ফিলিস্তিনিদের ঘরে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরাইল
- মিডল ইস্ট মনিটর ও আলজাজিরা
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৯
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে বেদুইনদের গ্রাম খান আল আহমার ঘিরে ফেলে চারদিক থেকে বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গ্রামে ঢোকার সব রাস্তা। গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঢুকে আটক করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের।
গ্রামটিতে ৪০ পরিবারে অন্তত ১৮০ জন লোক বাস করে আসছে। এখন তাদের বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। সেখানে অবৈধ বসতি গড়তে চায় ইসরাইল। দেশটির সুপ্রিমকোর্ট সেনাবাহিনীকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়ার পর শুক্রবার থেকে গ্রাম অবরোধ করে রাখা হয়েছে।
এদিকে তারকাঁটা ঘেরা গাজা উপত্যকায় তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ১১ বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে। ইসরাইলি দখলদারীর বিরুদ্ধে শুক্রবার নিয়মিত সাপ্তাহিক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২৪৮ জন।
‘অনুমতি ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে’ দাবি করে গত সপ্তাহে গ্রামটি খালি করে ফেলার নির্দেশ দেন ইসরাইলের সুপ্রিমকোর্ট। গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করা হলে পশ্চিম তীর দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়বে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা জানিয়ে আসছে।
গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, গ্রামের চারপাশজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামের ঢোকার রাস্তাগুলোর মুখে বসানো হয়েছে সামরিক বুলডোজার। ওই এলাকায় সাংবাদিক, বিক্ষোভকারী ও এমনকি অধিকার কর্মীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে। বাধা সত্ত্বেও বেশ কয়েকজন সেনা অবরোধ ও রাস্তা খুলে ফেলার চেষ্টা চালায়।
তাদেরকে জোর করে সরিয়ে দেয় সেনারা। বুলডোজার দিয়ে গ্রামের প্রবেশ পথ বন্ধ করে রেখে দিয়ে সেনারা গ্রামটি ধ্বংস শুরু করেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগ করায় গ্রামটির অনেক বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সেখান থেকে তিন ফিলিস্তিনি ও এক বিদেশি অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন ফিলিস্তিনি নাগরিক ইব্রাহিম হুসেইন আবু দাহুক, সুলাইমান ইদ হাতালিন, ওমন আবদুল্লাহ ও ফরাসি নাগরিক ফ্রাঙ্ক রোমানো।
ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করার নয়া মিশনে ইসরাইল
এএফপি, ০৫ জুলাই ২০১৮
দখলকৃত ফিলিস্তিনের একটি বেদুইন গ্রাম নিশ্চিহ্ন করতে ইসরাইল উদ্যোগ নিয়েছে বলে দাবি করেছে সেখানকার বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি ইসরাইল পশ্চিম তীরের কৌশগলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খান আল-আহমার গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সেখানকার ১৭৩জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার গ্রামটিতে যাওয়ার প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। বুধবার সেখানে একটি বুলডোজারসহ ভারী যন্ত্রপাতির সমাবেশ ঘটিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। আশঙ্কা করা হচ্ছে বন্ধ করে দেয়া রাস্তাটি ধংস করে ফেলা হবে।
খান আল আহমার গ্রামটি পূর্ব জেরুসালেমে কয়েকটি ইসরাইলি স্থাপনার কাছে অবস্থিত। ওই গ্রামের মধ্য দিয়ে মৃত সাগর পর্যন্ত একটি রাস্তা চলে গেছে। অধিকারকর্মীদের আশঙ্কা এখানে ইসরাইলি স্থাপনা নির্মাণ পশ্চিম তীরকে কার্যত দুই ভাগে ভাগ করে ফেলবে।
ইসরাইলি মানবাধিকার গ্রুপ বি’টেসেলেম এর মুখপাত্র অমিত গিলাটজ বলেছেন, আজ তারা ধংস করে দেওয়ার মতো অবকাঠামোগত কাজ আর বাসিন্দাদের জোর করে স্থানান্তর করার কাজ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই গ্রামটি আর এর স্কুলটি অবৈধভাবে বানানো হয়েছে। এটি ধংস করে ফেলার বিরুদ্ধে করা আপিল গত মে মাসে খারিজ করে দিয়েছে ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্ট।
তবে অধিকার কর্মীরা বলছেন, গ্রামের বাসিন্দাদের যাওয়ার মতো বিকল্প জায়গড়া নেই। ইসরাইলের অনুমোদন ছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অবকাঠামো নির্মাণ এক প্রকার অসম্ভব।
তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প জায়গার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বুধবারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্ট গত মে মাসে গ্রামটি পরিদর্শন করে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেন যে, জোর করে যে কোনো স্থানচ্যুতি জাতিসঙ্ঘের জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন।