির বাবা বলেছেন, ‘তামিমির মুক্তি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আমরা তাকে অনেক বেশি মিস করেছি। আমি অত্যন্ত ভয়ে ছিলাম, কারণ ইসরাইলিরা আমাদের জীবনের জন্য মায়া দেখায় না।’ তামিমি ও তার মাকে ইসরাইলি সেনারা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আটক করেছিল। তামিমিরি নিকটাত্মীয় ২১ বছর বয়সী ইজ আল-দীন তামিমি ইসরাইলের সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন, ১৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইসরাইলের হামলায় আহত হয়েছেন। জেল-জুলুম-নির্যাতন তার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে, আরো বেশি প্রতিবাদী ও সাহসী বানিয়েছে। স্বজনরা জেলখানায় তামিমির সাথে ইসরাইলিরা কতটা খারাপ ব্যবহার করবে কিংবা কতটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তামিমির হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এখন তামিমির স্বজনরা আশা করছেন- তামিমির মাধ্যমেই বিশ্ববাসী জানতে পারবে ইসরাইলি কারাগারের প্রকৃত চিত্র, নারী বন্দীদের সাথে তাদের ব্যবহার। 

ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগ্রামের আইকন প্রতিবাদী তামিমিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। ‘রেডিয়েন্স অব রেসিসটেন্স’ নামের চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালে নির্মিত। এখানে আহেদ আল-তামিমির ১৪ বছর বয়সের গল্প বলা হয়েছে। তখন তিনি তার ৯ বছর বয়সী বান্ধবী জেনা আজাদকে নিয়ে কাজ করতেন। এই দুইজন ফিলিস্তিনির কাছে কনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবেও পরিচিত। এক ঘণ্টার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন, আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা জেসি রবার্ট। এখানে দুইজন তরুণ প্রতিবাদকারীর চোখ দিয়ে ফিলিস্তিনি-ইসরাইল দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটির বর্ণনায় লেখা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কিশোররা প্রতিদিন কিভাবে তাদের জীবন অতিবাহিত করছে এবং দেশটির নতুন প্রজন্ম কিভাবে নির্যাতনের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। 

অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের দুই হানাদার সেনাকে চড় ও লাথি দেয়ার ঘটনায় তাকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল। থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলি সেনারা মা নারীমনসহ আহেদ ও তার ২১ বছর বয়সী চাচাতো বোন নূর নাজি আল তামিমিকে গ্রেফতার করেছিল। আহেদের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ, মোবাইল ও বেশ কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী জব্দ করেছিল। অভিযানের সময় তামিমির পরিবারের লোকজনকে সেনারা মারধর করেছিল। তারপরও দমে যাননি তামিমি, তামিমির বাবা বাসেম আল তামিমি। তামিমির মুক্তির মধ্য দিয়ে নবী সালেহ তার কন্যাকে ফিরে পেলেন, বাসেম ফিরে পেলেন স্ত্রী নরিমন ও মেয়ে আহেদকে।

ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলের কারাগারে আটক রয়েছেন। যাদের মধ্যে সাড়ে তিন শ’র বেশি শিশু। বিচারের সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ১৭ বছরের এ সাহসী কিশোরী বলেছিল, ‘আমিই হানাদার সেনাদের চড়িয়েছি, লাথি দিয়েছি। অবৈধ দখলদারদের অধীনে কোনো ন্যায়বিচার হতে পারে না। একটা অবৈধ আদালতে আমাদের বিচার চলছে।’ ইসরাইলি আইনজীবী লাস্কি আইনি প্রক্রিয়াকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে জানিয়েছিলেন, আহেদের মতো অন্য ফিলিস্তিনি তরুণদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ থেকে দূরে রাখতেই তাকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে। 

গত মার্চে দেশটির সামরিক আদালত তাকে আট মাসের সাজা দিয়েছিলেন। আহেদের বাবা বলেছিলেন, তার মেয়ে ১৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মুক্তির দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। বিশেষ মূল্যায়নে ইসরাইলি কারা কর্তৃপ কারো কারা মেয়াদ কমিয়ে আনতে পারেন। কারাগারে আহেদ পড়াশোনা করে সময় কাটায় বলে জানিয়েছিলেন তার বাবা। তিনি বলেছিলেন, তামিমিকে আট মাসের কারাদণ্ড প্রদান ও ১৪০০ ডলার জরিমানা করা পুরোপুরি অবিচার। ফিলিস্তিনিদের দমন করতেই এই সাজানো বিচারের আয়োজন করা হয়েছে। তার মেয়ে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়েছে এ জন্য যে, তাকে তিন বছর কারাদণ্ড দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল। 

এত আলোচিত এ ঘটনাটি হচ্ছে কোঁকড়ানো ও সোনালি চুলের কিশোরী আহেদ তামিমি তাদের বাড়ির প্রবেশপথের কাছে দাঁড়ানো দুই ইসরাইলি সেনার দিকে হেঁটে এগিয়ে যান। সেনাদের কাছাকাছি গিয়ে নিজেদের বাড়ির আঙিনা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু ওই দুই সেনা তার কথায় কোনো কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর ওই দুই সেনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু সেনারা কোনো তোয়াক্কা না করায় এক সেনার গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেন তিনি। এ দৃশ্য কেউ একজন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওটি। এ ভিডিওকে ঘিরে ফিলিস্তিনি কিশোরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে উসকানি দেয় ইহুদিবাদী সংবাদমাধ্যমগুলো।

এটা সত্য যে, একজন আহেদের পক্ষে গোটা পৃথিবী বদলে দেয়া সম্ভব নয়। তবে আহেদের প্রজন্ম এবং পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিবাদী হওয়ার প্রয়োজন হবে। অবিচার হবে, জুলুম হবে, নারীদের ধর্ষণ করা হবে, শিশুদের হত্যা করা হবে অথচ প্রতিবাদ হবে না; এটাতো হতে পারে না। আহেদ শিখিয়েছে- লড়াই হবে শান্তির জন্য, মুক্তির জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। ফিলিস্তিনিরা ভাবে আগামী প্রজন্ম হবে আহেদের মতো সাহসী-দৃঢ়চেতা।

আহেদ হচ্ছে ভবিষ্যতের আশা, তার হিম্মত ও স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আহেদ হবে ফিলিস্তিনিদের অনুপ্রেরণার অসাধারণ উৎস, মুসলমানরা তাকে স্মরণ করবে যুগের পর যুগ। শুধু অশ্রুপাত ও প্রার্থনায় নয়, মুক্তির লড়াইয়ে নেয়া কঠিন পদক্ষেপেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আহেদ আল-তামিমি থাকবে মুক্তিকামীদের হৃদয়ে আজ ও আগামীতে। তার মতো প্রতিবাদীরাই বদলে দেবে সমাজ, পরিবর্তন আনবে দেশের, এগিয়ে নেবে জাতিকে এবং নতুন পৃথিবী গড়ায় নেতৃত্ব দেবে।


আরো সংবাদ



premium cement
লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির

সকল