২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিশু হত্যার ভিডিওতে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধ স্পষ্ট: ফিলিস্তিন

শিশু হত্যার ভিডিওতে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধ স্পষ্ট: ফিলিস্তিন - সংগৃহীত

ইসরাইল ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ করছে বলে ঘোষণা করেছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত শুক্রবার ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভের সময় শহীদ ১২ বছরের শিশু শাদি আব্দুলয়াল'র প্রতি ইঙ্গিত করে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- শিশুটির শাহাদাতের মুহূর্তের ভিডিও থেকে এটা স্পষ্ট ইসরাইল যা করছে তা যুদ্ধাপরাধ। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা উচিত নয় বলে তাতে মন্তব্য করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ মোকাবেলায় সবার নজিরবিহীন ও কঠোর অবস্থান নেয়া উচিত। যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি দায়ী। ফিলিস্তিনের সরকার এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ করবে।

নিজের ভিটেমাটি ফিরে পাওয়ার দাবিতে গত ৩০ মার্চ থেকে গাজায় বিক্ষোভ করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু গুলি চালিয়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে ইসরাইলি সেনারা। গত কয়েক মাসের বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে এ পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। শহীদদের ২৮ জনই শিশু ও কিশোর। 

এসব হত্যাকাণ্ডকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের নেতাদের বিচারের দাবি উঠলেও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিন : ফিলিস্তিন
এএফপি, ২৩ মে ২০১৮

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসিকে ইসরাইলের বিচার বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বলেছেন, আমাদের কাছে অপরাধের বিপুল সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। কাজেই আর দেরি না করে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ফাতু বেনসৌদার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে ফিলিস্তিনের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন রিয়াদ আল মালিকি। তিনি ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর যুদ্ধাপরাধ ও বর্ণবাদী আচরণের সব অভিযোগের দ্রুত তদন্ত করতে আইসিসির কাছে দাবি জানান।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মালিকি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের দায়মুক্তিতে সম্পাদিত অপরাধের শিকারে পরিণত হয়েছেন। আমাদের কাছে অপরাধের বিপুল সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। কাজেই যারা দায়ী, আর দেরি না করে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

২০১৫ সালে আইসিসি গাজা যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলি ভূখণ্ডে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করেছে। এমনকি এসব অঞ্চল পরিদর্শন সত্ত্বেও ট্রাইব্যুনাল-পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এগোয়নি। এর পর তারা একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নেমেছে। যেখানে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করা হবে।

গত ১৪ মে ইসরাইলি সেনারা গাজা উপত্যকায় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে ৬০ জনকে হত্যা করেছে। ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভে ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ফিলিস্তিনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এটা এক ধরনের হতাশাজনক পদক্ষেপ। এসব অভিযোগের কোনো আইনগত বৈধতা নেই।

২০১৮ সালের ১৫ই মে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পালন করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা মাতৃভূমি হারানোর বার্ষিকি হিসেবে পালন করে থাকে এই দিনটিকে। স্থানীয়ভাবে ফিলিস্তিনিরা এই দিনটিকে নাকবা বা মহাবিপর্যয়ের দিবস হিসেবে পালন করে। ইতিহাস বলে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পরই ১৯৪৮ সালের এই দিনে প্রায় ৮ লক্ষ ফিলিস্তিনি ঘরছাড়া হয়। 

ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের অবৈধ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য সমবেত হয়। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ইসরাইল সেনারা ভয়াবহ আগ্রাসন চালায়। ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলিতে কমপক্ষে ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আড়াই হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হন। 

যার নুন খাচ্ছি, তার গুনতো গাইতেই হবে। ইসরাইলের ৭ খুন মাফ হওয়ার পেছনের সমীকরণটি এমনই। ইসরাইলকে খুশি রাখতে গিয়ে তাই ফিলিস্তিনি গণহত্যার বিচারে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। এভাবেই ক্ষমতার রাজনীতির কাছে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে মানবতা।

ইসরাইলের দখলকৃত দক্ষিণ জেরুসালেমের আল-কুদস এলাকায় চারটি নতুন বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে তেলআবিব।  ওই স্থাপনাগুলোতে ২২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে বলে রোববার ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। বসতি'র নির্মাণকাজ আগামী বছর নাগাদ শেষ হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি সীমান্তে দখলদার ইসরাইল সরকারের নতুন করে বসতি নির্মাণ বন্ধে জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এর আগে, বেথেলহামের দক্ষিণাঞ্চলেও বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ বাড়ি নির্মাণ করে অবৈধ দখলদাররা।


আরো সংবাদ



premium cement