২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সৌদি বাদশাহকে ট্রাম্প : সমর্থনা না দিলে দুই সপ্তাহও টিকতে পারবেন না

সৌদি আরব
২০১৭ সালে রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলআজিজ আল সৌদ। - ছবি : রয়টার্স

এবার ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলআজিজ আল সৌদকে সতর্ক করেছেন যে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় ‘দুই সপ্তাহও টিকতে পারবেন না’।

মঙ্গলবার মিসিসিপির সাউথহেভেনে এক সমাবেশে ট্রাম্প এ কথা বলেন বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

‘আমরা সৌদি আরবকে রক্ষা করি। আপনারা বলবেন তারা ধনী। এবং আমি ওই বাদশাহকে ভালোবাসি, বাদশাহ সালমান। কিন্তু আমি তাকে বলেছি- বাদশা, আমরা আপনাকে রক্ষা করছি, আমাদের ছাড়া আপনি সেখানে (ক্ষমতায়) হয়তো দুই সপ্তাহও টিকতে পারবেন না, আপনার সামরিক বাহিনীর জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে’, সমাবেশে বলেন ট্রাম্প।

সৌদি আরবের শাসনকর্তার সঙ্গে কবে এ আলোচনা হয়েছিল, তা বলেননি ট্রাম্প। তার ওই মন্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্জিত’ বলেছেন।

ট্রাম্প চাঁচাছোলা এসব কথাবার্তা বললেও তার প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঠেকাতে সৌদি আরব প্রতিরক্ষা প্রাচীর হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করে ট্রাম্প প্রশাসন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গত বছর নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে প্রথমে সৌদি আরবেই গিয়েছিলেন ট্রাম্প।

সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ’র খবরে প্রকাশ, ট্রাম্প গত শনিবার সৌদি বাদশাহর সাথে কথা বলেছেন। আলোচনায় তেল বাজারের স্থিতি বজায় রাখার জন্য তেলের সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়।

সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ এবং তেল রফতানিকারকদের সংগঠন ওপেকের ডি ফ্যাক্টো লিডার। ট্রাম্প তেলের উচ্চমূল্যের জন্য তাদের সমালোচনা করেছেন।

গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে ট্রাম্প বলেছিলেন, ওপেক সদস্যরা বিশ্বের অন্যদের চেয়ে ভালো আছেন।

‘আমরা এদের অনেকের উপরই কোনোকিছুর জন্য নির্ভরশীল নই, কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে তেলের উচ্চমূল্য গ্রহণ করে সুবিধা আদায় করে নেয়। আমরা তাদের বলি তেলের দাম বৃদ্ধি থামাতে, তারা যেন দাম কম নেয়’, বলেন ট্রাম্প।

আরো পড়ুন :
সবাইকে খেপাচ্ছেন ট্রাম্প
আসিফ হাসান, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
কাকে বাদ রাখছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? বিশ্বস্ত সহকর্মী থেকে ঘনিষ্ঠ মিত্র- সবাইকে চটিয়ে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলা হয়ে থাকে, মৃত্যু শত্রু-মিত্র সবাইকে এক সারিতে এনে দেয়। কিন্তু ম্যাককেইনের মৃত্যুতে বরং বিভাজন আরেক দফা বেড়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রে। পরিণতিতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি যেমন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন, একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও মিত্র হারাচ্ছে। এর শেষ কবে বা কিভাবে হবে কেউ কি জানে?

একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর জন ম্যাককেইনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ডেমোক্র্যাট দলীয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রিপাবলিকান দলীয় জর্জ ডব্লিউ বুশ এতে হাজির না হওয়ায় ট্রাম্পকে তিরস্কার করেন।

শনিবার ম্যাককেইনকে চিরবিদায় জানাতে গিয়ে তার প্রশংসা করেন সাবেক এ দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সিনেটর ম্যাককেইন ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২৫ আগস্ট মারা যান। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে দেশটির প্রভাবশালী রাজনীতিবিদেরা উপস্থিত ছিলেন; কিন্তু শেষকৃত্যে উপস্থিত না থাকায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেন সাবেক এ দুই প্রেসিডেন্টসহ ম্যাককেইনের মেয়ে মেগান ম্যাককেইন।

তার একান্ত ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। তাকে ইমপিচমেন্ট করা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছেন ট্রাম্প। এবার মুক্ত বিশ্বের ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত দেশটিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।

ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তারা যদি কাজের ধারা পরিবর্তন না করে তাহলে আমি ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন থেকে নাম প্রত্যাহার করব।

বিশ্ব-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম নির্ধারণ করা ও সেসব নিয়মের বিষয় বিভিন্ন দেশের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সমাধান করার উদ্দেশ্যেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গঠন করা হয়েছিল। তবে ট্রাম্পের দাবি-বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহারের হুমকির পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য নীতি আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মুক্তবাজার নীতির মধ্যকার আদর্শিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো।

যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হস্তক্ষেপ করছে এমন অভিযোগও তুলেছেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজার। অপর দিকে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমাদের ছাড়া আর সবাইকে সুবিধা দেয়ার জন্য গঠন করা হয়েছিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। সংস্থার প্রায় সব আইনি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। গত কয়েক মাসে অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্যবিষয়ক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

তবে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধ সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনৈতিক শক্তি বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদানি হওয়া অনেক পণ্যের ওপর শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প।

মার্কিন সিদ্ধান্তের জবাবে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ধার্য করা শুল্কের সমান অর্থমূল্যের শুল্ক চীনও আরোপ করেছে তাদের দেশে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায়।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম ভঙ্গ করছে, এমন আশঙ্কা করছেন তারা। বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য সংস্থার যে বিভাগটি নিয়োজিত আছে, ওই বিভাগের নতুন বিচারক নির্বাচন স্থগিত করে রেখেছে ওয়াশিংটন।

এ অবস্থায় সংস্থার সদস্যদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যত কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না সংস্থা।

প্রথম দফায় চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর জুলাইয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে প্রাথমিক অভিযোগ করে চীন।

ভারতের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে
যে ভারত সাম্প্রতিক কালে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের, সেই ভারত এবার মার্কিন কোপানলে পড়তে যাচ্ছে ট্রাম্পের কারণে। রাশিয়ার কাছে থেকে ভারত যদি সামরিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয় করে তাহলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে আসতে পারে দেশটি। পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা ভারতের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, রুশ অস্ত্র কিনলে ভারত যে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে না তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। বুধবার এক প্রশ্নের জবাবে পেন্টাগনের এশিয়া অঞ্চলবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা র‌্যান্ডাল শ্রিভার বলেন, ভারতের সাথে সু-সম্পর্ক রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যদি অস্ত্র ক্রয় করে তাহলে এই সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে। ক্রিমিয়ার ইউক্রেন উপদ্বীপ দখলে নেয়ার জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার সাথে যদি কোনো দেশ প্রতিরক্ষা অথবা গোয়েন্দা কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সেই দেশও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে।

শ্রিভার বলেন, আমি এখানে বসে আপনাকে বলতে পারছি না যে, ভারত এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখবেন যে রাশিয়ার কাছে থেকে ভারত বৃহৎ একটি প্ল্যাটফর্ম এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করছে, তখনই এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ দিকে, ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান রয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের। তবে শ্রিভার বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের হাতে রয়েছে; তবে তিনি চাইলেই এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরোপিত হবে না।

দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ কেনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে ভারত। রাশিয়ার কাছে থেকে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে এ চুক্তি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন চৌগাছায় বাসচাপায় হেলপার নিহত ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

সকল